ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:০৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঢাকার দিনরাত

রবিবার সকালে প্রথম ধাপের ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের সময় টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। ওই সড়কে খেলনা গ্যাস বেলুন বিক্রি করছিলেন এক ব্যক্তি। হঠাৎ একটি ড্রোন ক্যামেরার আঘাতে কয়েকটি বেলুন ফেটে  যায়। বেলুন  ফাটার বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মুসল্লিরা। ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত চলছিল। হাজারো মুসল্লি প্রার্থনায় ব্যস্ত। এর মধ্যে হঠাৎ বিকট শব্দ শোনা যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আতঙ্কে মুসল্লিরা হুড়োহুড়ি শুরু করেন। এ সময় পড়ে গিয়ে ও পদদলিত হয়ে ৪১ মুসল্লি আহত হন।

ঢাকার শীত এবার সংক্ষিপ্ত

জানুয়ারি শেষ না হতেই ঢাকায় গরম পড়ে গেল। তার মানে, মাঘের মাঝামাঝি শীত বিদায় নিলো। এখন মাঘের শেষে যদি বৃষ্টি হয় তবে সাময়িকভাবে কিছুটা ঠাণ্ডা পড়লেও পড়তে পারে। ইদানিং সকালের দিকে ঢাকায় অনেকক্ষণ কুয়াশা থাকে, রোদের দেখা মিলতে অনেক সময় ১১-১২টা বেজে যায়। এ বছর রাজধানীতে শীতের তীব্রতা দেখা যায়নি। তিন বারে শৈত্যপ্রবাহ হলেও সেটির ছোঁয়া রাজধানীতে আসেনি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত ৯ বছরে ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে মাত্র একবার। আশপাশের এলাকা থেকে মূল ঢাকায় তাপমাত্রা থাকছে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ঢাকায় শীত কম হওয়ার কারণে সবুজায়ন ও জলাভূমি কমে যাওয়ার বিপরীতে কংক্রিট বেড়ে যাওয়া ও শহরের বায়ুদূষণকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এভাবে শীত কমে যাওয়া জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত, যা নানা দিক দিয়ে সংকট তৈরি করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের জানুয়ারি মাসে দেশে একটিও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। যদিও প্রতিবছর অন্তত একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয় এ মাসে। তীব্র শৈত্যপ্রবাহহীন জানুয়ারি দেখা গিয়েছিল ৯ বছর আগে, ২০১৬ সালে। এবার জানুয়ারিতে গড় তাপমাত্রাও ছিল অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি, বিপরীতে কুয়াশা কম পড়েছে।
শীতে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তার কমে। যদি শীতের তীব্রতা ও বিস্তার কমে, তাহলে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, শীত বেশি পড়লে এডিস মশার বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হয়।

‘ষড়জ’-এর ‘সুররঞ্জনী’ আয়োজনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রিয়াঙ্কা গোপ
প্রয়োজনীয় শীত না পড়লে গম, আলু ও শর্ষের মতো ফসল চাষে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা ব্যাখ্যা করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) শস্য উৎপাদন শাখার পরিচালক শওকত ওসমান। তিনি বলেন, শীত কম পড়লে এসব ফসলের ফুল কম ফোটার আশঙ্কা থাকে। এমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, গমের ক্ষেত্রে তাপসহিষ্ণু জাতের বিস্তার ঘটেছে। কিন্তু আলু বা শর্ষের তা নেই। তাই এসব ফসল এবার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
বাংলাদেশে প্রায় দুই দশক ধরে গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া আছে। এর একটি দৃশ্যমান বিষয় হবে শীতের বিস্তৃতি বা পরিধি কমে যাওয়া। বাংলাদেশেও তাই ঘটছে। এই প্রবণতা ভবিষ্যতে বাড়তে পারে।

