ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

বিশ্ব ইজতেমা

প্রকাশিত: ১৯:০১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্ব ইজতেমা

আমবয়ানের মধ্য দিয়ে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয় তবলিগের শূরায়ে নেজাম তথা মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের ইজতেমা। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে ধাপে ধাপে চলেছে বয়ান। বেলা দেড়টায় বড় জামাতে অনুষ্ঠিত হয় জুমার নামাজ। নামাজে তবলিগের জামাতের মুসল্লি ছাড়াও অংশ নেন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকার অসংখ্য মুসল্লি। বিগত বছরগুলোতে তবলিগের দুই পক্ষ মাওলানা জোবায়ের ও সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা দুই পর্বে আলাদাভাবে ইজতেমা করতেন। তবে এবারই প্রথম মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা একাই দুই ধাপে ইজতেমা করবেন। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হবে প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নেবেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লি। এরপর ৩-৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। আজ রবিবার ও ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার যথাক্রমে অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। আর ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা পালনের কথা আছে। দেশ-বিদেশের সমবেত লাখ লাখ মুসল্লির ইবাদত-বন্দেগিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে টঙ্গীর তুরাগ তীর। বিশ্ব ইজতেমায় বিশ্বের বড় বড় ইসলামী পণ্ডিত বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ধর্মীয় বয়ান করেন। বিশ্বমানবের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ গণজমায়েত।
তিরিশের দশকে দিল্লির হজরত মওলানা ইলিয়াস (রহ.) যে তবলিগ জামাতের সূচনা করেন, পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশেও এর বিস্তার ঘটে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই বিশ্ব ইজতেমার উদ্ভব। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে বর্তমান কাকরাইল মসজিদ-সংলগ্ন মাঠে। বিশ্ব ইজতেমার মহতী সমাবেশ মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রাখছে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া একটি বিশেষ ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত সময়ে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীরা এবং বিশিষ্টজনরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করেছেন। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশটি সম্পন্ন হয়ে আসছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য লাখ লাখ মুসল্লির ইজতেমায় যাতায়াত নিয়ে কিছু ভোগান্তি থেকেই যায়। সরকারের পক্ষ থেকে ইজতেমাস্থলে যাতায়াতে বিশেষ যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় যাতায়াতের জন্য বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের তরফে ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ইজতেমা পরিচালনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। যাতায়াত ও নিরাপত্তা ছাড়াও এই বিশাল জমায়েতে স্বাস্থ্যসেবা, পানি-বিদ্যুৎ-স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ।
সরকারের পক্ষ থেকে উল্লিখিত সবরকম সেবা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বয়োবৃদ্ধদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাদের জন্য সরকার সতর্কতামূলক বার্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিদেশ থেকে যেসব মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন, তারা আমাদের মেহমান। তারা যেন কোনো বিড়ম্বনার শিকার না হন, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ইজতেমার একটি সামাজিক জনকল্যাণমূলক দিকও রয়েছে। সেটি হলো যৌতুকবিহীন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এবারও এই যথারীতি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার জনপ্রিয়তা এখন এতটাই যে, অনেক  রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল  আখেরি মোনাজাতের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা কাজ করে যে, এখানে যারা অংশগ্রহণ করেন, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে একটি আত্মিক সংযোগ স্থাপন করতে পারেন তারা। বিশ্বব্যাপী যখন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদ, জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় হানাহানি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তখন ইসলামের শান্তির বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই বৃহৎ সম্মেলনটি গুরুত্ববহ অবশ্যই।

×