ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

জনদুর্ভোগ কাম্য নয়

-

প্রকাশিত: ২০:৪১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জনদুর্ভোগ কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

রাজধানী ঢাকা বিশ্বে এমনিতেই অসহনীয় তীব্র যানজটের শহর হিসেবে সুপরিচিত। ফলে, প্রায় প্রতিদিনই বিঘ্নিত হয় স্বাভাবিক জনজীবন। গত কয়েক বছর ধরে যানজটের শহরে যোগ হয়েছে আরও কিছু নতুন মাত্রা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম যত্রতত্র জনসমাবেশ- তা সে হোক না কোনো রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন অথবা তথাকথিত নাগরিক মঞ্চ জাতীয় কিছু।

কিছু লোকজন জড়ো করে ঢাকার জনগুরুত্বসম্পন্ন কোনো স্থানে হ্যান্ডমাইক অথবা মাইক লাগিয়ে নেতা গোছের কেউ একটি টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন জ্বালাময়ী ভাষায়। এসব সমাবেশ বা জনসভা হতে পারে সরকারের কাছে কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে। অথবা বিরোধী কোনো প্রতিপক্ষ দলকে ঘায়েল করার জন্য। দেখতে দেখতে অল্পবিস্তর কৌতূহলী লোকজনও জড়ো হয়। জনসমাবেশ ঘিরে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে অগণিত পুলিশ।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যায় অনিবার্য যানজট। কমবেশি সবারই গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়া থাকে যে কোনো উপায়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, সামনে বা পেছনে কোথাও এগোনোর পথ নেই। এক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশকে পর্যন্ত অসহায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়, কেবল মাঝে-মধ্যে বাঁশিতে ফুঁ দেওয়া ছাড়া। ফলে, জনসভার বক্তৃতা ও কোলাহল, বিভিন্ন যানবাহনের হর্ন, হকারদের হাঁকডাক- সব মিলিয়ে তৈরি হয় এক অনাসৃষ্টি, সর্বোপরি শব্দদূষণ।
উদাহরণত বলা যায়, ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাজধানী ঢাকা প্রকারান্তরে পরিণত হয়েছিল নানারকম জনসভা, বিক্ষোভ কর্মসূচি ও অবরোধের শহরে। গত কয়েকদিন ধরে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন মহাখালীর মতো একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। একই সঙ্গে ক্ষোভ-বিক্ষোভসহ সড়ক-রেলপথও অবরোধ চলেছে।

অন্যদিকে রাজধানীর শ্যামলী, মিরপুর, ধানমণ্ডি এলাকা স্থবির হয়ে পড়ে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহতদের সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদতে জুলাই হত্যাকা-ে জড়িতদের দায়মুক্তি দেওয়ার প্রতিবাদ ও ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সারাদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ইনকিলাব মঞ্চ।

অন্যপাশে রাজনৈতিক কারণে চাকরিচ্যুত  পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেন হাইকোর্ট মাজার এলাকায়। এর বাইরে প্রতিদিনের মতো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সর্বস্তরের পাঠক সহজেই অনুমান করতে পারেন যে, তীব্র যানজট অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকার অবস্থাটা কেমন দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত? মোটকথা, জনজীবন একেবারেই স্থবির হয়ে পড়তে বাধ্য হয়, বর্তমান কর্মব্যস্ততার যুগে যা আদৌ কাম্য নয়।
এক সময়ে বহুখ্যাত ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান, রমনার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন আর উন্মুক্ত জনসমাবেশের উপযুক্ত নয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রায়ই রাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশ হলেও এখানেও সৃষ্টি হয় তীব্র জনজট-যানজট। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের জনসমাবেশ ও অবরোধের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেছে শাহবাগ চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

পরে তা ছড়িয়ে পড়েছে মহাখালী, মিরপুর, ধানমণ্ডি, উত্তরা এলাকায়। এ অবস্থায় সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে ভেবে দেখতে হবে যে, ব্যাপক ও অসহনীয় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে সভা-সমাবেশ, অবরোধ-অবস্থান কর্মসূচি, শাটডাউন ইত্যাদি পালন করা কতটা সংগত এবং গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে জনসাধারণের কাছে?

×