চিকিৎসা মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষ তার চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো ধরনের আপস করে না। ভালো থাকার জন্য, জীবনকে সুন্দর করার জন্য, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার সবকিছু ত্যাগ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অনেক সময় ভবিষ্যৎ কিংবা বাস্তবতা নিয়েও চিন্তা করে না। আমাদের মতো গরীব দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে চিকিৎসা ব্যয় খাতে। এতে শুধু আমাদের অর্থনীতি যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও পঙ্গু হচ্ছে। যারা বিদেশ যাচ্ছেÑতাদের (৫০-৫২%) প্রধানত রোগ নির্ণয় ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেÑক্যান্সার ২১%, হৃদরোগ ১৮%, প্রজনন জটিলতা ১৩%, অর্থোপেডিক ৬%, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও লিভার ৬%, কসমেটিক ৫%, কিডনি ৩%, নাক-কান-গলা ৩%, চোখ ২% ও স্নায়বিক ৪%- এই হারে এসব রোগে। বিদেশগামী রোগীদের চিকিৎসা সেবার গন্তব্য হিসেবে শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত ৫১%, সিঙ্গাপুর ২০%, থাইল্যান্ড ২০%, মালেয়শিয়া ২% ও তুরুস্ক ১%। এছাড়াও চীন ২%, জাপান ২%, কোরিয়া ২%, যুক্তরাষ্ট্র ২%, যুক্তরাজ্য ৩%; অস্ট্রেলিয়া গিয়েও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দেশের রোগীরা যারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাড়ি দিচ্ছেন, তারা প্রধানত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত লোকজন। সাধারণ লোকজন (নিম্নবিত্ত) মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যান, সেখানেও যখন সন্তুষ্ট হতে পারেন না, তখন যাদের সক্ষমতা আছে তারা চলে যান বিদেশে।
রোগীদের বিদেশে যাওয়ার কারণগুলো আমরা নিচের ব্যাখ্যায় বিশ্লেষণ করতে পারি-
১। উন্নত চিকিৎসা : বাংলাদেশ এখন নিশ্চিতভাবে উন্নত চিকিৎসা দিতে সক্ষম। শতকরা ০.১% রোগীকে হয়ত আমাদের দেশে যথোপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। রোগগুলো জটিল ও সংখ্যা খুব অপ্রতুল। তাদের বিদেশে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ বিদ্যমান।
২। মানসম্মত চিকিৎসা : রোগীরা আমাদের দেশের চিকিৎসার মান নিয়ে সন্দিহান। দেশে এখন বিশ্বমানের চিকিৎসা হয়। এ বিষয়টা করোনা মহামারির সময় প্রমাণিত। উন্নত দেশে আনুষঙ্গিক যে মান বজায় রাখে, তা করতে গেলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এ দরিদ্র দেশে উন্নত, আধুনিক ও উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
৩। আস্থাহীনতা : আমাদের দেশের রোগীদের বিদেশে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো আস্থাহীনতা। আস্থাহীনতা প্রথমত তৈরি হয় অবিশ্বাস এবং ডাক্তার ও রোগীর যোগাযোগের অভাব থেকে। এ সমাজে কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। মানুষ প্রতারিত হতে হতে মনে করে এখানেও প্রতারিত হবে। ডাক্তাররা মানুষদের প্রতারিত করতে কখনোই চান না। দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষ যখন দেখে সমাজের কর্তা ব্যক্তি বিদেশে চিকিৎসা করাচ্ছে, তখন সেও সেই পথ অনুসরণ করে। তৃতীয়ত, ডাক্তাররা রোগীদের সঙ্গে সময় দিয়ে সম্মানের সঙ্গে তার রোগ চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরবর্তী বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না।
৪। চিকিৎসা ব্যয় : দেশে চিকিৎসা ব্যয় গরিব মানুষের জন্য বেশি। কারণ সরকারি হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা পায় না। রোগীরা যাতে সরকারি হাসাপালে চিকিৎসা পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় আমাদের এবং পাশ্ববর্তী দেশে প্রায় সমান। যদিও উন্নত বিশ্ব এই ব্যয় ৪/৫ গুণ বেশি। রোগীরা দেশের বাইরে যাতায়াত খরচ ও পরবর্তীতে ফলোআপের খরচটা বিবেচনায় আনেন না। আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যয় কমানো যায় যদি- *রোগীরা সরাসরি সঠিক ডাক্তারের সাক্ষাৎ পায়। *রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষা কমিশন বাদ দেওয়া যায়। *চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ওষুধ ও ইমপ্লান্টের মূল্য কমিয়ে আনা যায়। *রোগীদের হাসপাতালে অবস্থানের সময়কাল কমিয়ে আনা যায়।
৫। গ্রাম্য চিকিৎসক/দালালদের দৌরাত্ম্য : দেশের গ্রামের/মফস্বলের বেশিরবাগ উপার্জনক্ষম ব্যক্তি প্রবাসী। তারা তাদের পরিবারের চিকিৎসার জন্য একজন গ্রাম্য চিকিৎসকের ওপর দায়িত্ব দিয়ে যায়। গ্রাম্য চিকিৎসকদের অনেকেই রোগীদের জিম্মি করে তোলে এবং তার পছন্দমতো ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়। যার জন্য রোগীরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়।
৬। গণমাধ্যম : দেশের রোগীদের বহির্বিশ্বে চিকিৎসার একটি প্রধান কারণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডাক্তারদের সম্পর্কে এবং চিকিৎসা সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার। দেশের ডাক্তাররা যে কঠিন পরিবেশে কাজ করছেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করছেন, সেসব বিষয়ে কোনো সাধুবাদ ও প্রচার-প্রচারণা হয় না। শুধু দোষক্রটি ও ভুলভ্রান্তি ফলাও করে প্রচার করা হয়, বিচার বিবেচনা না করে। কাউকে দোষারোপ করার আগে প্রমাণিত হওয়া উচিত। অন্যদিকে আমাদের দেশের সংবাদিকদের মেডিকেল বিষয়ে তেমন জ্ঞান নেই।
৭। অব্যবস্থাপনা : দেশের সরকারি হাসপালে অব্যবস্থাপনা অনেক বেশি। হাসপাতাল পরিচালনার মতো তত্ত্বাবধায়কের যথেষ্ট অভাব আছে। হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের ওপর ডাক্তারদের ট্রেনিং দেওয়া প্রয়োজন। অব্যবস্থাপনার মধ্যে আছে- *পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব *যন্ত্রপাতি নষ্ট (লিফ্ট, এক্স-রে মেশিন ইত্যাদি) *অনিশ্চয়তা (রিপোর্ট পাওয়া, ডাক্তারের সাক্ষাৎ, হাসপাতাল ভর্তি, অপারেশন হওয়ার) *ঔষধ পাওয়া না যাওয়া *প্রতিটা কাজে বখশিশ (ড্রেসিং, বিছানা-প্রাপ্তি ও ট্রলি ঠেলা) *সর্বোপরি দালালদের দৌরাত্ম্য।
৮। জবাবদিহিতা : দেশে জবাবদিহিতার প্রচন্ড অভাব। প্রতিটি কাজে জবাবদিহিতা থাকলে কাজের মান বাড়ে। জবাবদিহিতাকে সেবা ক্ষেত্রে বলা যায় বিবেকের পরীক্ষা। এই জবাবদিহিতা সবার জন্য প্রযোজ্য, প্রধানত ডাক্তারদের।
বিদেশে রোগী যাওয়ার প্রতিকার
১। জনবল বৃদ্ধি : আমাদের জনবল বৃদ্ধি করতে হবে। আর সেটা হতে হবে দক্ষ লোকদের দ্বারা। শুধু সংখ্যা বাড়িয়ে কোনো উপকার হয় না বরং ক্ষতি হয়। দেশে এমবিবিএস ডিগ্রির মান বাড়াতে হবে। একসময় এ ডিগ্রি অর্জন কঠিন ছিল, কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিকীকরণ ও রাজনীতিকরণ করে এর মান সন্তোষজনক থাকছে না। এমবিবিএস ডাক্তারদের প্রতিবছর এক সপ্তাহের ট্রেনিং এবং প্রতি পাঁচ বছর পর পর এসেসমেন্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডাক্তারদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ট্রেনিংয়ের পর যাতে সেই ট্রেনিং কাজে লাগাতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। গ্রামে/মফস্বলে একজন রোগী প্রথমত একজন এমবিবিএস ডাক্তারের সাক্ষাৎই পায়। যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তারই রোগীর সঠিক পথ নির্দেশ করতে পারে। একজন জুনিয়ার ডাক্তারের বেতন খুবই অল্প। এই বেতন বৃদ্ধি করা জরুরি। আমাদের সিস্টারদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সম্মানিত করা প্রয়োজন, যাতে তারা কাজ করতে ও সেবা দিতে আগ্রহী হয়। টেকনিশিয়ানদের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। একজন টেকনিশিয়ান তৈরি হতে অনেক শ্রম, সময়, অভিজ্ঞতা, একাগ্রতা ও বুদ্ধির প্রয়োজন।
২। আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে : আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য- * দেশের সকল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারিকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। * সকল অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।
৩। রেফারেল সিস্টেম : রেফারেল সিস্টেম অতিপ্রয়োজনীয় ও আবশ্যকীয়। এতে- * রোগীরা উপকৃত হবে। উপযুক্ত ডাক্তারের সাক্ষাৎ পাবে। * চিকিৎসক তার পছন্দের বিষয়ের ওপর কাজ করে আনন্দ পাবেন এবং কাজের মানও ভালো হবে। * রোগীর ঘোরাঘুরি কম হবে এবং খরচ কমে যাবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।
৪। হাসাপাতাল স্থাপন ও পরিকল্পনা : আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রবিন্দু যদি জেলা সদরকে করা যায়, তাহলে স্বাস্থ্য সেবার মান বেড়ে যাবে। বর্তমানে রোগীরা গ্রাম বা উপজেলা থেকে সরাসরি রাজধানীতে চলে আসে। এর ফলে অযথা রোগীর চাপ বৃদ্ধি পায় ও সেবার মান কমে যায় এবং প্রকৃত রোগী অনেক সময় চিকিৎসা বঞ্চিত হয়। প্রতিটি রোগী টারশিয়ারী হাসপাতালে আসার আগে সদর/মেডিক্যাল কলেজ থেকে হাসপাতালের চিকিৎসাধীন বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষর সংবলিত ডিসচার্জ সার্টিফিকেট নিবে। কর্পোরেট হাসপাতাল : স্বাস্থ্যসেবায় বর্তমানে দেশে করপোরেট হাসপাতাল এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এইসব হাসপাতালে একই ছাদের নিচে সব বিষয়ে ডাক্তার পাওয়া যায়। কিন্তু এসব হাসপাতালে ডাক্তারদের উঁচু বেতন দেওয়া হয়, তাই অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরীক্ষা করা হয়। যার ফলে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যায়। করপোরেট হাসপাতালের ডাক্তাররা (বিদেশী) যাতে মানসম্মত হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে হাসপাতাল তৈরি করতে হবে করপোরেট হাসপাতালের আদলে। যেখানে সব ধরনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল থাকবে এবং হাসপাতাল থাকবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং চিকিৎসা ব্যয় রোগীদের সাধ্যের মধ্যে হবে। সরকার এসব হাসপাতাল তৈরিতে সহায়তা করবে। দেশে বিশেষ করে মফস্বল শহরে ১০/২০ বেডের ক্লিনিক চালু হয়। এসব হাসপাতালে মালিক ও ম্যানেজার একই। এরা রোগী বাগিয়ে এনে চিকিৎসা করেন পরবর্তীতে দায়িত্ব নেন না। ১০/২০ বেডের হাসপাতালের অনুমতি দিলে শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেওয়া যেতে পারে, যদি তিনি নিজেই সেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেন। অন্যথায় সকল প্রাইভেট হাসপাতাল ৫০ বিছানার বেশি হতে হবে। পরিকল্পনা করে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা প্রয়োজন, যাতে সব অঞ্চলই সুবিধা পায়।
৫। ডাক্তার পোস্টিং-প্রমোশন-প্র্যাক্টিস : * ডাক্তারদের পোস্টিং-প্রমোশন-প্রাক্টিস একটা নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে হতে হবে এবং রাজনীতিমুক্ত হতে হবে। * প্রফেসররা শুধু নিজ প্রতিষ্ঠানে প্র্যাকটিস্ করতে পারবে। সহযোগী অধ্যাপক/সহকারী অধ্যাপক/সিনিয়র কন্সালটেন্ট/কন্সালটেন্ট প্র্যাকটিস্ করতে পারবে। * রেজিস্ট্রার বা সহকারী রেজিস্ট্রারকে নো প্র্যাকটিস্ করতে পারবে না।