বুড়িগঙ্গা বাঁচলে ঢাকা বাঁচবে

বুড়িগঙ্গায় যত জল গড়িয়েছে, নদীটির দূষণ-দখল ও মরণদশা নিয়ে তার চেয়ে বেশি শব্দ ব্যয় করা হয়েছে। তবু বিশেষ সুমতি হয়নি কর্তৃপক্ষের। নদীরক্ষায় কার্যকর বিশেষ উদ্যোগ নিতেও দেখা যায়নি।
বুড়িগঙ্গা নদী বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে, তাই নদী ও রাজধানী ঢাকার টিকে থাকার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্গঠন এবং সমতা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য সম্পদ সংগ্রহ’ শীর্ষক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হন্তান্তর করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারকে এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করে একটি সিদ্ধান্তমূলক বার্তা পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে এই প্রকল্পের জন্য তাৎক্ষণিক, নিরবচ্ছিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জরুরি আইন প্রণয়ন করা উচিত। নেতৃত্ব আসা উচিত একজন নিবেদিতপ্রাণ মন্ত্রী বা উপদেষ্টার কাছ থেকে, যাঁর সমর্থনে থাকবে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তিগত এবং আইনি টিম। স্বার্থান্বেষী মহল থেকে প্রত্যাশিত প্রতিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য নাশকতা এড়াতে বিশেষ বিচারিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আইনের অধীন নদীগুলোকে সচল থাকার অধিকার দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই জরুরি পদক্ষেপগুলোকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার পুনরুদ্ধার তার নদী দিয়ে শুরু হোক।’

টিকিট কেটে উচ্চাঙ্গসংগীত

ঢাকায় উচ্চাঙ্গসঙ্গীত বা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কয়েকদিনব্যাপী বড় আসর বসতো শীতের শুরুতে, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে। সে এখন কেবলই সুখস্মৃতি। অবশ্য ওই উৎসব দেখতে টিকেট কাটা লাগতো না। অনলাইনে নাম নিবন্ধন করলেই চলতো। দর্শনীর বিনিময়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উপভোগের আইডিয়া ও সেটি বাস্তবায়নের কৃতিত্ব সাংস্কৃতিক সংগঠন ষড়জের। আশ্চর্যই হয়েছি উদ্যোগটি সফল হতে দেখে। কেননা মিলনায়তন অনেকটাই পূর্ণ ছিল।
শাস্ত্রীয়সংগীতের প্রচার ও প্রসারে নিবেদিত সংগঠন ‘ষড়জ’ বছরের প্রথম সংগীতের আসর ‘সুররঞ্জনী’-র ওই আয়োজন করেছিল গত শুক্রবার, ছায়ানট মিলনায়তনে। পণ্ডিত মিথুন দে-র স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন তাঁর সন্তান শ্রী অসিত দে। ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ আয়োজনে খেয়াল, ধ্রুপদ ও যন্ত্রসংগীতে রাগ-রাগিনীর মায়াজাল বিস্তার করেন সংগীতাচার্য আলী এফ এম রেজোয়ান, ড. প্রিয়াঙ্কা গোপ, শ্রাবন্তী ধর ও অভিজিৎ কুণ্ডু। ইলহাম ফুলঝুরি খান ও ইসরা ফুলঝুরি খানÑ দুই সহোদরার সরোদবাদনও ছিল গভীর অভিনিবেশ সহযোগে উপভোগের। ষড়জের অন্যতম সংগঠক শিল্পী লায়েকা বশীরের প্রাণবন্ত সঞ্চালনা দর্শক-শ্রোতাদের মনোযোগ ব্যাহত হতে দেয়নি। পুরো আয়োজনটি ছিল বেশ মানসম্পন্ন এবং যেন এক মোহনীয় মগ্ন ছন্দে বাঁধা।  
বাংলাদেশের শাস্ত্রীয়সংগীতের কিছু তরুণ, নিবেদিত সাধক ও শিল্পীর একাগ্র উদ্যোগে ষড়জ আত্মপ্রকাশ করে ২০২৩ সালে। সারাবছর নানারকম কার্যক্রমের পরিচালনার মাধ্যমে ষড়জ তার যাত্রা অব্যাহত রাখার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে, সেটি সফল হোক।

