মার্কো রুবিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭২তম সেক্রেটারি অব স্টেট
মার্কো রুবিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭২তম সেক্রেটারি অব স্টেট বা আমাদের পরিভাষায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন। সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে এই নিয়োগ অনুমোদিত হয়েছে, যা তার কর্মদক্ষতার প্রতি সর্বদলীয় আস্থার প্রতিফলন।
এটি বিস্ময়কর যেখানে সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের ৪৫টি আসন আছে, স্বতন্ত্র আসন আছে ২টি এবং রিপাবলিকানদের ৫৩টি, সেখানে রুবিওর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ৯৯ জন। কেউ তার বিপক্ষে ভোট দেননি। অর্থাৎ ১০০টির মধ্যে ৯৯টি ভোটই তিনি পেয়েছেন। নতুন এই ভূমিকায় রুবিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছেন যা মার্কিন সামরিক ক্ষমতা শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক জোট পুনর্মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেবে।
দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন, বিশেষত অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং জাপানের (যা কোয়াড নামে পরিচিত) সঙ্গে, যাতে চীনের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। এই অগ্রাধিকার ট্রাম্প প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্য বাস্তবায়নের দৃঢ়তাকেই প্রতিফলিত করছে।
মার্কো আন্তোনিও রুবিও ১৯৭১ সালের ২৮ মে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা-মা কিউবা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন আমেরিকান স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। তার বাবা একজন বার্টেন্ডার ছিলেন এবং তার মা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে খুবই সাধারণ কাজ করেছেন, যা তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে এবং অধ্যবসায়ের গুরুত্ব শিখিয়েছে।
রুবিও ১৯৯৩ সালে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে ১৯৯৬ সালে মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি লাভ করেন। তার শ্রমজীবী অভিবাসী পরিবারে বেড়ে ওঠা তাকে আমেরিকান সমাজের সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি দিয়েছে বলে তিনি নানা সময়ে উল্লেখ করেছেন। রুবিওর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ফ্লোরিডা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে, যেখানে তিনি ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে স্পিকার হন।
২০১০ সালে তিনি ফ্লোরিডা থেকে মার্কিন সিনেটে নির্বাচিত হন এবং রিপাবলিকান পার্টির অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। শুরুতে তিনি টি পার্টি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি একজন শক্তিশালী নীতিনির্ধারক হিসেবে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থন হন। উল্লেখ্য, টি পার্টি রক্ষণশীল দলের ভেতর শুরু হওয়া একটা উদ্যোগ ছিল, যার মাধ্যমে তারা ট্যাক্স কমানো, সরকারের ব্যয় হ্রাস, জাতীয় ঋণ কমানো, ছোট আকারের সরকার পরিচালনা ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চকিত হতেন।
তাদের আন্দোলন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘ওবামাকেয়ার’ পলিসিকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। যদিও এর সঙ্গে জড়িত রাজনীতিবিদরা একে জনমানুষের আন্দোলন অভিহিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অনেকেই জানতেন এটি মূলত তৃণমূল আন্দোলনের আঙ্গিকে অভিজাতদেরই নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।
পরবর্তীতে, ২০১৩ সালে রুবিওর সমন্বিত অভিবাসন সংস্কারের পক্ষে সমর্থন কিছু রক্ষণশীল গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, রুবিওর অবস্থান বিবর্তিত হয়েছে, বিশেষত অভিবাসন এবং পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে, যেখানে তিনি আরও ‘হকিশ’ (ঐধশিরংয) অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
যারা এই বিষয়টি নতুন জানছেন, তাদের জন্য বলি, রাজনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতিতে ‘হকিশ’ এবং ‘ডোভিশ’ শব্দগুলোর উৎপত্তি পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতীকী অবস্থান থেকে, যেখানে যুদ্ধ এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে এগুলো ব্যবহৃত হয়।
বাজপাখি (হক), যা তার আক্রমণাত্মক ও শিকারী প্রকৃতির জন্য পরিচিত, পশ্চিমা বিশ্বে সামরিক শক্তি এবং হস্তক্ষেপমূলক নীতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে ঘুঘু (ডাভ), যা শান্তির প্রচলিত প্রতীক, কূটনীতি এবং সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের প্রতিনিধিত্ব করে। এই পরিভাষাগুলো বিশেষভাবে শীতল-যুদ্ধকালীন সময়কালে জনপ্রিয়তা পায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে, যখন নীতিনির্ধারকদের সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনার বিভিন্ন পন্থা বর্ণনা করতে এগুলো ব্যবহার করা হতো।
