যে জাতি মায়ের জাতকে সম্মান দিতে জানে না, সে জাতি খুব বেশি সমৃদ্ধ হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ফরেন সার্ভিস, সংসদ সদস্য, ব্যাংক-বিমা, অনলাইন, অফলাইন, কোথায় নেই নারী? অথচ বাংলাদেশের নারীরা সড়কে ও কর্মক্ষেত্রে নিজেদের অনিরাপদ মনে করেন। সম্প্রতি, বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি) কর্তৃক অনলাইন-অফলাইনে পরিচালিত ‘ইয়ুথ ম্যাটার্স সার্ভে’ শীর্ষক এক গবেষণায় এ তথ্য জানা যায়। পেশাজীবনে নারীদের একটি বড় অংশ এখনো নিরাপদ নয়। জীবিকার ময়দানে নারীরা নিজ মেধায় এগিয়ে গেলেও কর্মক্ষেত্রে তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। জরিপে অংশ নেওয়া নারীর একটা বড় অংশ তাই মনে করে। তারা নিশ্চিত নন যে, বাংলাদেশে শান্তি বিরাজ করছে কি না। তারা মনে করে, বর্তমান বাংলাদেশে নারী ও মেয়েরা নিরাপদ বোধ করছে না। বাংলাদেশে যুব সমাজের অবস্থান, ভাবনা ও প্রত্যাশা জানার জন্য সরাসরি ও অনলাইনে জরিপটি চালানো হয়। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১ হাজার ৫৭৫ জন সরাসরি এবং অনলাইনে ১ হাজার ৬৬৩ নারী জরিপে অংশ নেয়। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, জলবায়ু পরিবর্তন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সুশাসন, তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং দেশান্তর নিয়ে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন। তারা মনে করেন, বর্তমান বাংলাদেশে নারী ও মেয়েরা নিরাপদ বোধ করছে না। জরিপে অংশ নেওয়া অনেকে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত ১-৩ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত বলে মত দেয়। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, বর্তমান প্রজন্মের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্ব অনেক।
দেশে যুব সমাজের অবস্থান, ভাবনা ও প্রত্যাশা জানার জন্য সরাসরি ও অনলাইনে জরিপ চালানো হয়।
বিগত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে যে পরিবর্তিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে নারীরা আগামীর বাংলাদেশ গঠনে কোন্ কোন্ বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তা তুলে ধরাই এই বছরের জরিপের মূল উদ্দেশ্য। বিওয়াইএলসি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর বিশেষত জাতীয় নির্বাচনের আগে এই জরিপ পরিচালনা করে। তবে তরুণরা বিগত সরকারের আমলের চেয়ে বর্তমানে পাবলিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের মতামত প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বাংলাদেশী নারীদের মাঝে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশের অন্তরায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। জলবায়ু পরিবর্তনেরও বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছেন তারা।
দৃষ্টিভঙ্গির মানসিকতা থেকেই হীনম্মন্যতা ও হিংস্রতার জন্ম। আধুনিক যুগে নিজেদের কর্মদক্ষতা প্রমাণ ও সক্ষমতা প্রকাশে শহুরে নারীরা নানাবিধ পেশায় নিজেদের সম্পৃক্ত রেখে মেধার অনন্য ছাপ রাখছেন। বহুমাত্রিক পেশার বর্ণিল আলোকচ্ছটায় কিছু লোকের দৃষ্টিকটু মন্তব্যে কর্ণপাত না করে এগিয়ে যাচ্ছে সামনে একটি সমতাভিত্তিক অনিন্দ্য সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে। দেশের সামগ্রিক কল্যাণে আরও উচ্চতর গবেষণায় নারীদের সম্পৃক্ত করতে পারলে নতুন নতুন তথ্য ও নির্দেশনায় দেশ ও জনপদ হবে সমৃদ্ধ।