৬। হেল্থ ইন্স্যুরেন্স : পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে হেল্থ ইন্স্যুরেন্স বিদ্যমান। আমাদের দেশে হেল্থ ইন্স্যরেন্স অপ্রতুল। হেল্থ ইন্স্যুরেন্স চালু হলে রোগীরা প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে ও চিকিৎসা নিতে আগ্রহী হবে।
৭। সচেতনতা : * আমরা যদি নিজ সম্বন্ধে সচেতন হই তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পড়বে এবং চিকিৎসা সহজ এবং চিকিৎসা ব্যয়ও কম হবে এবং রোগ নিরাময় সম্ভব হবে। * রোগী যে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে যাবে সেখানে খোঁজ-খবর নিয়ে যাওয়া ভালো, যে ডাক্তার অনেক ব্যস্ত সেখানে না যাওয়াই ভালো এবং রোগীরা রোগ সম্বন্ধে ধারণা নিলে চিকিৎসা সহজ হবে।
৮। দুর্নীতি : দুর্নীতি আমাদের দেশে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা আছে, স্বাস্থ্যখাতও তার ব্যতিক্রম নয়। দুর্নীতি হয়Ñ * লোকবল নিয়োগে। * যন্ত্রপাতি ক্রয় (অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় হয়) ও যন্ত্রপাতি ব্যবহাওে (ইচ্ছাকৃতভাবে যন্ত্রপাতি নষ্ট করা হয়) ও নিম্নমানের ওষুধ ও এক্স-রে ফিল্ড ও রিএজেন্ট ক্রয় হয়। এসব দুর্নীতির সঙ্গে ডাক্তারদের সংশ্লিষ্টতা তেমন নেই।
৯। ফার্মেসি : দেশের প্রতিটি রাস্তায়-গলিতে ফার্মেসি রয়েছে। দেশের মানুষ ওষুধ খেতে খুব পছন্দ করে এবং এজন্য দেশে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ডেভেলপ করছে। এটা একটি বিরাট সমস্যা এবং জরুরিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। থানা পর্যায়ে একটি ফার্মেসি থাকবে, সেখানে ন্যায্য মূল্যে ওষুধ বিক্রি হবে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুসারে। যা হবে একটা আদর্শ ফার্মেসি। এই ফার্মেসির সঙ্গে একটা ইনফরমেশন সেন্টার থাকবে, যেখানে শহরের ও মহানগরের বিভিন্ন ডাক্তার ও হাসপাতালের তথ্যাদি জানতে পারবে।
১০। ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক : ডাক্তার রোগীর সম্পর্ক হবে বন্ধুর মতো। ভালোবাসার ও শ্রদ্ধার। ডাক্তার সময় দিয়ে সম্মানের সঙ্গে রোগীকে তার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবে এবং রোগীরা ডাক্তারদের সম্মান করবে। অধৈর্য হবে না। শুধু সেরা চিকিৎসা পাচ্ছে কিনা সেদিকে নজর দেবে। ডাক্তারদের সীমাবদ্ধতা মনে রাখতে হবে।
১১। হেল্থ ট্যুরিজম : সিঙ্গাপুর, ভারত, থাইল্যান্ড তাদের চিকিৎসার সঙ্গে পর্যটন নিয়েও একসঙ্গে কাজ করে। আমাদেরও এরকম কক্সবাজার সিলেটের মতো পর্যটন সমৃদ্ধ জায়গায় বিশেষায়িত হাসপাতাল করা যেতে পারে। এতে দেশের রোগীর সঙ্গে সফরসঙ্গী বেশি থাকে। তাই তাদের থাকা-খাওয়া সহজলভ্য ও সুলভে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যদিও দিন দিন বিদেশে রোগী যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে, তথাপি আমাদেরও স্বাস্থ্য অবকাঠামো বেড়েছে, চিকিৎসকের সংখ্যাও বেড়েছে এবং সেবার পরিধি এবং মানও বেড়েছে। একটা দেশের শিক্ষিত সামর্থবান রোগীরা যখন বিদেশে চলে যায় তাহলে তা দেশের ডাক্তার, স্বাস্থ্যব্যবস্থ্যা ও অর্থনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ। দেশের রোগীদের দেশে চিকিৎসার আগ্রহ বাড়ানোর জন্য ডাক্তার, সরকার ও রোগীরা নিজেরাও দায়িত্ববান হতে হবে।
আশা করি, আমরা যদি সঠিক পরিকল্পনামাফিক চেষ্টা করি আগামীতে দেশের রোগীদের দেশেই চিকিৎসা করতে পারব। বাইরের দেশ থেকেও আমাদের দেশে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসবে।
লেখক : এমবিবিএস, এমএস (অর্থোপিডিক্স), সিনিয়র কনসালট্যান্ট, অর্থোপিডিক্স, ট্রমা এন্ড আর্থোস্কোপিক সার্জারি বিভাগ, আজগর আলী হাসপাতাল এবং ফেলোশিপ, সিঙ্গাপুর