কোচ বা প্রশিক্ষকের সঙ্গে খেলোয়াড়দের সম্পর্ক হলো অভিভাবক ও সন্তানের মতো; বলা চলে অনেকটা যেন গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক। তাই উভয়পক্ষের মধ্যে শ্রদ্ধা-মমতার বন্ধন থাকাটাই প্রত্যাশিত। আস্থার সংকট তৈরি হলে সেখানে আর যাই থাকুক খেলার লড়াইয়ে ভালো ফল আশা করা যায় না। গত কয়েকদিন ধরে দেশের জ্যেষ্ঠ নারী ফুটবলারদের সঙ্গে তাদের কোচ ব্রিটিশ নাগরিক পিটার বাটলারের ভেতর সম্পর্কের টানাপোড়েন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে শীর্ষ আলোচনার বিষয়। একদিকে নারী খেলোয়াড়রা চূড়ান্ত অবস্থানে রয়েছেন, পক্ষান্তরে কোচও ডোন্ট কেয়ার মনোভাব নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অচলাবস্থায় দেশের ফুটবলপ্রেমীরা যেমন উৎকণ্ঠায় আছেন, তেমনি ভবিষ্যতে নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রার বিষয়টিও পড়েছে শঙ্কার ভেতরে। সাবিনা-মাসুরা-ঋতুপর্ণারা আগেও কেঁদেছেন। দেশকে দু’বার সাফ শিরোপা এনে দেওয়ার পথে সাফল্যের আনন্দে চোখ ভিজিয়েছেন কতবার। তখন তাঁদের সঙ্গে আনন্দে কেঁদেছে দেশের মানুষও। খেলাধুলায় আকস্মিক সাফল্য পাওয়া দেশটাকে নিয়মিত সাফল্যের স্বাদ কেমন হয় সেটা বুঝিয়েছিলেন অদম্য মেয়েরাই। কিন্তু ক’দিন আগে বাফুফে ভবনের নিচে সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে তাঁরা কাঁদলেন আবারও। এই কান্না সাফল্যের নয়, নয় শিরোপা জয়েরও। তাঁদের এই কান্না ছিল অপমানের, মর্যাদা ক্ষুণ্নের কান্না। সেই অপমানের ভার এতটাই অসহনীয় যে, প্রয়োজনে খেলা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাতেও দ্বিধাবোধ করলেন না তাঁরা!
বাংলাদেশের ফুটবলে গত কয়েক বছরে যা কিছু সাফল্য সবই বলতে গেলে মেয়েদের হাত ধরে। ব্রিটিশ কোচ বাটলার থাকলে গণঅবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের ১৮ খেলোয়াড়। যাঁদের বেশিরভাগই দুবারের সাফজয়ী। বাফুফে ভবনে মেয়েরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজেদের এই অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার সাবিনা খাতুনসহ ১৮ জন নারী খেলোয়াড় কোচ বাটলারের অধীনে অনুশীলন করবেন না বলে ঘোষণা দেন। মেয়েরা এও বলেন, বাটলারকে বাদ না দিলে তাঁরা গণঅবসরে যাবেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার সাবিনাদের ফেরাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। খেলোয়াড়রা একে একে কোচের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিযোগগুলো জানান। দুবারের সাফসেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমাকে উচ্চতার জন্য কটাক্ষ করা, মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ, টুপি পরে খেতে বসায় দল থেকে বাদ দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ এ সময় সামনে আনেন মাসুরা-ঋতুপর্ণারা।
আমরা আশা করেছিলাম আলোচনার ভেতর দিয়ে একটা সুন্দর সমাধান বেরিয়ে আসবে। কিন্তু আসেনি। তাই বলে সব সম্ভাবনাই যে শেষ হয়ে গেছে এমন চরম নেতিবাচকতায়ও আমাদের সায় নেই। দেশে দেশে সংস্কৃতিগত পার্থক্য রয়েছে। রয়েছে সামাজিক আচরণগত ব্যবধানও। তাই বিদেশী কোচের কথাবার্তা ও আচরণ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থেকে যায়। অন্যদিকে যে কোনো খেলার বেলায় নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ব্যতিক্রম হলে সেটিও ভালো উদাহরণ তৈরি হয় না। সব দিক বিবেচনা করে নারী ফুটবলারদের আবেগকে উপেক্ষা না করে দেশের ফুটবলের স্বার্থে বিরাজমান সংকটের দ্রুত অবসানই কাম্য।