ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

ইবতেদায়ি জাতীয়করণ

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইবতেদায়ি জাতীয়করণ

গত কয়েক দশকে দেশের আনাচে-কানাচে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তাঘাট, পথ-প্রান্তর, কালভার্ট-ব্রিজ থেকে বহুতল ইমারত বিনির্মাণে দেশ এগিয়েছে কিছুদূর। প্রায় প্রতিটি খাতের  শ্রেণি-পেশা ও জনজীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বলা যায়। উন্নয়নের এ মিছিলে কিছুটা পশ্চাৎপদতার ছোঁয়াও রয়েছে, যার অন্যতম বেসরকারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী অন্য খাতের পেশাজীবীদের  চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আমাদের জনজীবনে উন্নয়নের যাত্রাপথে দৈনন্দিন খরচের বহর দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তবে বিশেষ করে বেসরকারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের জন্য বর্তমান জীবনযাত্রার সঙ্গে তাল  মেলানো বেশ কঠিন। ১১ গ্রেডের (স্কেল-১২,৫০০) সহকারী শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পান মাত্র ৩ হাজার ১২৫ টাকা। দুঃখের বিষয় হলো, ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক, মৌলভী বা কারিদের বেতন  গ্রেড ১৬, বেতন স্কেল ৯৩০০। চার থেকে পাঁচজন সদস্যের পরিবারে মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ বা ১২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কিভাবে চলে? শিক্ষকগণ এ বেতনে কিভাবে দিনাতিপাত করেন? তাঁদের মনোযোগ জ্ঞান বিতরণে থাকবে, নাকি জীবন-জীবিকার দুশ্চিন্তায় কাটবে? সম্প্রতি ইবতেদায়ি শিক্ষকদের লাগাতার ১০ দিন আন্দোলনের মুখে সরকার দেশের নিবন্ধনভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে যুগের পর যুগ ধরে চলে আশা বঞ্চনার অবসান ঘটবে। মানুষ গড়ার কারিগরদের  পেছনে রেখে জাতি কখনো এগোতে পারে না। সরকারের এ সিদ্ধান্তে শিক্ষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা এবার পাঠদানে মনোনিবেশ করবেন নিশ্চয়ই। বিগত সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টারড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২০১৩ সালে ৯ জানুয়ারি জাতীয়কণের ঘোষণা দেয়। কিন্তু ১টিও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ করা হয়নি।
১৯৭৮ সালের ৯ অর্ডিন্যান্স ২ এর ধারা মোতাবেক প্রায় ১৮ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৯৮৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৪২ (৪০) নম্বর স্মারকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে প্রাইমারি ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা সমমান নির্ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রে রেজিস্টারড প্রাইমারি ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়। জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা ২০১০-এর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মতো ইবতেদায়ি শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। জনস্বার্থে মানব কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে আমাদের পূর্বপুরুষগণ জনবহুল অঞ্চলে স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, ইয়াতিমখানা, মন্দির, গণআশ্রয়কেন্দ্র, যাত্রীছাউনি, শৌচাগার, পুকুরখনন ও গণপাঠাগার নির্মাণ করেছেন। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত দান-অনুদান ছাড়া সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ও মানব কল্যাণে ব্রত। পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া পৈত্রিক ভূমিতে তারা ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
অবশ্য সেক্ষেত্রে মাদ্রাসাগুলোর মান ধরে রাখতে, যত্রতত্র জনবসতিহীন এলাকায় কোনো ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণ না করে একাধিক প্রতিষ্ঠানের জনবল একীভূত করে উন্নতমানের অবকাঠামোসহ ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

×