ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

সিটি টার্মিনাল

প্রকাশিত: ২০:১২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সিটি টার্মিনাল

রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দেশের মোট জনসংখ্যার এক দশমাংশের বেশি লোকের বসবাস। উন্নত শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সব বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু মেগাসিটি ঢাকায় প্রয়োজনে ছুটে আসতে হয় মানুষকে। সীমিত পরিসীমায় জনসংখ্যার আধিক্যে ন্যুব্জপ্রাণ এই মায়াবী শহর। ঢাকার সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির অন্যতম কারণ যত্রতত্র নগর পরিবহন ও  আন্তঃজেলা গাড়ি পার্কিং। রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, উত্তরা, এয়ারপোর্ট, কুড়িল, বাড্ডা, মালিবাগ, রাজারবাগ, আরামবাগ, টিটিপাড়া, সায়েদাবাদ জনপথ মোড়, যাত্রাবাড়ী, দোলাইপাড় ও পোস্তগোলা এলাকার একাধিক স্থানে ব্যস্ত সড়কের পাশে রয়েছে অসংখ্য বাস কাউন্টার। দোকান ও বাসাবাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়ে যাত্রীসেবা দেয় কাউন্টারগুলো। দূরপাল্লার বাসগুলো এখান থেকে ছেড়ে যায়। এসব অবৈধ কাউন্টারের কারণে  টার্মিনালে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা।
মহানগরীতে নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী ছাউনি না থাকায় যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করায় সড়কে তৈরি হয় যানজট। কোথাও বাস স্টপেজ থাকলেও তা পরিত্যক্ত। অথচ যাত্রী ছাউনিগুলো তৈরি করতে রাষ্ট্রের  ব্যয় হয়েছে হাজার কোটি টাকায়। ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে বাস্তবিক কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই অবস্থা হয়েছে। কোথায় বাস থামবে, কোথায় যাত্রী ছাউনি তৈরি হবে, এর কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। মেয়রদ্বয় শুধু বাস স্টপেজ তৈরি করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। নগরীর পরিবহন প্রকল্পে নানাভাবে জনগণের টাকা অপচয় করা হয়েছে। এর জন্য প্রকল্প কর্মকর্তা ও মেয়রদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয়নি কখনো। গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো ধরনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়াই এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি পয়সার মূল্য অনেক, এমনটি ভাবতে হবে নীতিনির্ধারকদের। ঢাকার পুরো গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সব শাখার সমšি¦ত উদ্যোগ।    
 গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে সড়ক পরিবহন, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ডিএমপি কমিশনার, ডিটিসিএ এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন হয়। তাদের ক্ষমতার শেষ দুই বছরে কোনো মিটিং হয়নি। বিধায় সিটি বাস টার্মিনালও বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের বাস চলাচলের জন্য রাজধানীর চারটি স্থানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল রয়েছে- গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। এছাড়া কল্যাণপুর, গাবতলী ও কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি ডিপোর মাধ্যমে আন্তঃজেলা এবং আন্তর্জাতিক রুটে বাস চলাচল করে।
বিআরটিএর সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্ন বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা ও দূরাপাল্লার বাসের জন্য মোট অনুমোদিত রুটের সংখ্যা ৪২৬টি। এর মধ্যে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে অনুমোদিত ৮৭ রুটে বিভিন্ন স্থানে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। সায়েদাবাদ টার্মিনালে অনুমোদিত বাসের সংখ্যা ১৩ হাজার ১১৪টি। অথচ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ধারণক্ষমতা মাত্র ১২০০-১৩০০ বাস। তবে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই টার্মিনালে ধারণ ক্ষমতার বেশি বাস চলাচল করছে। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ১০টি স্থানে সিটি ও আন্তঃজেলা টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৬টি বাস ডিপো তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। কাঁচপুর, কেরানীগঞ্জ, হেমায়েতপুর ও উত্তরার দিয়াবাড়ীতে রয়েছে চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে আগামী দিনে নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনে সড়কযন্ত্রণার লাঘব হবে।

×