![সবার উপরে মানুষ সত্য সবার উপরে মানুষ সত্য](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/12-2502051421.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
মায়ের কোল জুড়ে আসে মানুষ। কি আসে? মানুষ। মানুষ ছেলে, মেয়ে কিংবা উভয় লিঙ্গের হতে পারে। সে তো মানুষ। সে তো বাবা মায়ের সন্তান। সন্তানকে সব বাবা মায়েই ভালোবাসবে এটাই সত্য। কিন্তু একি? যখন বাবা মা বুঝতে পারেন তার সন্তান তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারী তখনই শুরু হয়ে যায় ব্যতিক্রম আচরণ। বাবা, মা, ভাই, বোন কথায় কথায় দোষ ধরতে শুরু করেন। কঠোর এবং রুঢ় আচরণ করেন। আক্রমণাত্মক এবং লজ্জা দিয়ে কথা বলেন। সমাজের সবখানে তারা কেবল অপমান, উপহাস, তাচ্ছিল্য আর নিগ্রহের শিকার হন। তখন এই মানুষটা ভাবে আমি কে? আমার আপন কে, এ সমাজে আমি কেন, আমি কি করব, কোথায় যাব? আমি কি আত্মহত্যা করব?’ এক পর্যায়ে পরিবার থেকে পালিয়েই যেন তার মুক্তি। সে নিজেকে মূল জনস্রোতের অংশ মনে করেন না। নির্ভার হয়ে বাঁচতে সে খুঁজে নেন আলাদা সমাজ। আলাদা সমাজে পায় গুরু মায়ের দিক্ষা। রপ্ত করতে থাকেন হাতে তালি বাজান, কোমর দোলান, মুখে কড়া মেক-আপ মাখা, নাচ গানের তালিমসহ নানান কৌশল। জীবন ও জীবিকার তাগিদে নামেন যৌনকর্ম ও চাঁদাবাজিতে। এর জন্য দায়ী কে বা কারা? আমাদের সভ্য সমাজ। সভ্য সমাজ তার হিজড়া সন্তানকে সমাজে পরিচয় করিয়ে দিতে পারছে না। হিজড়া পরিচয়ে একটি সন্তানকে স্কুলেই ভর্তি করতে পারছে না। জীবন কাটানোর মতো একটি সামাজিক কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারছে না। নিন্দা আর লোকলজ্জার সংস্কৃতিতে ডুবে আছে এ সমাজ। ফলে হিজড়া কিশোর ভয়-লজ্জা আড়ষ্টতা ও হীনম্মন্যতা নিয়ে বেড়ে উঠছে। মনের মধ্যে জমা হচ্ছে ক্লেদ, দুঃখ ও বঞ্চনা।
মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি-আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষে মানুষে এত ভেদাভেদ, এত হিংসা বিদ্বেষ ভালো নয়। বাংলার মধ্যযুগের এক কবি বড়ু চন্ডীদাশ মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী উচ্চারণ করেছিলেন ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। হিজড়াদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তাই আসুন ঘৃণা, আক্রোশ, বৈষম্য ভুলে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহনশীল হই। শুধু চেহারায় নয় আচরণেও আমরা মানুষ, সমাজে এমন পরিচয় জাহির করি।
কিশোরগঞ্জ থেকে