- সারাদেশের মানুষ বলবে তিতুমীরের আন্দোলনের লজিক নেই- রাশেদা কে চৌধুরী
- তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে- দিলারা চৌধুরী
- বিশ্ববিদ্যালয় হতে গেলেতো নিয়ম-কানুন রয়েছে ছাত্রদের বুঝতে হবে-যতীন সরকার
সড়কপথ, রেলপথ অবরোধ করে তিতুমীর কলেজের আন্দোলনকে অযৌক্তিক এবং শক্তি প্রয়োগের আন্দোলন বলছেন বিশেজ্ঞরা। এ নিয়ে জনকণ্ঠের মুখোমুখো হয়ে বিশেষ মতামত দিয়েছেন গণসাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী ও বিশিষ্ট লেখক এবং চিন্তক অধ্যাপক যতীন সরকার।
তাঁরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ মানুষই মনে করছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। সারাদেশের মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গেছে ওই শিক্ষার্থীদের উপর। রাস্তার সাধারণ মানুষ, অটো রিক্সাচালক, সবাই এখন ছাত্রদের গালিগালাজ করছে। কলেজটির একটি অংশ বল প্রয়োগের আন্দোলন করছে বলেও মন্তব্য তাঁদের। এর পেছনে ভিন্ন কোনো গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা তাও ধারনা করা হচ্ছে। কারণ দেশের সিংহভাগ মানুষ, সচেতন অভিভাক সবাই বলছেন এই আন্দোলনের কোনো লজিক নেই। কোন উদ্দেশ্যে এমন আন্দোলন চলছে সরকারকে গভীরভাবে ভাবতেও বলা হচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য এমন আন্দোলন বলেও ধারণা বিশেজ্ঞদের।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা , বল প্রয়োগ করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সবজি বাজার,মাছ বাজার বানিয়ে ফেলতে চাইছে বলেও মন্তব্য তাঁদের। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশের ৪ কোটি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা হয়তো তিতুমীর কলেজের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বলেও ধারণা করছেন তাঁরা। একই সঙ্গে বিশেজ্ঞরা একাংশের শিক্ষার্থীদের হাস্যরসের এই আন্দোলন কোনোভাবেই যেন না মানেন তারও বার্তা দেন সরকারকে। যে প্রদক্ষেপে এই আন্দোলন বন্ধ করা প্রয়োজন সেটার ব্যবস্থা নিতেও আহ্বান করা হয়।
গণসাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেছেন, ৫ তারিখের পর প্রত্যেক মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এসেছে। জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পেয়েছে। যারা বছরের পর বছর নিরব ছিল কথা বলতে পারেনি তারাও এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, অযৌক্তিক দাবি দফা নিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে । এটা কারও অধিকার নেই। আপনি একটা দাবী আদায় করতে গিয়ে অন্যের অধিকার খর্ব করা, স্বাধীনতা নষ্ট, কেউকে কষ্ট দেওয়া , দুর্ভোগ সৃষ্টি করা এই অধিকার দেশের মানুষ কাউকে দেয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন বড় যদি কোন জাতীয় ইস্যু থাকে সেটা হচ্ছে যারা ২৪ এর আন্দোলনে আহত হয়েছে তাদের সুচিকিৎসা ব্যবস্থা করা । এটাই বড় জাতীয় ইস্যু বলে আমি মনে করছি। কিন্তু সম্প্রতি দেখছি শুধুমাত্র একটা বিশ্ববিদ্যালয় তিতুমীর কলেজ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে, রেলপথ অবরোধ করে মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। শুধু আমি নয়, দেশের অধিকাংশ মানুষই বলছে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। আপনারা খোঁজ নেন, একটা মাত্র কলেজের এমন সিদ্ধান্তের কারণে এখন সারাদেশের মানুষ ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গেছে। রাস্তার সাধারণ মানুষ, অটো রিক্সাচালক, সবাই এখন ছাত্রদের গালিগালাজ করছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন,অন্তর্বর্তী সরকারতো বলেছে, তিতুমীর কলেজের এই দাবি অযৌক্তিক। একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় করা