ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

লাগামহীন বাইকারদের তাণ্ডব

প্রকাশিত: ২০:২৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লাগামহীন বাইকারদের তাণ্ডব

সময়ের পরিক্রমায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলেছে মানুষের জীবনযাত্রা। দূরত্বের বিচারে দ্রুত এগিয়ে যেতে উন্নত প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় সময় হাতের নাগালে আনতে বদ্ধপরিকর বিভিন্ন স্বনামধন্য কোম্পানি নিত্যনতুন  মোটরসাইকেলের মডেল বাজারে নিয়ে আসছে; যার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাজে কিংবা ব্যবসা ও অফিসে যাতায়াতের সুবিধায় মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষে মোটরসাইকেল। যদিওবা অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালক বিনা কারণেই এটির ব্যবহার করেন; যার সিংহভাগ কিশোর ও তরুণ। প্রবল উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তরুণেরা ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট ছাড়াই সড়কে মোটরসাইকেলে চলাচল করে। কিভাবে রাস্তায় মোটরসাইকেল চালাতে হয়, কতটুকু স্পিডলিমিট, ট্রাফিক আইনের ব্যবহার কিংবা সংকেত অনুসারে কিভাবে এগুতে হয় তা কিশোর, তরুণরা তো আছেই অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষজনেরা পর্যন্ত জানেন না? যা হতাশাজনক। যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল চালাতে দেখা যায় কিশোরদের আইনের তোয়াক্কা তাঁরা করে না। যততত্র রাস্তায়, ফুটপাতে নিয়ম অমান্য করে চালানোর দরুন প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা। ট্রাফিক নিয়মানুসারে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়ের হেলমেট পড়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সচরাচর এর ব্যত্যয় ঘটে। সাধারণ স্পিডলিমিট ৫০-৭০ কি.মি. হলেও অতিরিক্ত স্পিডে চালক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ট্রাফিক পুলিশের সিগনাল ভঙ্গ করে দ্রুত চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে এবং এসব কর্মকাণ্ড রোধে কার্যকর কোনো ভূমিকাও তেমন একটা দেখা যায় না। ট্রাফিক পুলিশ কখনো নিয়মভঙ্গকারী মোটরসাইকেল চালককে ধরলেও কার্যকর অর্থে ট্রাফিক আইন অনুসারে যে শাস্তি কিংবা মামলা দেওয়া প্রয়োজন তা না করে নিয়মবহির্ভূত অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেন; যা নিয়মভঙ্গকারী চালকসহ অন্যদের আরও ইন্ধন জোগায় যেন। দেশে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই। এজন্য অনেক চালক নিয়মের তোয়াক্কা না করে বেপারোয়া মোটরসাইকেল চালাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে অবাধে নিয়মভঙ্গ করে মোটরসাইকেল চলাচল যেন সাধারণ ঘটনা। তাছাড়া মোটরসাইকেলের অবাধ বিচরণ ও অতিমাত্রায় হর্ন বাজানোর কারণে শব্দদূষণ ঘটছে। এতে যেমন সাধারণ মানুষের শ্রবণশক্তি কমচ্ছে, ঠিক তেমনি অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশের বায়ুদূষণ ঘটছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের দাবি, গত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার বেড়েছে ১৬ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় নিহতের হার বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। এই জন্য অনেকাংশে দায়ী করা যায় মোটরসাইকেল চালকের অসচেতনতা, অজ্ঞতা, একগুঁয়েমি মনোভাব, ট্রাফিক আইনের দুর্বলতা ও প্রয়োগের সংকীর্ণতা। যদি ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান ও কার্যকর প্রয়োগের ব্যবস্থা করা যায় এবং জনসাধারণ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, তবে মোটরসাইকেলের অবাধ বিচরণ কমানো সম্ভব। তাছাড়া সঠিক দিকনির্দেশনা ও চালকের প্রশিক্ষণসহ, লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা থাকে, তবে দুর্ঘটনা হ্রাস সম্ভব।

ইকরাম আকাশ
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম

×