ভাষার মাসে মাসব্যাপী বইমেলা

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি শুরুই হয় জাতীয় কবিতা উৎসব ও অমর একুশে গ্রন্থমেলার মধ্য দিয়ে। ঢাকার বাইরের কবিতা চর্চাকারীদের কাছে কবিতা উৎসব বিশেষ আগ্রহ ও আনন্দের বিষয়। কিন্তু এতে দর্শক-শ্রোতার আশানুরূপ উপস্থিতি কেন ঘটছে না, আয়োজক-কবিদের এটি গুরুত্বের সঙ্গেই ভেবে ব্যবস্থা নিতে হবে। আশির দশকের মাঝামাঝি কবিতা উৎসবের সূচনাযাত্রায় কবি মোহন রায়হান অগ্রভাগে ছিলেন। মাঝে প্রায় আড়াই দশক তাঁকে কবিতা উৎসবে দেখা যায়নি। লক্ষণীয় হলো এতকাল যাদের কবিতা উৎসব মঞ্চে দেখা গেছে, এবার তাঁদের একজনকেও উৎসব মণ্ডপে দেখা যায়নি। দুই যুগ পরে ফিরে এসেছেন মোহন রায়হান, রেজাউদ্দিন স্টালিন প্রমুখ।
একুশের বইমেলা কড়চায় যাওয়ার আগে প্রসঙ্গকথা। প্রকাশিতব্য বই নিয়ে পুলিশের কাছ থেকে অনুমোদন-সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, কিংবা এই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ এ কথা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে বা কোনো উসকানি রয়েছে, এমন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বাংলা একাডেমিকে অনুরোধ করা হয়। এর আগে বইমেলা আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক সভায় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রকাশিতব্য বই ভবিষ্যতে পুলিশ কর্তৃক ভেটিং বা অনুমোদন-সংক্রান্ত কোনো পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি বা [এই প্রসঙ্গে কিছু] বলা হয়নি।
এর আগে সকালে জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘গণমাধ্যমে একটা সংবাদ ভুল- বোঝাবুঝি সৃষ্টি করছে। পুলিশের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, বই ছাপানোর আগে বাংলা একাডেমি বা পুলিশকে পড়তে দেওয়া উচিত। এটা অবিশ্বাস্য, এটা হাস্যকর। আমাদের সরকারের নীতিমালার আশপাশেই নেই।’
প্রতি বছরই বইমেলায় নতুন নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দেখা মেলে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের স্টল খুঁজে পাওয়া যায় না। এবারও অন্তত একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেন্ডুলাম বুকস বইমেলায় স্টল নেয়নি। বিগত দুই বছর প্রতিষ্ঠানটি কয়েকটি অভিনব বই বের করার সুবাদে ক্রেতাপাঠকদের সুনজরে ছিল। তাছাড়া এটির কর্ণধার হলেন একজন নারী। তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেছেন : ‘স্টল না নেওয়ার কারণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। স্টল না নিয়ে দেখতে চাচ্ছিলাম মেলায় স্টল না নিয়ে আসলে কী হয়। কারণ স্টলের পিছনে যে পরিমাণ শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রম দিতে হয়, সে পরিমাণ আর্থিক লাভ আসে না? এটা খুবই কষ্টকর?’ এই বক্তব্য আন্তরিকই মনে হলো। পুস্তক প্রকাশনাকে পেশাগতভাবে গ্রহণ করলে এবং বইমেলায় বইয়ের প্রচার ও বিক্রিকে বিবেচনায় নিলে আয়-ব্যয়ের তারতম্যের ব্যাপারটি মাথায় রাখতেই হবে। একালে কে আর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়?
প্রথমদিন বইমেলায় যাওয়া কিছুটা বিড়ম্বনারই। তবু বহু লোক প্রাণের টানে যান। আমি গিয়েছিলাম বইয়ের টানে, সত্যি বলতে কি নিজেরই প্রকাশিতব্য বইয়ের টানে। মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক বলেছিলেন, আমি যেন মেলার প্রথমদিন তাদের প্যাভিলিয়নে এসে কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপিটি দেখে দিয়ে যাই। ভাল করেই জানি যে, সময়মতো কাজটা করা না গেলে বই বেরুতে দেরি হয়ে যাবে। তাই মাত্রাতিরিক্ত ধুলো, গর্ত ও খানাখন্দে ভরা মেলার হাঁটাপথ এবং স্টল নির্মাণের উপকরণÑ ইট, কাঠ, রঙের কৌটা, হাতুড়ি-বাটালির সমাহার, এসব ঝামেলা সামলেই বইমেলায় পরিভ্রমণ করতে হবে। বিশাল উদ্যানে প্রতাশিত স্টলের সন্ধান পাওয়াও কম ঝক্কির নয়। তবে তথ্যকেন্দ্র আছে, সেই ভরসায় মেলায় ঢুকেই তথ্যকেন্দ্রর দিকে এগিয়ে যাই। অবাক কাণ্ড, সেখানে একজনও কর্মী ছিলেন না। প্রবেশকালে পুলিশ চেক করতে এলেন না দেখে একদফা অবাক হয়েছিলাম আগেই। যাহোক, মেলার প্রথম দিন কিছু স্টল বরাবরই স্টল নির্মাণ শেষ করে উঠতে পারে না। এবার মনে হলো এই অসমাপ্ত স্টলের সংখ্যা প্রচুর। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বাংলা  একাডেমি কর্তৃপক্ষও ভাষার মাসের প্রথম দিন মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। এটা অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত।

