ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫

রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা

সম্পাদকীয়

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সারাবিশ্বে বৈদেশিক সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে। রবিবার ঢাকার যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ২০১৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রেবেশের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সহায়তা হিসেবে খাদ্যসহ নানাবিধ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যৌথ সাড়াদান প্রকল্প জেআরপি নামের বৈশ্বিক মানবিক সহায়তা প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে শীর্ষ দাতা দেশের ভূমিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 
২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য ১৯১ কোটি ডলারের (প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা) সহায়তা দিয়েছে দেশটি। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ডব্লিউএফপি যে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার অন্তত ৮০ শতাংশ জোগান দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে প্রতিবছর জেআরপিতে বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা যে পরিমাণ অর্থের জোগান দিয়ে থাকে, গড়ে এর অর্ধেকের বেশি দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।

তদুপরি সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা করার নিমিত্ত অনুরোধ করে থাকে। ফলে, আপাতত ৯০ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞার নতুন মার্কিন সিদ্ধান্তের কারণে কক্সবাজারের সার্বিক কার্যক্রমে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিলেও খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা অব্যাহত থাকায় তেমন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তবে উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে উন্নয়ন কার্যক্রমে কিছু কাটছাঁট করতে হতে পারে। উল্লেখ্য, বিদেশী দাতা সংস্থাগুলোর ডোনেশন কমেছে আগে থেকেই।  
তবে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রবেশের ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে এও বলা হয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ আরও বাড়তে পারে।

সে দেশে ক্ষমতাসীন সামরিক  জান্তা দীর্ঘদিন থেকে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দমনের নিমিত্তে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত ও কোণঠাসা। তদুপরি সীমান্তে দুর্নীতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ঢুকছে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের দুর্গম পার্বত্য ও জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চল।

সেজন্য রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতিহত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ আশ্রিত কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে এমনিতেই বিপর্যন্ত ও দিশাহারা। গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও ঝুলে আছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিম-লের চাপ সত্ত্বেও।

সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে মিয়ানমার সরকারকেই। সে অবস্থায় মিয়ানমারে চীন ও ভারতের প্রভাব এবং ভূরাজনৈতিক বিষয়টি আমলে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যায় এগিয়ে আসতে পারেন, যেটি হবে বাংলাদেশের জন্য অনুকূল।

×