অর্ধশতাব্দীর বেশি ইতিহাসে সম্ভবত বাংলাদেশে সর্বাধিক চর্চিত বিষয় হলো ১৯৭২-এর সংবিধান। এ সংবিধান সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনা ও জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বানিয়েছে। চারটি মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে প্রণীত এ সাংবিধান। একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি ও স্বপ্ন নিয়ে সে সংবিধানের যাত্রা। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে চতুর্থ সংশোধনী (জানুয়ারি, ১৯৭৫) পাসের মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল কায়েমে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়।
বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা। নাগরিকদের বাক্্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্থগিত করা হয়। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের মাত্র ২৪ বছরের ব্যবধানে পাকিস্তানি শাসন-শোষণ ও বঞ্চনার নাগপাশ কাটিয়ে যে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিব নেতৃত্ব দিলেন, তিনি কেন রাষ্ট্রপতিতে রূপান্তরিত হলেন? ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মূলত ছিল জান্তা শাসন। দেশের সরকার কাঠামো কিছুটা গণতান্ত্রিক মোড়কে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি শাসন ছিল। এ সময়ে দেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থায় কিছু ইতিবাচক সংস্কারও হয়। যদিও তখন জেনারেলদের পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে কিছুটা গণতন্ত্রের ফ্লেভার দেওয়ার প্রচেষ্টা ছিল।
প্রকৃত গণতন্ত্র ছিল অনুপস্থিত। জনগণ ভোটাধিকারের স্বাদ পায়নি। প্রতিটি নির্বাচনই ছিল সরকারের পক্ষে সাজানো-গোছানো এবং নিয়ন্ত্রিত। পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছিল প্রভাবিত। জেনারেলদের সংবিধান সংস্কারে উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো ভিন্নমত দমনের অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বহুত্ববাদের প্রচলন। ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের পর মাত্র ৩ বছর ৮ মাসের মাথায় শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম পরিণতি ঘটে। আগস্ট ট্র্যাজেডির পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ মনে করেন, তার অন্যতম হলো বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা, দল ও সরকারি দপ্তরগুলোতে পারিবারিকীকরণ, লুটেরা ও সন্ত্রাসীদের শাসন ও দলীয় উচ্ছৃঙ্খল তরুণদের নিয়ন্ত্রণ না করা। চারটি অনুগত সংবাদপত্র রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
শেখ মুজিব কর্তৃক নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয় সেনাশাসনে। এ সময়ে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বিকাশ ও বিস্তার ঘটে। বিএনপি গণমুখী দল হতে পারলেও এরশাদের জাতীয় পার্টি পিছিয়ে পড়ে। এরশাদ ৯ বছর ক্ষমতায় থেকেও তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি মূলধারার রাজনৈতিক অঙ্গনে। দুই জেনারেলের দল গঠনের মাধ্যমে একদলীয় সংস্কৃতি থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ ঘটে। মাঠের রাজনীতিতে তৈরি হয় প্রতিযোগিতা। জেনারেলদের শাসনামলে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, চারটি মৌলিক নীতির পরিবর্তন ও পরিমার্জন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন হয়। যার ফলে, অবাঙালি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পাহাড়ি উপজাতি জনগোষ্ঠী হয় সন্তুষ্ট। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্মের স্বীকৃতি দান। ফলে, দেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি দলগুলো সন্তুষ্ট হয়। জেনারেলদ্বয় জনগণের পালস বুঝে কোপ দেন। তারা এ পরিবর্তন যতটা না ধর্মীয় কারণে করেছে, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক স্বার্থই ছিল অগ্রগণ্য।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, প্রতিটি শাসকগোষ্ঠী আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কায়েমি স্বার্থে নিজেদের পক্ষে রায় নিয়েছে যুগের পর যুগ। তাদের হীন স্বার্থের অনুকূলে আইন পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন করেছে কালে কালেÑ এ নতুন কিছু নয়। উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির উদ্ভব, বিকাশ ও বিস্তার না ঘটলে, জবাবদিহির প্যারামিটার ইস্পাতকঠিন না হলে, এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটবে বাংলাদেশে। যে জন্য অনুন্নত দেশগুলোতে সাধারণত কাগুজে গণতন্ত্রই বিদ্যমান থাকে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী ’৭২-এর সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন, এমন প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে। প্রথম দফা, ১৯৭২-এর সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনা। তারা এ সংবিধানকে বলেছে মুজিববাদী সংবিধান। ইতিহাস পর্যালোচনায় এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নেতৃত্বের সম্মোহনী শক্তির কিছুটা অপব্যবহার করেছিলেন। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন সংবিধান সংশোধনে। সংবিধান সংশোধনের নিয়মসংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ১৪২ ছিল ত্রুটিপূর্ণ। সংবিধান সংশোধনে বড় পরিসরে গণভোটের মাধ্যমে জনমত যাচাইয়ের বিষয়টি ছিল অনুপস্থিত। অনুচ্ছেদ ৭০-এ নিজ দলের বিপক্ষে ভোট প্রদানে বাধানিষেধের কারণে সংসদে বিরোধী মতের জন্ম হয়নি।
শাসক দল আওয়ামী লীগেও গণতন্ত্র চর্চায় যথেষ্ট অভাব ছিল। দলনেতার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের অনৈতিক চাপ ছিল ‘এক নেতা এক দেশ’ পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনার পক্ষে। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর সাত মাসের মাথায় একদলীয় বাকশাল কায়েমে নজিরবিহীন খেসারত দিতে হয়, যা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে এক নির্মম বাস্তবতায় মুজিব পরিবারের হত্যাকাণ্ড। সাড়ে পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনোত্তর বাস্তবতায় আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ বনির্মাণের লক্ষ্যে, নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় জীবনে জনপ্রতিনিধিত্ব কার্যকর, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে বিদ্যমান সংবিধান পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করতে, গত বছর ৬ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক প্রফেসর ড. আলী রিয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। এ কমিশন দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক আলোচনা শেষে সম্প্রতি নিম্নোক্ত বয়ান তুলে ধরেছে।
