বাইকের কারণে অতিষ্ঠ হচ্ছে পাড়া-মহল্লার মানুষ। তীব্র আওয়াজ আর গতি বাড়ানোর প্রবণতায় বিষিয়ে তুলছে মানুষের জীবন। বিশেষ করে দ্রুতগতিতে যখন পাশ দিয়ে তীব্র আওয়াজে যাচ্ছে, তখনই পথ-ঘাটে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। ঝড়ো বেগে বাইক চালানো শুধু শহরে নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে, আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েই চলেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এমন কোনো একটি দিন নেই, যেদিন আমাদের কানে আসেনি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গাইডলাইন অনুসরণ না করায় মোটরসাইকেল এখন প্রাণঘাতী বাহনে পরিণত হয়েছে। উচ্চগতির মোটরসাইকেল বেপরোয়াভাবে চালাতে গিয়েই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে টিনএজরা। দুর্ঘটনার কবলে পড়াদের বড় একটা অংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। এমন অল্পবয়সী শিশু-কিশোরদের সড়কে যানবাহন চালানোর কোনো বৈধতা নেই।
বর্তমানে কিশোর ও যুবকদের কাছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সর্বশেষ ভার্সনের মোটরসাইকেল বেশ লোভনীয়। দুর্ঘটনার পরিণাম জানা সত্ত্বেও অনেক সচেতন অভিভাবক তাদের ১২-১৭ বছর বয়সী কিশোর সন্তানটিকে কিনে দিচ্ছেন মোটরসাইকেল। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত কিশোররা তিন-চারজন করে বন্ধু নিয়ে বাইক চালাচ্ছে সর্বোচ্চ গতিতে। সময়ে সময়ে তারা দল বেঁধে বাইক প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে। আবার কেউ কেউ মোটরসাইকেল অতিরিক্ত গতিতে চালিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছে টিকটকের জন্য। তখনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে অধিকাংশ চালক নিয়ম মানেন না। ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে ধারণা না থাকায় শিশু-কিশোররা মোটরসাইকেল পেলেই নিয়ম মানছে না সড়কের। এতে যেমন মোটরসাইকেলে শিশু-কিশোরদের প্রাণ ঝরছে সড়কে, অন্যদিকে পথচারী কিংবা অন্য যানবাহন চালকরাও পড়ছেন বিপদে। পাড়া-মহল্লায় কিংবা মূল সড়কেও দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক বড় ভাইয়ের প্রভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়া গতিতে রাজনৈতিক মহড়া ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে কিশোর-যুবকরা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অনেক সময় ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন এসব কিশোর-যুবকের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুফাঁদ মোটরসাইকেল।
মোটরবাইক দুর্ঘটনা শীর্ষে থাকার প্রধান কারণ হেলমেট ব্যবহার না করার প্রবণতা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও বেপরোয়া ড্রাইভিং। আর অদক্ষ এবং লাইসেন্সবিহীন চালক তো আছেই। যাত্রীরা যানবাহনের নিশ্চয়তা পেতে মোটরসাইকেলে চেপে বসছে। কিন্তু একটি মহানগরীতে কী পরিমাণ গাড়ি চলবে এর সমীক্ষা থাকা দরকার। সমীক্ষা না থাকায় তাতে নিয়ন্ত্রণও নেই। সন্তানের আবদারে তুলে দেওয়া হচ্ছে মৃত্যুবাইক। যত বেশি গতি, তত বেশি ক্ষতি হচ্ছে উঠতি বয়সী যুবকদের। এজন্য অবিভাকদের সচেতন হতে হবে। কিশোর সন্তানদের মোটরবাইক দেওয়ার আগে ড্রাইভিং শেখার লাইসেন্স করে দিন। এক্ষেত্রে ট্র্যাফিক পুলিশকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। বিআরটিএ অফিসকে লাইসেন্স প্রদানে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
উত্তর কাটিয়া, সাতক্ষীরা থেকে