পাশবিক আক্রমণের শিকার স্কুলছাত্রী

ঢাকায় স্কুলছাত্রীকে ‘হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ’, রিকশায় করে নিয়ে লাশ ফেলা হয় হাতিরঝিলেÑ এমন একটা খবর পড়ে শরীর হিম হয়ে আসে।
মেয়েটির বাবা দক্ষিণখান থানায় জিডি করার পর গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। মেয়েটির মুঠোফোনের সিডিআর (ফোনকলের বিস্তারিত তথ্য) সংগ্রহ করে পরীক্ষানিরীক্ষা কালে একটি সন্দেহজনক নম্বর মেলে। সেটি ছিল অন্যতম ধর্ষক রবিনের মুঠোফোন নম্বর। তার মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কিশোরীটির সঙ্গে ঘটনার দিনই (১৬ জানুয়ারি) তার প্রথম কথা হয়েছিল। মুঠোফোনের সূত্র ধরে মহাখালীর একটি বাসার সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয় রবিন। এরপর রাব্বিকেও আটক করে পুলিশ। প্রথমে দুজনের কেউই কিশোরীর বিষয়ে তথ্য দেয়নি। পরে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানায় পুলিশকে। জিজ্ঞাসাবাদে রবিন স্বীকার করে, কিশোরীটিকে ‘ফাঁদে ফেলে’ সেদিন দুপুরে মহাখালীর একটি বাসায় নিয়ে যায় তারা। এরপর তার হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে পাঁচজন মিলে তাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে কিশোরীটি অচেতন হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। আশ্চর্য হতে হয় এই কথা ভেবে যে, মধ্যরাতে মহাখালী থেকে রিকশায় করে মরদেহ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সেতুতে নিয়ে আসে ধর্ষকেরা, অথচ পথে টহল পুলিশ থাকার কথা! মরদেহটি সেতু থেকে হাতিরঝিলে ফেলে দেয় রবিন। এরপর যে যার বাসায় চলে যায়।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান শেষে আলোচিত ফটোসেশন
এ সমাজে এই ঢাকা শহরেই এক শ্রেণির ছেলে কী চোখে দেখে মেয়েদের এবং শুধুমাত্র শারীরিক ক্ষুধা মেটানোর জন্য একটি মেয়েকে খুন করতেও পিছপা হয় না, এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না। তাই সম্ভাব্য ভিকটিমদের বাঁচাতে হলে তাদের সচেতন করতে হবে বিশেষ সক্রিয় আয়োজনের মধ্য দিয়েই। মিডিয়ারও এ নিয়ে ভূমিকা রাখা চাই। আর অবশ্যই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে তার ব্যাপক প্রচার চালানো প্রয়োজন। তাহলে যদি কুলাঙ্গারেরা ভয় পায়।
অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও করণীয় রয়েছে অল্পবয়সী মেয়েদের সুরক্ষায়। তাদের সতর্ক করতে হবে যেন সদ্য বা অল্প পরিচিত কোনো লোকের সঙ্গে কোনোক্রমেই কোনো বাসায় না যায়। বাসায় কী ফাঁদ পাতা আছে সেটি আগে থেকে বোঝার উপায় নেই। বয়োঃসন্ধিকালে মেয়েরা থাকে বেশি আবেগপ্রবণ ও সংবেদনশীল। তারা যে কাউকে বিশ^াস করে বসে। তাই তাদের মন্দ লোক থেকে বাঁচাতে হলে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া ছাড়া উপায়ই বা কী?

২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[email protected]

×