হকিশ ব্যক্তিত্বরা, যেমন- প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং সংঘাতপূর্ণ কৌশল সমর্থন করতেন। সেখানে ডোভিশ নেতারা, যেমনÑ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার পক্ষে ছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ইরান পারমাণবিক চুক্তি (ঔঈচঙঅ) সামরিক চাপের পরিবর্তে আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সীমিত করার লক্ষ্যে করা হয়েছিল।
ডোভিশ নেতারা উত্তেজনার পরিবর্তে মানবিক প্রচেষ্টা এবং কূটনৈতিক সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিকার দেন। যেমনÑ উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে সংলাপভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামরিক বাজেট হ্রাস করে দেশীয় সামাজিক প্রকল্পে বিনিয়োগ। সময়ের সঙ্গে এই শব্দগুলো প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
হকিশ রাজনীতিবিদ হিসেবে মার্কো রুবিও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং সামরিক শক্তি বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ব্যবহারের পক্ষে কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ, চীনের প্রভাব মোকাবিলায় রুবিওর কঠোর নীতিগুলো বাণিজ্য সীমাবদ্ধতা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক মিত্রদের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেবে বলে প্রতীয়মান হয়। তদ্রƒপ, ইরান পারমাণবিক চুক্তির বিরোধিতার মাধ্যমে তিনি বিশ্বাস করেন যে, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা প্রতিরোধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
ইতিহাসে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো হকিশ ব্যক্তিত্বরা তাদের নীতিবিরুদ্ধ শক্তির বিপক্ষে গণতন্ত্র প্রচারের নামে যুদ্ধ বিগ্রহে আগ্রহী ছিলেন, যা ইরাক ও আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছিল। রুবিওর হকিশ দৃষ্টিভঙ্গি, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, তার বিপরীতে ডোভিশ নীতিনির্ধারকরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন বলেই মনে হচ্ছে। রুবিও তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাপথে মূলত রক্ষণশীল আদর্শই অনুসরণ করেছেন।
তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে ফেডারেল বাজেট ভারসাম্যপূর্ণ করার পক্ষে এবং মনে করেন যে, শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা আমেরিকার নিরাপত্তার মূলভিত্তি। সামাজিক বিষয়ে, তিনি গর্ভপাতের কড়া বিরোধী; এমনকি ধর্ষণ ও অজাচারের ক্ষেত্রেও গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী। শুধু মায়ের জীবনের ঝুঁকির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের অনুমোদন করেন রুবিও।
তিনি ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্টের’ বিরোধিতা করেন এবং বাজারভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সমাধানের পক্ষে সমর্থন জানান। পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে আপাত দৃষ্টিতে রুবিও কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে বলেই মনে হয় এবং জনসমক্ষে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বিশেষভাবে চীনের হুমকি সম্পর্কে সোচ্চার এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বিশ্বব্যাপী প্রভাব মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপের পক্ষে।
রুবিও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে এবং ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে পরমাণু চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদে এসব লক্ষ্য অর্জনে তিনি এগিয়ে যেতে যা যা করা দরকার তাই করবেন বলেই মনে হচ্ছে। তার অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈশ্বিক মঞ্চে আমেরিকার শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বাংলাদেশ বিষয়ে রুবিওর অবস্থান খুব একটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না এখনো। এটি খুবই স্বাভাবিক তার সরকার মাত্রই দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু এটি মনে রাখা দরকার ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদা পেয়েছেন এবং প্রথম সারিতে আসন পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় গ্রহণ এবং ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তার প্রতি সমর্থন, পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতি বিরোধিতা ইত্যাদি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনা ও অবনতির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের ভারত-মার্কিন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে, মার্কো রুবিও বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিতে পারেন। এতে তিনি শেখ হাসিনার বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারতের সঙ্গে সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করতে পারেন।
