ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

সড়ক দাপানো প্রাণঘাতী বাহন

সিদ্দিকা ফেরদৌস তরু

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫

সড়ক দাপানো প্রাণঘাতী বাহন

রাস্তায় বর্তমানে প্রাণঘাতী অন্যতম বাহনের নাম মোটরসাইকেল। যদি বলি রাস্তার রাজা সেটা বলা মোটেই ভুল হবে না। কারণ এতে যেই চড়ে সেই যেন নিজেকে রাজা মনে করে। পত্রিকায় তাদের লাটভাই হিসেবেও সম্বোধন করা হয়। বেপরোয়াভাবে নিয়মবহির্ভূত উচ্চগতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটছে। আর এটা বেশ লক্ষণীয় যে, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যাত্রীদের বেশিরভাগই কম বয়সী ও শিক্ষার্থী। তাদের উচ্চগতিতে মোটরসাইকেল চালানো শুধু তাদের জন্য হুমকি নয়, পথচারীদের জন্যও জীবন আশংকার সৃষ্টি হতে পারে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে এরকম কমবয়সী এমন কি দেখা গেছে অনেকের বয়স ১৮ এর নিচে, এরা কিভাবে বাহনটি চালানোর সুযোগ পায়? তাছাড়া তাদের চালানোর ভঙ্গিমা বেপরোয়া ও বেআইনি। কারণ ট্রাফিক আইন বলে একটা কথা আছে এটা তারা কতটুকু মেনে চলে? আমি বলছি না যে, বয়স্ক মানুষেরা মোটরসাইকেল চালায় না। অবশ্যই চালায় তবে তারা নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট গতিতে চালায়।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যত মানুষ নিহত হয়েছে তার বেশিরভাগই শিশু-কিশোর। আজকালকার প্রজন্ম এডভেঞ্চারপ্রিয় বলে মোটরসাইকেল চালানোটাকেও এডভেঞ্চার হিসেবে নিয়েছে। তাই উচ্চগতিতে চালানো যোগ্য ও সম্মানের মনে করে। আরো একটা ব্যাপার লক্ষণীয়, চৌরাস্তা বা তিনরাস্তাগুলোতে চলতি যানবাহনের বিপরীত দিক থেকে আসা উচ্চগতিতে ঘাতক বাহন মোটরসাইকেল ঢুকে পড়ে। যার ফলে শুধু যানবাহনে থাকা যাত্রীই নয়, মোটরসাইকেল চালক উভয়েরই প্রাণহানী ঘটতে পারে। একজন যাত্রী হিসেবে আমি নিজেই বহুবার এরকম ঘটনার সাক্ষী। আল্লাহপাকের মহিমায় বেঁচে গেছি।
তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন উৎসবে, হতে পারে ঈদ পুজা বা অন্য কোনো উৎসবে, মোটরসাইকেল চালকেরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এক সাইকেলে তিন-চার জন ওঠে। তারা সড়ক-মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়ায় কোনো নিয়মনীতি ছাড়া। হেলমেট পরার চরম অনীহার ফলে দুর্ঘটনার যদি শিকার হয়, বেঁচে থাকার আশা কম থাকে। এখানে প্রশ্ন ট্রাফিক পুলিশ কি করে? এরকম অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা সত্যি কষ্টের। তাছাড়া বড়বড় গাড়ির সাথে পাল্লা দেবার প্রবণতাও লক্ষণীয়। ইদানিং দেখা যায় চলন্ত অবস্থায় সেলফোনে কথা বলতে, যা বেআইনি এবং অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু চালকেরা অনায়াসে এক হাতে হ্যান্ডেল ধরে অপর হাতে মোবাইলে নিশ্চিন্তে কথা বলে। যার ফলে মনোযোগ মোবাইলে থাকায় সামনে আসা যানবাহন কিংবা হোঁচট খেয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। অনেক সময় আবার দেখা যায় ভারী পণ্য মোটরসাইকেলে বহন করে। যার ফলে বেসামাল হয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় জীবনহানী কমাতে গেলে অবশ্যই লক্ষ্য হবে ১৮ বছরের নিচে যাতে এই বাহন চালাতে না পারে বা নিবন্ধন না পায়। গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া চাই। হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অনেক সময় আইন ভাঙলে ট্রাফিক পুলিশ নামমাত্র কিছু ঘুষ বা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়, এটাকে কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উভয়কে আইনের আওতায় আনতে হবে।

দক্ষিণ ধানঘড়া, গাইবান্ধা থেকে

×