অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পরিচালিত একটি জরিপ। এটি বাংলাদেশের চতুর্থ অর্থনৈতিক শুমারি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপটি পরিচালনা করেছে। শুমারিটি শুরু হয়েছিল ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ এবং চলেছে ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোট ১৫ দিনব্যাপী। এই অর্থনৈতিক শুমারির প্রতিপাদ্য ‘অর্থনৈতিক শুমারিতে তথ্য দিন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অংশ নিন।’ সারা দেশে ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী এবারের শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে প্রতি ১০ বছর পর এমন শুমারি করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
অর্থনৈতিক শুমারির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের অর্থনীতিতে সময়ের বিবর্তনে যে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটে তা পর্যবেক্ষণ করা এবং অকৃষিমূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরা। এই শুমারির মাধ্যমে অকৃষিমূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের শ্রেণিবিন্যাস নির্ধারণ, শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যা নিরূপণ, কর্মসংস্থান পরিস্থিতির মূল্যায়ন, বিনিয়োগ ও মূলধন কাঠামোর বিশ্লেষণ, বিভিন্ন খাতের প্রবৃদ্ধির ধারা পর্যবেক্ষণ, শিল্পোন্নয়নের জন্য নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের জন্য তথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। মোট অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ ইউনিট গ্রামে এবং ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ শহরে অবস্থিত। তাই সাধারণভাবে বলা চলে, গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর ভর করেই গত এক দশকে এগিয়েছে দেশ। তবে এটাও বাস্তবতা যে, গ্রামাঞ্চলে ঋণপ্রবাহ কমেছে। এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি সর্বশেষ বন্যার ধকল। এর সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে সুদহার বৃদ্ধি ও এসএমই খাতের স্থবিরতা। কর্মসংস্থানেও দেখা যায়নি তেমন কোনো উন্নতি। পুঁজির সংস্থান করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তারা। জিডিপিতে গ্রামীণ অর্থনীতির ভরকেন্দ্র কৃষি খাতের অবদানও কমে এসেছে। টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ছে অর্থনীতিতে প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখা গ্রামীণ উদ্যোগগুলোর। সব মিলিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতির বাস্তবতা এখন দুশ্চিন্তা বাড়ছে অর্থনীতিবিদদের।
লক্ষণীয় হলো, শুমারিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে কী ধরনের সমস্যায় পড়েন, সে তথ্যও জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। প্রায় ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত মূলধন নেই। যাদের মূলধন নেই তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ পায় না। সাধারণত শিল্প খাতের জন্য বেশি পরিমাণে মূলধন ও ঋণ প্রয়োজন হয়। সেখানে অল্প কিছু বিনিয়োগ নিয়ে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান শুরু করা যায়। ফলে মূলধনের অভাবে উৎপাদন খাত কম বেড়েছে। এ শুমারি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত এক দশকে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির পেছনে বড় অবদান রেখেছে সেবা খাত। তবে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে উৎপাদন তথা শিল্প খাত, অর্থাৎ দেশে যে হারে শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়া প্রয়োজন ছিল, সেটি হয়নি।
এটা ধারণা করা যায় যে, অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এই শুমারির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য কেবলমাত্র নীতিনির্ধারকদের জন্যই সহায়ক হবে না, বরং গবেষক, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবে বলে প্রত্যাশা।