সংস্কার প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, একটি কার্যকর গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার ও জবাবদিহি সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন স্বরূপ সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’। ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, প্রধানমন্ত্রী পদের একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস, অন্তর্বর্তী সরকার কাঠামোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিতকরণ, মৌলিক অধিকারের আওতা সম্প্রসারণ, সাংবিধানিক সুরক্ষা ও বলবৎযোগ্যতা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। সেই সঙ্গে, সংবিধানের বিদ্যমান প্রস্তাবনার ভাষ্যকে পরিবর্তন করে পুনঃপ্রতিস্থাপন করার জন্য সুপারিশ করেছে কমিশন। প্রস্তাবনায় একই সঙ্গে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ ও সংগ্রামের বিষয়টি।
১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪-এর ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরদ্ধে মানুষের প্রতিবাদী আন্দোলনের আদর্শকে সামনে রেখে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘আমরা জনগণের সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্রকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করে জনগণের জন্য একটি সংবিধান রচনা ও বিধিবদ্ধ করছি, যে সংবিধান বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ আকাক্সক্ষার বহির্প্রকাশ এবং যে সংবিধান স্বাধীন সত্তায় যৌথ জাতীয় বিকাশ সুনিশ্চিত করবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষণ করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি যে, এই সংবিধান প্রতিটি নাগরিককে পরস্পরের প্রতি অধিকার, কর্তব্য ও জবাবদিহির চেতনায় সংঘবদ্ধ করবে, সর্বদা রাষ্ট্র পরিচালনায় জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার নীতিকে অনুসরণ করবে এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখবে।’ কমিশন সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। বিদ্যমান সংবিধানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগের অধিকারসমূহ সমন্বিত করে ‘মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা’ নামে একটি একক সনদ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আদালতে বলবৎযোগ্য হবে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে বিদ্যমান তারতম্য দূর করবে। কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করছে, যেখানে একটি নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ (ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি), অপরটি উচ্চকক্ষ (সিনেট) এবং উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে চার বছর।
উচ্চকক্ষে মোট ১০৫ জন সদস্য হবেন, যার মধ্যে ১০০ জন সদস্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের সংখ্যানুপাতে নির্ধারিত হবেন। নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন সংসদ সদস্য একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদনেতা কিংবা রাজনৈতিক দলের প্রধানÑ এই তিনটির যেকোনো একটির বেশি পদে থাকতে পারবেন না। অর্থবিল ব্যতীত নিম্নকক্ষের সদস্যরা তাদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে এবং আইনসভার স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতি সবসময় বিরোধীদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন। তরুণদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে কমিশন আরও কিছু সুপারিশ করেছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষের ন্যূনতম ১০ শতাংশ আসনে তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনীত করবে এবং সংসদীয় নির্বাচনে প্রতিদ¦ন্দ্বিতার ন্যূনতম বয়স হবে ২১ বছর।
সংসদে বিরোধী দল থেকে মনোনীত একজনসহ ২ (দুই) জন ডেপুটি স্পিকার থাকবেন এবং সংবিধানের যেকোনো সংশোধনী উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের অনুমোদন ও প্রস্তাবিত সংশোধনী উভয় কক্ষে পাস হলে গণভোটে উপস্থাপন করার সুপারিশ করেছে কমিশন। রাষ্টের সকল কার্যাবলিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় এবং রাষ্ট্রীয় অঙ্গ ও প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন এবং আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯০ (নব্বই) দিন মেয়াদের একটি অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োগের সুপারিশ করেছে। নাগরিকদের জনদুর্ভোগ নিরসনে উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন স্থায়ী আদালত প্রবর্তনও রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থাকবে রাজধানীতেই। কমিশন বিচার বিভাগকে পূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা প্রদানের সুপারিশ করছে ও কিছু নতুন অধিকার যুক্ত করেছে, যেমনÑ খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রাপ্তি, ভোটাধিকার, রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ, গোপনীয়তা রক্ষা, ভোক্তা সুরক্ষা, শিশু উন্নয়ন, বিজ্ঞান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার অন্তর্ভুক্তি ইত্যাদি।
১৯৭১’এর পরবর্তী বাংলাদেশে দীর্ঘ রাজনৈতিক পথযাত্রায় ২৪’এর জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর জাতি হিসেবে আমরা এক বিশেষ পরিস্থিতির মুখোমুখি। কারণ, ছাত্র-জনতার এই বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান দেশের অন্যান্য আন্দোলন, সংগ্রাম কিংবা গণজাগরণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। রাষ্ট্রের সকল শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিত্বকারীদের মনে রাখতে হবে, একটি দেশে সংবিধান সংস্কার কিংবা পরিবর্তন তখনই কাজে আসবে, যখন সমাজে বসবাসরত জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল অংশীজনের চাওয়া পাওয়ার সুষ্পষ্ট প্রতিফলন ঘটবে। দেশের ফ্যাসিবাদমুক্ত সকল রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরে নির্মোহ গণতন্ত্র চর্চার প্রচলন ঘটাতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হতে হবে। রাজনীতিবিদদের মনে রাখতে হবে যে, জনগণই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক। এ দেশের জনগণ কখনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী কিংবা ক্ষমতাসীনদের ভৃত্য ও দাস নয়।
লেখক : সাংবাদিক