ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নয়

প্রকাশিত: ১৯:৪৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নয়

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যয় সাশ্রয়ে  অপ্রয়োজনীয় ও কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আর গ্রহণ করবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এমনকি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গৃহীত মন্ত্রী-এমপিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলো বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর পরিবর্তে এখন থেকে প্রকল্প গ্রহণ ও যাচাই-বাছাইয়ে মতামত নিতে হবে জনগণের। এর ফলে প্রকল্পের নামে সংশ্লিষ্টদের লুটপাটের মহোৎসব বন্ধ এবং দুর্নীতি কমবে বলে আশা করছে সরকার। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মীসূচিতে (এডিপি) রাজস্ব বরাদ্দ কমানোর বিষয়টিও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এডিপির আওতায় ১ হাজার ৩২৬টি প্রকল্প রয়েছে। তবে সংশোধিত প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখার পাশাপাশি কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আগামী অর্থবছরেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হবে। উন্নয়নের নামে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণে এখন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।  তথ্য মতে, অপচয়মূলক প্রকল্প ব্যয় কমানোর মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরে ১ লাখ কোটি টাকা কাটছাঁটের কাজটি ইতোমধ্যে শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমবে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং গতি আসবে রাজস্ব আদায়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা আবদুস সালাম ইতোপূূর্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এবং বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বলেছেন, কথায় কথায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো চলবে না। এখানে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। দেখে-শুনে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে জনকল্যাণের নিমিত্তে। সেজন্য সবার আগে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। প্রকল্প ধরে বসে থাকলে চলবে না। দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে যথাসময়ে। এসব ভালোভাবে নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়ন করতে হবে। অনেক  প্রকল্প পরিচালক  প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিও করেন না ঠিকমতো। ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে মানসম্পন্নভাবে শেষ করতে হবে। সেটি যেন জনগণের কাজে লাগে।  ভূমি অধিগ্রহণ বা ডলার সংকটে অনেক সময় প্রকল্প সংশোধন অনিবার্য হয়ে পড়ে। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। সব নির্ভর করে নিয়মিত মনিটরিং ও মূল্যায়নের ওপর। বিশাল উন্নয়ন বাজেট বাংলাদেশের, যার অর্ধেকের বেশি অর্থ দেশের জনগণের। সেক্ষেত্রে কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় করতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে রীতিমতো চাপে পড়েছে ছোট-বড় প্রায় সব দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে যথাসময়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বারবার সংশোধনসহ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে সরকারি পরিপত্রে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অবিলম্বে এর লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সরকারের লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত ও ব্যাহত হতে পারে। এ অবস্থা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা জরুরি ও অপরিহার্য।

×