সারাদেশে একের পর এক ঘটেই চলছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টা, বনানীর এফআর টাওয়ার, বেইলি রোড, মগবাজারের শর্মা হাউজ, বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেটসহ গত কয়েক বছরে ঢাকায় কয়েকটি বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবার আগুন লাগার পর নড়েচড়ে বসে সরকার। নানা রকম আশ্বাস ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবায়ন হয় খুবই কম। সর্বশেষ, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতবিহবল হয়েছে পুরো দেশের মানুষ। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত বছর সারাদেশে ২৬ হাজার ৬৫৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ১৩৯টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে। এসব অগ্নিকাণ্ডে সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৪৪৬ কোটি ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৭ টাকা। ফায়ার সার্ভিস আগুন নির্বাপণের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৫ টাকার সম্পদ রক্ষা করেছে। অগ্নিকাণ্ডে সারাদেশে ৩৪১ জন দগ্ধ ও ১৪০ জন নিহত হন। অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে ৩৭ জন বিভাগীয় কর্মী আহত এবং নিহত হন দুজন। অগ্নি নির্বাপণকালে উচ্ছৃঙ্খল জনতা ফায়ার সার্ভিসের ৩৪টি গাড়ি ভাঙচুর ও আটটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
অগ্নিকাণ্ড না কমে বছরের পর বছর বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ ভবন নির্মাণের আগে বিল্ডিং কোড না মানা, ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালার তোয়াক্কা না করা, ভবন সাজসজ্জায় অতিরিক্ত দাহ্য পদার্থ ব্যবহার এবং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করা ইত্যাদি। আবার দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করলেও ফায়ার সেফটি প্ল্যান এবং অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না অধিকাংশ ভবনেÑ জানান ফায়ার বিশেষজ্ঞরা। আমাদের দেশে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেকে হয়তো জানেই না ফায়ার সার্ভিসের অনুমতির বিষয়টি। আবার জানলেও আমলে নেয় না। বর্তমানে ভবন নির্মাণে সাজসজ্জার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয়, তার অধিকাংশই দাহ্য পদার্থ। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, এত দাহ্য পদার্থ রেখেও অগ্নি নির্বাপণের জন্য নেওয়া হচ্ছে না কোনো সুব্যবস্থা।
একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবন তৈরি করতে নির্দিষ্ট দূরত্ব থাকা দরকার। আগে ভবনের ভেতরে বিভিন্ন কাঠ ব্যবহার করা হতো। যা পুড়লে বের হয় সাদা ধোঁয়া। এতে লোকজন আহত হতো কম। বর্তমানে ব্যবহার করা হয় পারটেক্স, অ্যালুমিনিয়াম ও মেলামাইন ইত্যাদি। এসব যখন পুড়ে তখন বের হয় বিষাক্ত ধোঁয়া। ধোঁয়ার ফলে মুহূর্তে মানুষের বন্ধ হয়ে যায় নিশ্বাস। বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট প্রতীয়মান। অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সব ধরনের ভবনে আগুন বা ধোঁয়া শনাক্তকরণ, অগ্নি নির্বাপণ এবং আগুন লাগলে নিরাপদে বহির্গমনের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রতিটি ভবনে প্রয়োজনীয় ফায়ার এক্সটিংগুইশারের সিলিন্ডার রাখতে হবে এবং এর সঠিক ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে ব্যাপকভাবে প্রচার করা দরকার। এ ছাড়াও যে কোনো ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন।