ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

হেলমেট পরুন

সাদিয়া আক্তার

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

হেলমেট পরুন

সড়কের ত্রুটিজনিত কারণে  যত না দুর্ঘটনা ঘটে, এর চেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে। সাম্প্রতিক সময়ে ভাড়ার বিনিময়ে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েই চলেছে। ফলে চালকদের মধ্যে পালা দিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর চিত্র সড়কে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এদের দ্রুত মোটরসাইকেল চালানোর মানসিকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়সী তরুণদের বেশি বিপাকে পড়তে দেখা যায়। এরা নবীন বাইকার হওয়ার কারণে না থাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ; আর না গাড়ি চালনায় হুঁশ। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে কার আগে কে যাবে- এ নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখতে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে। রাস্তাঘাটে কোথায় কি হতে পারে এসব চিন্তা না করে দিব্যি ওভারস্পিডে আঁকাবাঁকা করে বাইক চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাই দুর্ঘটনার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এ সম্পর্কে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেলের অতিরিক্ত গতিই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।’ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এমন পরিসংখ্যান নিয়ে প্রায় প্রতি মাসেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। কিন্তু দুর্ঘটনা এড়াতে আইনি কাঠামোর বাধ্যবাধকতা এবং সচেতনতা তেমন লক্ষ্য করা যায় না। তাই এরূপ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির (বিজেকেএস) প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত বছরে ৩২৯টি মোটরযান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৫৭০ জন এবং আহতের সংখ্যা ৩ হাজার ১৫১ জন। (টিসিবি রিপোর্ট) বিভিন্ন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, এই দুর্ঘটনার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। গত দশকে দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা যেমন বেড়েছে সেই সঙ্গে দুর্ঘটনায় মৃত্যুহারও আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। মোটরসাইকেল চালকরা প্রতিনিয়ত ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করছে। ফলস্বরূপ চালকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অহরহ। সড়কের উল্টো দিক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা সর্বাধিক। তাই দুর্ঘটনা কমাতে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে চালক এবং আরোহী উভয়কে সচেতন করতে হবে। ট্রাফিক আইনের সব বিধান মেনে সতর্কতার সঙ্গে মোটরসাইকেল না চালালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি যে বেশি থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই দুর্ঘটনার প্রথম শিকার যে চালকদেরই হতে হয় এই বিষয়েও প্রচার চালাতে হবে। মোটরসাইকেল চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে। লাইসেন্সবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। মোটরসাইকেল চালক ও অন্য আরোহীকে অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে; ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়াটিও যথাযথ হওয়া দরকার। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরসাইকেল চালানোয় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। তাছাড়া চালকদের নির্ধারিত গতিসীমার মধ্যে মোটরসাইকেল চালাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়তো আমাদের চালকদের নতুন জীবনের পথ সুগম করবে। এসব নিয়মকানুন মানার জোরদার করতে পারলে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা কমানো যাবে বলে আমরা আশাবাদী। সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।

কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, কিশোরগঞ্জ থেকে

×