সম্পাদকীয়
দেশে নানা ধরনের খাদ্যপণ্যের মজুতের কথা শোনা গেলেও এই প্রথম আনুষ্ঠানিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা গেল আন্তর্জাতিক বিমান ফ্লাইটের টিকিট মজুতদারির কথা। বিষয়টি কৌতুকের মতো শোনালেও এটিই বাস্তবতা। বিশে^র আর কোনো দেশে এ ধরনের মজুতদারির কথা শোনা গেছে বলে আমাদের জানা নেই। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলা ভালো, বিশেষ একটি সিন্ডিকেট বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার।
তাদের নাম গিনেস বুকে তোলার মতোই। রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও এয়ারলাইনস কর্তৃক যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকিট বিক্রি ও মজুতদারি বন্ধের দাবি জানিয়েছে ট্র্যাভেল এজেন্টদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আটাব)। শিক্ষার্থী, বিদেশগামী শ্রমিকদের স্বস্তি দিতে বাল্ক টিকিট বিক্রি ও মজুতদারি বন্ধ, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণে বেবিচকসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বর্তমানে ৬০ হাজারের বেশি সিট এয়ারলাইন্সগুলো ব্লক করে রেখেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব সিট এখনই ওপেন করে দিলে উদ্ভূত সংকট দূর হয়ে যাবে। এয়ারলাইন্সের ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি ওপেন রাখতে হবে। জিডিএস/এনডিসিÑ এ সিট সেল করার নির্দেশ প্রদান এবং সকল এজেন্সিকে টিকিট বিক্রি করার সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন রুটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করারও দাবি জানিয়েছে আটাব। এয়ারলাইন্স কর্তৃক হিডেন ফেয়ারে গ্রুপ টিকিট/প্রাইভেট ফেয়ারে টিকিট বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দানেরও দাবি জানানো হয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি। মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে একটি বড় কারণ নামবিহীন গ্রুপ টিকিট বুকিং। অভিযোগ আছে, কতিপয় মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইন্স তাদের পছন্দের কিছু সংখ্যক এজেন্সির নামে কোনো প্রকার পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র ও প্রবাসগামী শ্রমিকদের কোনো প্রকার বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা
ছাড়াই শুধু ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট ২/৩ মাস অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরিপূর্বক সিট ব্লক করে রাখে। এভাবে টিকিট মজুতদারি করা হয়। যার ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, আসন সংকট দেখা দেয়, টিকিট মূল্য ২০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ, কখনো দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং বিদেশগামী শ্রমিক, শিক্ষার্থী, প্রবাসীরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন। আমরা মনে করি, আটাবের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক।
আশা করব, সরেজমিন অনুসন্ধান সাপেক্ষে এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও এয়ারলাইন্স কর্তৃক যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকিট বিক্রি ও মজুতদারি বন্ধে সরকার জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবে। এসঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা চাই।