ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

ভ্যাট আদায়ে সক্রিয়তা

প্রকাশিত: ২০:১১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভ্যাট আদায়ে সক্রিয়তা

নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হলে কিছুটা বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায় ভোক্তামহলে। তবে রীতি অনুযায়ী প্রচলিত মাত্রায় ভ্যাট আদায়েও যে অসফলতা রয়েছে, সেটি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। একজন ক্রেতার কাছ থেকে নির্ধারিত ভ্যাট আদায় করে থাকে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে সঠিকভাবে জমা হয় কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনও তেমন প্রকাশিত হতে দেখা যায় না। ফলে, ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হতে পারছে না সমাজ। অন্যদিকে কর-ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার ফাঁকফোকর খোঁজা মুনাফালোভী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এবং সেই সঙ্গে কর-ভ্যাট আদায়কারী প্রতিষ্ঠান এনবিআরের এক শ্রেণির কর্মচারী-কর্মকর্তার দুর্নীতি ওপেন সিক্রেট। তা না হলে দেশে ৮০ শতাংশ গয়নার দোকান যে ভ্যাট দেয় না, তার কোনো সুরাহা কেন হয় না?
সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধন আছে মাত্র ৮ হাজার বা ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের। তার মানে, দেশের ৮০ শতাংশ গয়নার দোকানই ভ্যাট দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনার পাশাপাশি ঢাকাসহ ১৮টি জেলার সব গয়নার দোকানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বা ভ্যাট মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি ভালো খবর। এমন পদক্ষেপই কার্যকর হতে পারে। এটা আশার কথা যে রাজস্ব আদায় বাড়াতে ঢাকাসহ ১৮টি জেলার সব গয়নার দোকানে ইএফডি মেশিন বসানো হবে। এজন্য জুয়েলার্স সমিতির কাছে এসব এলাকার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চেয়েছে সংস্থাটি। ভ্যাট আদায়ে এ ধরনের সক্রিয়তাই কাম্য।
নাম প্রকাশে অপারগ জুয়েলার্স সমিতির এক নেতা গণমাধ্যমে যে কথা জানান, তাতে বিরাজমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা ধারণা মেলে। তিনি বলেন, ঢাকার বড় বিপণিবিতানগুলোয় স্বনামধন্য জুয়েলারি দোকানে ইএফডি মেশিন রয়েছে। তবে অখ্যাত মার্কেট কিংবা অলিগলি, এমনকি ঢাকার আশপাশের জুয়েলারি দোকান কোনো ভ্যাটই দেয় না। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে। সে কারণে অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ভ্যাট নিয়ে সবার জন্য একই ব্যবস্থা চালুর দাবি করে আসছিলেন।
রেস্টুরেন্টে খাবারের বিলের ওপর শতকরা ৫ ভাগ ভ্যাট আদায় বিধিসম্মত। এর বেশি আদায় করলেই অনিয়ম। ৫ টাকা হারে আদায় করলেও সেটি যে সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে, তার প্রমাণ কি? ভ্যাট আদায়ের কর্মচারীর সঙ্গে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের লেনদেনের বিশেষ সম্পর্ক থাকে, এমন অভিযোগ রয়েছে। তাই দুর্নীতি রোধে হঠাৎ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান চালানো জরুরি। রেস্টুরেন্টে খেতে আসা নাগরিককে যেন বাড়তি বিল পে করতে না হয় এবং তিনি বিধি অনুযায়ী যে পরিমাণ ভ্যাট দিচ্ছেন সেটি সত্যিই আদায় ও জমা হচ্ছে, এটি নিশ্চিত করা চাই।
নির্ধারিত ভ্যাট প্রদানে অনিচ্ছুক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করা জরুরি। সেই সঙ্গে যারা ভ্যাট দিচ্ছে, তারাও শতভাগ নিয়মনীতি মেনে সততার সঙ্গে সম্পূর্ণ ভ্যাট প্রদান করছে কিনা, সেটিও অনুসন্ধান করা চাই। অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে কর-ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের সততা ও সক্রিয়তা অত্যাবশ্যক।

×