ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

গতি কমান জীবন বাঁচান

হুমায়ুন আহমেদ নাইম

প্রকাশিত: ২০:২৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

গতি কমান জীবন বাঁচান

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সড়কে মোটরবাইকের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বাইক চালানোর প্রবণতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বেপরোয়া চালনার ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বেপরোয়া বাইক চালনা ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। তরুণদের জন্য বাইক চালানো এখন আর কেবল যাতায়াতের মাধ্যম নয়; এটি স্টাইল, সাহস এবং স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তবে এই স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তারা প্রায়ই ট্রাফিক আইন অমান্য করে। উচ্চ গতিতে বাইক চালানো, ট্রাফিক লাইটের তোয়াক্কা না করা এবং রাস্তা থেকে রাস্তা রেসিং করা যেন তাদের কাছে একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। তবে এর ফলাফল ভয়াবহ। তরুণদের এই উচ্ছ্বাসের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে, যা জীবনকে অকালেই থামিয়ে দেয়। ট্রাফিক আইন অমান্য করে রেসিংয়ের প্রবণতা এই সমস্যার মূল। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ট্রাফিক আইন কার্যকর থাকলেও এর প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। অধিকাংশ বাইকার হেলমেট পরেন না এবং লাইসেন্স বা নিবন্ধন ছাড়াই বাইক চালান। অভিভাবকদের নজরদারির অভাবও একটি বড় কারণ। অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বেপরোয়া চালনার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন না। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা সংস্থা ও ব্র্যাকের গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালে মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫% ঘটেছে মোটরবাইকের কারণে। দুর্ঘটনায় নিহতদের ৫০% এর বয়স ছিল ১৮-৩০ বছরের মধ্যে। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে অতিরিক্ত গতি, ট্রাফিক আইন না মানা, এবং অদক্ষ চালকের কারণে। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন বাইকার দুর্ঘটনার শিকার হন, যার মধ্যে অনেকেই প্রাণ হারান।বেপরোয়া বাইক চালনার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা কেবল মৃত্যুর কারণ নয়, এটি শারীরিক ও মানসিক ট্রমারও কারণ। পাশাপাশি, চিকিৎসা খরচ এবং পরিবারের আর্থিক সংকট দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি করে। এই সংকট মোকাবিলায় ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, লাইসেন্স এবং হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, স্কুল, কলেজ ও সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা ও প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। শহর এলাকায় বাইকের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ এবং ট্রাফিক পুলিশ ও সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করাও গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকদেরও উচিত তাদের সন্তানের বাইক চালানোর ওপর নজরদারি রাখা এবং নিরাপদ চালনার শিক্ষা দেওয়া। এই সমস্যার সমাধানে সরকার, সমাজ এবং অভিভাবকদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমেই আমরা সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে

×