![সয়াবিন তেলে কারসাজি সয়াবিন তেলে কারসাজি](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/editor-picture-final-2502061243.jpg)
প্রতিবছরই রোজা আসার কয়েক মাস আগে থেকেই ভোগ্যপণ্য নিয়ে শুরু হয় নানা কারসাজি। এবারও হয়নি এর ব্যতিক্রম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত এক সপ্তাহ যাবৎ খুচরা বাজারে চাহিদা মতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় তেলের সরবরাহ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। মিলাররা প্রতিবছরই রমজানের আগে তেলের দাম বাড়ানোর জন্য পাইকারি, ডিলার ও খুচরা বাজারে সয়াবিনের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এতে তৈরি হয় এক ধরনের কৃত্রিম সংকট, যা অযাচিত দাম বাড়াতে সহায়তা করে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন। অথচ মাত্র দুই মাস আগে গত ৯ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মিল মালিকদের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ থেকে ১৭৫ টাকা, প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫৭ টাকা করেছে। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্র মতে, ২০১১ সালে সরকার একটি নীতিমালা করে। যেখানে সয়াবিন তেলের দাম প্রয়োজনে বৈশ্বিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচের সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্তমানে ডলার ও অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে পুনরায় ভোজ্যতেলের মূল্য সমন্বয় করার কথা জানান সংগঠনের কর্মকর্তারা। আশার কথা হলো, আসন্ন রমজানে তেলের দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান। অন্যদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, দাম স্থিতিশীল রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে ভ্যাট ছাড় দিয়েছে।
দেশে প্রতিবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে আড়াই লাখ টন তেল উৎপাদিত হয় দেশে। বাকি ২০ থেকে ২১ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে রমজানে চাহিদা থাকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে যেখানে এই মাস উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের মূল্য কমিয়ে দেয় সেখানে দেশে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। আপাতত বাজারে তেলের সংকট নেই এবং রমজানে তেলের সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ কথিত সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হলে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো রকম লাইসেন্স, পারমিট, কোটা ইত্যাদি সীমাবদ্ধ না রেখে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীকে অবাধ সুযোগ দিতে হবে। যারা নিত্যপণ্য গুদামজাত করতে চাইবে, তাদের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি গুদামজাত করতে হলে সরকারের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক অনুমতি নিতে হবে। বাজারকে করতে হবে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক। যেখানে অনেক প্রতিযোগী ও ক্রেতা-বিক্রেতা থাকবে এবং সব তথ্য থাকবে সরকারের কাছে। দেশের মানুষ তখনই স্বস্তি পায় যখন নিত্যপণ্য সহজলভ্য এবং দাম সহনীয় হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলেই প্রত্যাশা।