আশ্রয়ণ প্রকল্প একটি সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, যার মাধ্যমে গৃহহীন এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট ২ লাখ ৬৬ হাজার ১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে, যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই নামে হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে। বিনা মূল্যে সরকারি বাড়ি গৃহহীনদের আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে। যদিও এই প্রকল্প ঘিরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নিজস্ব জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে ভূমিহীন দেখিয়ে অনেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়েছেন। ফলে, এমন সব সুবিধাবাদীদের জন্য অনেক গৃহহীন ও হতদরিদ্র মানুষ সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
অসহায় মানুষের সহায়তার লক্ষ্যে এই প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রসংশনীয়। তবে এমন মহৎ কাজও ঝামেলামুক্ত নেই। বিগত সরকারের প্রশাসন ২০২০ সালে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের পশ্চিম জামুয়া গ্রামে ভূমিহীন ৬০টি পরিবারকে দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করে। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ওইদিনই সন্ধ্যা রাতে কয়েকশ’ লোক আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে আশ্রিত ভূমিহীন পরিবারগুলোকে ঘর ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ, অস্ত্রের মুখে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে তারা। এরপর তারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০টি ঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে ঘরের দরজা, জানালা, টিনের চালসহ সব লুট করে নিয়ে যায়। বর্তমানে ঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন গৃহহীন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। গৃহ হারিয়ে অনেকেই চলে গেছেন অন্যত্র। আবার অনেকেই এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন ঘর ফিরে পাওয়ার আশায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে ফেলার ৫ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, অতি দ্রুত গৃহহীন এসব বাসিন্দাকে পুনর্বাসন করা হোক।
অবহেলিত মানুষের স্থায়ী আশ্রয়স্থল নিশ্চিত ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যেই গৃহীত হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্প। এক্ষেত্রে দখলদারিত্ব, হামলা, ভাঙচুরের মতো ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইতোমধ্যে স্থানীয় জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো ভেঙে ফেলার বিষয়টি তার জানা ছিল না। এখন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার রদবদল হয়ে যারাই আসুক আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। সেইসঙ্গে গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে প্রশাসনÑ এমনটাই প্রত্যাশা।