ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

চাকরির চ্যালেঞ্জ নিতে কতটা প্রস্তুত আমরা

মো. আবদুল্লাহ আল মুনাইম

প্রকাশিত: ২০:২৫, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

চাকরির চ্যালেঞ্জ নিতে কতটা প্রস্তুত আমরা

আমরা আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো পার করি ছাত্রজীবনে। ছাত্রজীবন হচ্ছে জীবনে সফলতার প্রথম ধাপ। এখান থেকেই জীবনকে জানা শুরু হয়। ছাত্রজীবনকে বলা হয় ভবিষ্যৎ জীবনের মূল বা ভিত্তি। মূলত প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সময়কে ছাত্রজীবন বলা হয়। তবে আপাতদৃষ্টিতে শেখার কোনো বয়স হয় না। একজন মানুষ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত জ্ঞান লাভ করতে পারে। কিন্তু বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমাদের লেখাপড়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটা ভালো চাকরি কিংবা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি মাধ্যম। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ছাত্রজীবন শেষ করে চাকরির বাজারে আদৌ কি আমরা তাল মেলাতে পারি? ছাত্রজীবনে আমরা কি চাকরির চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত করতে পারি নিজেকে?

ছাত্রজীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো আমরা নষ্ট করি। যার ফলে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারি না। তাই ছাত্রজীবন শেষে শুরু হয় হতাশা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ-২০২৩- এই তথ্যমতে ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৩ লাখই বেকার। আর এই বেকারদের ৮৭ শতাংশই শিক্ষিত বেকার। আর ২১ শতাংশ বেকার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও কোনো কাজে যুক্ত নন। যাদের চতুর্থ বর্ষ শেষ তারাই ভালো জানে চাকরির বাজারে কতটা প্রতিযোগিতা করতে হয়।

ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছেজ্যাকস অফ অল ট্রেডস মাস্টার অফ নানঅর্থাৎ আমরা সবকিছুতেই পারদর্শী কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কিছুতেই আমাদের দক্ষতা নেই। এমনটা হলে চাকরির বাজারে টিকে থাকা অসম্ভব। বর্তমান বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা শোচনীয়। ছাত্র-ছাত্রীদের দক্ষতা অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেই পর্যাপ্ত কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিন দিন বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া স্বাধীনতার পরবর্তী প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলেও প্রতিবছর এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ থেকে জন উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। বিসিএসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি একজন ছাত্রকেও ছাত্র জীবনেই ঠিক করে নিতে হবে তার লক্ষ্য কি কিভাবে তার লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। চাকরির এই লং রেসে টিকে থাকার জন্য কি কি করতে হবে সে বিষয়ে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অধিকাংশ সময় আমরা ঘোরাঘুরি কিংবা অন্য কোনো কাজে ব্যয় করি। নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার কোনো পদক্ষেপ নেই না। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে অনেক দূরে। ১০০ জন ছাত্রকে যদি তাদের জীবনের লক্ষ্য জিজ্ঞেস করা হয় তার মধ্যে ৭০% কোন উত্তর দিতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরলে কোথাও দেখা যায় না কয়েকজন ছাত্রছাত্রী মিলে গ্রæ স্টাডি কিংবা ক্যারিয়ারবিষয়ক কোনো আলোচনা করতে। এছাড়া ঘোরাঘুরি খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সকল কার্যক্রমে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায় না। যার ফলে স্নাতক স্নাতকোত্তর শেষ করে তারা হতাশায় ডুবে যায়। শেষে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আত্ম হননের প্রবণতা বেশি থাকে। এর থেকে দ্রæতই বেরিয়ে আসতে হবে তাছাড়া ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শঙ্কায় পড়ে যাবে।

প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিজস্ব কালচার থাকে। এই কালচারের ব্রেকডাউন যতদিন না সম্ভব ততদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে দক্ষতা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রী বের হওয়ার সংখ্যা খুবই নগণ্য হবে। একজন ছাত্রছাত্রী কিভাবে নিজের সময় ব্যয় করছে কি কাজে ব্যয় করছে সে বিষয়ে অবশ্যই জ্ঞান থাকা উচিত। তাছাড়া ছাত্রজীবন শেষে হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। তাই সকলের উচিত ছাত্র জীবনে নিজের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য সেট করা এবং সে অনুযায়ী নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা, যাতে করে ছাত্র জীবন শেষে চাকরির বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখা যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ছাত্রছাত্রীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাব গবেষণা খাত বৃদ্ধি করা। যাতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অবস্থায় একজন ছাত্র নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে।

 

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

 

×