যায় কিনা সেটাও সরকার ভেবে দেখবে, তবে অযৌক্তিক দাবী মেনে নেবে না। আমরা বুঝতে পারছি না, এটা কি সবজি বাজার, কিংবা মাছের বাজার নাকি কোন পণ্য...! সরকার ইচ্ছে করলেই এখনই জরুরী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিতে পারবে। তিতুমীর কলেজ আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে কিনা, এটার যৌক্তিকতা আছে কিনা , এটা কি ভেবে দেখতেও তারা সময় দেবে না...! আমাদেরতো মনে হচ্ছে এটার ভিন্ন কোন উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা কোনোভাবে অন্তরবর্তী সরকারকে ভালোভাবে কাজ করতে দেবে না। শুধু আমরা কেন দেশের অনেক মানুষই জানে তিতুমীর কলেজ এবং ওই এলাকাটা সম্পূর্ণ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের অধ্যুষিত এলাকার ছিলো। তিতুমীর কলেজ আওয়ামী লীগের ঘাটি ছিল। এখন তারা অন্যদের সাথে মিশে গেছে। ওই কলেজ এবং কি আশপাশের অনেকে আমাকে সম্প্রতি বলেছে একটা অংশ ওই এলাকার ব্যবসায়ী , বৃত্তশালীদের থেকে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে। যেটা আগে ছাত্রলীগ করতো এগুলো কারা করছে সেটা অবশ্যই সরকারকে খুঁজে দেখা প্রয়োজন। চাঁদা নেওয়া সেই অংশটা আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে কিনা খুব ভালোভাবে দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সবশেষ একজন শিক্ষা পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি বলবো, যেকোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয় করতে সময় প্রয়োজন, সেটার ভালো-মন্দ সব দিক যাচাই প্রয়োজন। কিন্তু তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখছি তারা একপ্রকার শক্তি প্রয়োগ করছে। কোন নিয়মের তোয়াক্কায় তারা করছে না। দেশের ৪ কোটি শিক্ষার্থীর কথাও তা ভাবছে না। সারাদেশের মানুষ এবং অভিভাবকরা তিতুমীর কলেজের উপর এতটাই বিরক্ত যে ওদের বিরুদ্ধে দেশের ৪ কোটি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা হয়তো আন্দোলনে নামবে। সারা দেশের মানুষকে অযৌক্তির দাবি নিয়ে নাস্তানাবুদ করা কোন অধিকার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশের নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনীতি বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আসলে হাসিনা সরকার বাংলাদেশের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে গেছে। সাতটা কলেজকে কোনোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ঢুকানো ঠিক হয়নি। গত কিছুদিন দেখলাম সাত কলেজের কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছে সেটাও খুব একটা দামী মনে হয়নি। এখন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা একে বারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। আমি বলব ছাত্রদের এই অযৌক্তিক দাবি কোন ভাবে সরকারের মানা উচিত না। এটার জন্য যা যা করা দরকার , যা যা কঠিন পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সরকারের তাই করা উচিত। একটা বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবেই এভাবে মানুষদের জিম্মি করে দুর্ভোগের মধ্যে ফেলতে পারে না। অগ্রহণযোগ্য দাবীতে আন্দোলন করতে পারে না। শুধু আমি কেন সারাদেশের মানুষ বলবে তিতুমীর কলেজের একাংশের শিক্ষার্থীর আন্দোলনের কোনো লজিক নেই। আপনারা মানুষদের জিজ্ঞেস করুন সবাই একই কথা বলেবে।
বিশিষ্ট লেখক ও চিন্তক অধ্যাপক যতীন সরকারে জনকণ্ঠকে বলেন, আমিতো খুব অসুস্থ সব বিষয়ে ভালো খোঁজ খবর এখন রাখতে পারি না, তবে গত কয়েকদিন আন্দোলনের বিষয়গুলো শুনছি। বিশ্ববিদ্যালয় হতে গেলেতো অনেকগুলো নিয়ম-কানুন রয়েছে , সেগুলো ছাত্রদের বুঝতে হবে। যে আন্দোলনে মানুষের দুর্ভোগ হয়, কষ্ট হয় সেগুলো না করাই ভালো ।
আবদুর রহিম/নুসরাত