এছাড়া, দুদেশের মধ্যে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা নিরসনে রুবিও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে পারেন, যা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। রুবিওর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ ভারতের জন্য ভালো খবর। কারণ, তিনি আগেও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য আইনের প্রস্তাব করেছিলেন।
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি, বিশেষ করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে ভারতের সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ, একটি জটিল কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সম্পর্কের কারণে, যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করবে।
তবে এটিও মনে রাখা দরকার যে, মার্কো রুবিও অতীতে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নানা সামাজিক উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। ইউনূসের প্রতি তার এই সমর্থন মূলত মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থনের কারণে ছিল। ২০১২ সালে রুবিও ড. ইউনূসের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেন, যখন তৎকালীন সরকার গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণের চেষ্টা করছিল। ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকে ড. ইউনূসের প্রভাব এবং এর নেতৃত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন।
রুবিও এবং অন্য আমেরিকান কর্মকর্তারা সেই সময় বাংলাদেশ সরকারের কাছে বাংলাদেশের জন্য ড. ইউনূসের অবদান, বিশেষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংক মডেলের কথা বিবেচনা করতে অনুরোধ করছিলেন। এই সমর্থন তখন রুবিওর দক্ষিণ এশিয়ায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং মানবাধিকার প্রচারের বৃহত্তর অবস্থানের অংশ ছিল।
তিনি আর্থিক স্বাধীনতার মাধ্যমে জনগণকে ক্ষমতায়িত করার পক্ষে ছিলেন, যা ড. ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা এবং ক্ষুদ্রঋণ কর্মকা-ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটি কেবল রুবিওর দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করলেই হবে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
রুবিওর নেতৃত্বে আরও যে কয়েকটি বিষয়ে বিশ্ব ইতোমধ্যে আলোড়িত হয়েছে, তার অন্যতম হচ্ছে তৃতীয় লিঙ্গ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ মার্কো রুবিও ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, ‘ঢ’ লিঙ্গ চিহ্নযুক্ত পাসপোর্টের আবেদন এবং বিদ্যমান পাসপোর্টে লিঙ্গ পরিবর্তনের আবেদন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদেশে বলা হয়েছে যে, সরকারি ডকুমেন্টে শুধু ব্যক্তির জন্মগত অথবা প্রাকৃতিক লিঙ্গ (পুরুষ বা নারী) ব্যবহৃত হবে, লিঙ্গের ‘সামাজিক’ পরিচয়ের পরিবর্তে। রুবিও তার নির্দেশনায় উল্লেখ করেছেন যে, সরকারি ডকুমেন্টে এখন থেকে নারী বা পুরুষ ব্যবহার করতে হবে এবং তিনি স্টাফদের ‘ঢ’ চিহ্নযুক্ত পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত করতে এবং যে কোনো লিঙ্গ পরিবর্তনের আবেদনও স্থগিত করতে বলেছেন।
এই নীতি নতুন এবং পুরনো পাসপোর্ট উভয়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে বাইডেন-কামালা শাসনামলে ‘ঢ’ লিঙ্গ চিহ্নযুক্ত পাসপোর্ট জারি করা হয়েছিল, যা এখনো বৈধ রয়েছে, তবে এগুলোর নবায়ন সম্পর্কিত নির্দেশনা পরবর্তীতে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়াও দায়িত্ব নিয়েই রুবিও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আলাপে রুবিও বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে না এবং তাইওয়ান ইস্যুটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হওয়া উচিত। রুবিও দুই দেশের সম্পর্কের যথাযথ পরিচালনার মাধ্যমে বৈশ্বিক শান্তি রক্ষা এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য খোলামেলা আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
জবাবে ওয়াং বলেন যে, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম বা প্রতিস্থাপন করতে চায় না, তবে তার নিজের উন্নয়নের অধিকার রক্ষা করতে চায়। ফোনালাপটি সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের মধ্যেকার এক আলোচনার পরে হয়েছে, যেখানে তারা কৌশলগত যোগাযোগ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যদিও এই ফোনালাপ দুটি দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার সংকেত দেয়, তবে ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে চীনই ট্রাম্প-রুবিও প্রশাসনের মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে হচ্ছে।
২৫ জানুয়ারি ২০২৫
[email protected]