ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

বেহাল বিমান

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বেহাল বিমান

‘আকাশে শান্তির নীড়’ বার্তাবহ বাংলাদেশ বিমানকে এবার একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ বিষয়ক টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিমান পুনর্গঠন নিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে একটি নতুন এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা যেতে পারে। নতুন এয়ারলাইন্সটির সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘বাংলাদেশ এয়ারওয়েজ’। এটি পরিচালনা করা হবে একটি স্বাধীন বিশ্বমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ বিমানের বিদ্যমান সম্পদের একটি অংশ ব্যবহার করবে এটি। উভয় সংস্থা আলাদা বাজার ও লক্ষ্য নির্ধারণ করবে। এ দুটো বাণিজ্যিকভাবে আধুনিকায়ন এবং লাভবান করা যায় কিভাবে- তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে বিদেশ থেকে কোনো পেশাদার বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করা যেতে পারে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেবার মান অর্জন ও বাজার ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে সংস্থাটি বাজার থেকে অপসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশের আকাশপথে যাত্রী পরিবহন গত কয়েক বছরে বেড়েছে বহুলাংশে। প্রধান বিমানবন্দর ঢাকা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের মাধ্যমে বছরে ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহনের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারছে না বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুঃখজনক হলো, অন্য বিমান সংস্থাগুলো যখন ভালো   মুনাফা করছে, তখনো বাংলাদেশ বিমান ক্রমাগত লোকসান দিয়ে চলেছে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ বিমানের বহরে যখন সর্বশেষ ড্রিমলাইনার রাজহংস যুক্ত হয়, তখনই সম্পাদকীয় মন্তব্যে আমরা বলেছিলাম, বিমানকে শুধু বহরে বড় করলেই হবে না, লাভজনকও করে তুলতে হবে। এর জন্য কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়। অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাদ দিয়ে যোগ্য, কর্মঠ ও আন্তরিক কর্মীদের বাছাই করে যথাযোগ্য পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। উল্লেখ্য, অযোগ্যতা ও দুর্নীতির অভিযোগে  এর আগে অপসারণ করা হয়েছে বিমানের এমডিসহ কয়েকজনকে। বিদেশ থেকেও চুক্তিভিক্তিক এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। লাভ হয়নি কিছুই।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিমানকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে লাভজনক করে তোলার মতো দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বসহ ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে প্রায় নেই। টিকিট বিক্রির টাকা লোপাট থেকে শুরু করে সেবার মান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, পাইলটের অদক্ষতা ও দুর্নীতি প্রায় সবই ওপেন সিক্রেট। এ অবস্থায় খোল-নলচে পাল্টে ফেলতে হবে বিমানের। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এর মধ্যে তিনটি লিজকৃত। তবে বিমানের লাভ-লোকসান নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এর অবসান হওয়া জরুরি। এর পাশাপাশি বিমান এবং বিমানবন্দরের সার্বিক সেবার মান ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। সে অবস্থায় ঢাকায় আন্তর্জাতিক মানের বিমান হাব প্রতিষ্ঠা, এয়ারবাস ক্রয়সহ বাংলাদেশ বিমানকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত করতে না পারলে সুফল পাওয়ার প্রত্যাশা কম।

×