সম্পাদকীয়
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি খালের সংস্কার কাজের উদ্বোধনের সংবাদ ঢাকাবাসীকে আনন্দ দিয়েছে। এটি দেশবাসীকে আশ^স্ত করার মতো স্বস্তিদায়ক ঘটনা। সারাজীবন পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যখন পরিবেশ উপদেষ্টা হিসেবে খাল সংস্কার কাজের নেপথ্যে থাকেন, তখন বিষয়টি ভরসা করার মতো।
এবার নিশ্চয়ই খাল পুনরুদ্ধার এবং অচিরেই রাজধানীর খালসমূহে পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল ঢাকার খাল ও নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার। ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে এ কাজই করতে হবে সর্বাগ্রে। এটি সময়সাপেক্ষ, কিন্তু শুরু করে তো শেষ করতে হবে। শুরু না করে মহাপরিকল্পনার মধ্যে আটকে থাকলে কাজ আর হবে না।
উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ১৯টি খালের সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিকে বলা হচ্ছে ‘ব্লু-নেটওয়ার্ক’। প্রথম ধাপে ৬টি খাল সংস্কার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা উত্তরের আওতাধীন ৪টি খাল (বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ি) এবং ঢাকা দক্ষিণের আওতাধীন দুটি খাল (মা-া ও কালুনগর)। কর্মসূচির আওতায় পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খালেও সংস্কার কাজ করা হবে।
উপদেষ্টার বক্তব্যে বাস্তবচিত্র উঠে এসেছে সুন্দরভাবেই। বাস্তবিকই এখন খালে আবর্জনা, ঝোপঝাড় ও মশা ছাড়া আর কিছু নেই। খালের প্রাণ ফিরিয়ে আনা অত্যাবশ্যক।। খালপাড়ে হাঁটার রাস্তার পরিবর্তে সবজি চাষ, সবুজ ফিরিয়ে আনার যে পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণ করেছে, সেটি প্রশংসাযোগ্য। খালের দুই কিলোমিটার পরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি করে কমিটি করা হবে।
তারাই খালের দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। দখল ও দূষণের কারণে ঢাকার জলাভূমি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এক সময় ঢাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূলে ছিল শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালগুলো। এসব খাল নগরীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। কয়েক দশক আগেও ঢাকার যেসব খালে ছিল পণ্যবাহী নৌকার আনাগোনা, সেগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া নর্দমার আকার ধারণ করেছে।
অত্যধিক পরিমাণে বর্জ্য ফেলা, প্রভাবশালীদের দ্বারা ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কারণে ঢাকার অধিকাংশ খালই বর্তমানে মৃতপ্রায়। এক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল যে, ১৯৬৭ সালে ঢাকা শহর নীল এলাকা ছিল ২৬ শতাংশ, সবুজ স্থান ছিল ৪৪ শতাংশ এবং শহুরে এলাকা ছিল ৩১ শতাংশ। ২০২৪ সালে তা পরিবর্তিত হয়ে ঢাকা শহরের নীল এলাকা মাত্র ৪ শতাংশ, সবুজ এলাকা ১২ শতাংশ ও শহর এলাকা হয়েছে ৮০ শতাংশ। ফলে, পরিবেশ দূষণ ঘটেছে মারাত্মকভাবে।
সেই সঙ্গে বর্ষাকালে পানি ধরে রাখার পথ অবরুদ্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতা ও জলজট হয়ে উঠেছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-স্বরূপ। ঢাকার মৃতপ্রায় খালগুলো সচল করা এবং নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে খাল ও নালা পরিষ্কার এবং দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে জবাদিহিমূলক, বলিষ্ঠ ও কার্যকর নিয়মিত তদারকি আবশ্যক।