ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১

জাপানের উন্নয়ন সহায়তা

প্রকাশিত: ১৯:৪৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জাপানের উন্নয়ন সহায়তা

জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত, ঘনিষ্ঠ ও অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী বন্ধুরাষ্ট্র। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি। বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাপানের অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাপান বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচটি রপ্তানি গন্তব্যের একটি। বাংলাদেশে এখন ৩৫০টির বেশি জাপানি কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আজকের উত্থানের পেছনেও জাপানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। জাপানি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে দেশটির অর্থায়নে চলমান বড় প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিয়ে যাবে দেশটি। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন, বাংলাদেশ এখন জাপানসহ পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চল বিশেষত সার্ক ও আসিয়ান সদস্যদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ খুঁজছে। আমরা পশ্চিম ও পূর্ব উভয়ের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রতি জাপানের অব্যাহত সহায়তার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে জাপানের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
জাপান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। জাইকা, জেট্রোসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার মাধ্যমে জাপান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কারিগরি উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রেখে চলেছে। তাছাড়া এশিয়ার মধ্যে জাপান বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে বস্ত্র, তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য। ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি ও মৎস্যজাত পণ্য এবং খাদ্য শিল্পেরও উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে রপ্তানির। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের একটি বড় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার হয়ে উঠতে পারে দেশটি। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি ও সমুদ্রসম্পদ আহরণে জাপানের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। জাপানের সহযোগিতায় এভাবেই আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারি। আশার কথা, জাপানের বিভিন্ন কোম্পানি এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসায় আগ্রহ দেখাচ্ছে। দেশে জাপানের বিনিয়োগ বেড়েছে, জাপানেও বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে। এ প্রবণতাটি যেন অব্যাহত থাকে এবং টেকসই হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে নীতিনির্ধারকদের। জাপান-বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও আস্থার। বন্ধুত্ব, বিশ্বাস ও আস্থার এই অংশীদারিত্বকে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও প্রসারিত হবে বলেই প্রত্যাশা।

×