ফেব্রুয়ারি এলেই বাতাসে ভেসে আসে বইয়ের গন্ধ। চারদিকে বই আর বই। বইয়ের এমন সম্ভার এবং লেখক, পাঠক, প্রকাশনী ও প্রকাশকদের একই প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায় শুধু ফেব্রুয়ারিতে। নতুন লেখকদের সাহিত্যের নতুনত্বের স্বাদ নিতে বইপ্রেমীদের আগ্রহের শেষ নেই। চলে আলোচনা, সমালোচনা, আড্ডা। ‘বই আমাদের বন্ধু’ কথাটি মানে না এমন বই পড়ুয়া একজনকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
জনাথন সুইফট বলেছেন, বই হচ্ছে মস্তিষ্কের সন্তান। প্রশ্ন থাকে সব বই-ই কি আমাদের বন্ধু? বন্ধু নির্বাচনে আমরা আগে মানুষটার সঙ্গে সময় কাটাই, কথা বলি, চিনি এবং বোঝার চেষ্টা করি।
বইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা কতটুকু? বই তো বই-ই, বইয়ের ক্ষেত্রে আবার ভেদাভেদ কিসের? একেক ধরনের বইয়ে একেক কাজ- বইয়ের ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন ওঠানো অর্থহীন। অনেকেই বলে থাকে এমন কথা।
বর্তমানে লেখক বেশি পাঠক কম। ব্যাপারটি এমন না যে পাঠকরা বই বিমুখ। বইয়ে প্রতি চরম অনাগ্রহ, বই দেখলেই নাক সিটকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ফেব্রুয়ারি আসলে রমরমা একটা আবহ তৈরি হয় বই প্রকাশের ক্ষেত্রে। দেশের প্রকাশনা শিল্পের কর্মকাণ্ড অনেকটাই অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক।
এই গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত থাকেন পাঠক, লেখক ও প্রকাশক। সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখর হয় মেলা প্রাঙ্গণ। ব্যাপারটি বিন্দুমাত্রও দোষের নয়। নতুন বই প্রকাশ হলে মানুষ নতুন কিছু জানবে- শিখবে, মেধার বিকাশ ঘটবে, জাতি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শক্তিশালী হবে।
প্রতি বছর বই প্রকাশ বৃদ্ধি পাওয়া আমাদের জন্য আনন্দের। কিন্তু গুনগত মানহীন বই কেজি দরে প্রকাশ, বইমেলায় সেগুলোর রমরমা ব্যবসা, ট্রেন্ড হিসাবে পাঠকের মুখে মুখে চর্চা জাতিকে কতটা বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাশনের জন্য প্রস্তুত এবং সংস্কৃতি মনা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সে প্রশ্ন অধরা থেকে যায়। বই জ্ঞান, বিনোদন এবং তথ্যের উৎস। বইয়ের থাকে নানান ক্যাটাগরি।
শিল্প মানের বিচারে একেক জনের বই একেক ধরনের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে। নিজের রুচি এবং আগ্রহের প্রতি খেয়াল রেখে বইপ্রেমীরা বই নির্বাচন করেন এবং সে ধরনের বইয়ে নিজেকে মনোনিবেশ করিয়ে থাকেন।
ভালো বই নির্বাচন না করলে সেটি সময় নষ্টের কারণ হয় এবং অর্থেরও অপচয় ঘটে। যে যেই ক্যাটাগরির বই পছন্দ করুক না কেন সে ক্যাটাগরির বেস্ট বই সিলেক্ট করতে হবে। একটা ভালো মানের বই জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে লেখকের বড় অংশ কম পড়ে বেশি লেখে।
পড়ার দিকে গুরুত্ব নেই বললেই চলে। ফলে লেখার কাঠামো তুলনামূলক দুর্বল, বানান ভুল, শিল্পমান ও আত্মেপলব্ধি থাকে না। বরং গল্পের গরু গাছে চড়িয়ে দেওয়ার মতো কাহিনী থাকে ভরপুর। একটি ভালো বই পাঠে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয় এবং শব্দচয়ন ও বাক্য বিন্যাসের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়। যত বেশি বই পড়া হয়, তত বেশি শব্দভাণ্ডারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ হতে থাকে।
বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাশক্তি উন্নত হয়, লিখন ও পঠন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, যোগাযোগ দক্ষতা ও বাচনভঙ্গি উন্নত করে। যারা বই পড়েন তারা খুব সহজেই অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতার জ্ঞান বৃদ্ধি পায় ভালো বইয়ের সংস্পর্শে। ভালো বই আমাদের আত্মার প্রশান্তি জোগায়।
কোনো এক পছন্দের বই নিয়ে গেলেই পাঠকের আত্মায় প্রশান্তি আসবে সেটি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, ইতিহাস, ধর্মীয়, দর্শন শাস্ত্র ইত্যাদি হতে পারে।
সর্বোপরি বই আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। ভালো একটি বই আমাদের আত্মার মুক্তির পথ দেখায়, স্বাদ মেটায়। সঠিক বই নির্বাচন না করলে সেটি সময় ও অর্থ দুই ধ্বংস করে।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ
কুতুবে রব্বানী