ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১

যাতায়াত সুবিধায় বাইক

মো. জসিম উদ্দিন

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

যাতায়াত সুবিধায় বাইক

উন্নয়নে অর্থনৈতিক, সামাজিক সমৃদ্ধির অন্যতম পূর্বশর্ত হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। দেশের আর্থসামাজিক একটি দক্ষ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একদিকে যেমন যাতায়াতের সুবিধা বাড়িয়েছে, অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনার হারও উদ্বেগজনকভাবে বাড়িয়েছে। বিশেষ করে, বেপরোয়া গতি, ট্রাফিক আইন অমান্য এবং অতিরিক্ত হর্ন বাজানোর ফলে পথচারী ও অন্যান্য যানবাহনের চালকদের জন্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৬,৫২৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩,৬৯৬ জনই মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারের আরোহী কিংবা চালক, যা মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশ। আরও একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে ২,৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ২,৫৭০ জন নিহত এবং ৩,১৫১ জন আহত হয়েছেন। মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৬.৬ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন: বেপরোয়া গতি অর্থাৎ তরুণ চালকদের মধ্যে অতিরিক্ত গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর প্রবণতা বেশি, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। আবার ট্রাফিক আইন অমান্য অর্থাৎ অনেক চালক ট্রাফিক সিগন্যাল, লেন ডিসিপ্লিন ইত্যাদি মানেন না, ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও হেলমেট ব্যবহার না করা অর্থাৎ হেলমেট ব্যবহারে অবহেলা করার কারণে দুর্ঘটনার সময় মারাত্মক আঘাতের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে শব্দদূষণের ভয়াবহতা যেমন অতিরিক্ত হর্ন বাজানো শুধু শব্দদূষণই সৃষ্টি করে না, বরং অন্যান্য চালক ও পথচারীদের বিভ্রান্ত করে, যা দুর্ঘটনার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী সুফিয়ান নেওয়াজ বলেন, ‘মোটরসাইকেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন, এটি চালানোর জন্য বিশেষ দক্ষতা ও সচেতনতার প্রয়োজন। এদেশে মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে এগুলোর বড়ই অভাব।’ এসব সমস্যার সমাধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সামাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অর্থাৎ চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রচারণা চালানো, আইন প্রয়োগের কঠোরতা যেমন ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার যেমন হেলমেট ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা এবং সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থাৎ মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন ও সড়কের মানোন্নয়ন করা অতীব জরুরি। পরিশেষে বলা যায় যে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চালক, পথচারী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। নিয়ম মেনে চলা, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা ও বেপরোয়া চালকদের লাগাম টানা সম্ভব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

×