সৌদি আরব আকস্মিকভাবে প্রতিবছর হজ মৌসুমে হজ যাত্রীদের মতোই সারাবছর ধরে ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করায় সমূহ বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্তের দরুন এখন ঢাকাসহ প্রায় সর্বত্র দেখা দিয়েছে এ দুটো রোগ প্রতিরোধে টিকার সংকট। উল্লেখ্য, প্রতিবছর হজযাত্রীদের এই টিকা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। কিন্তু ওমরাহ যাত্রীদের এখন এই টিকা কিনে নিতে হচ্ছে। ফলে, খরচ বেড়েছে ওমরাহ ও ভিজিট যাত্রীদের। দেশের একাধিক ওষুধ কোম্পানি এই টিকা প্রস্তুত করলেও বর্তমানে একমাত্র ইনসেপ্টাই তা প্রস্তুত ও বাজারজাত করছে। দামও কম নয়, প্রতি টিকা ১ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, এখন অনেক জায়গায় এই টিকারও সংকট দেখা দিয়েছে।
সমস্যা রয়েছে আরও একটি ক্ষেত্রে। ভ্রমণের কমপক্ষে ১০দিন আগে এই টিকা নিতে হয়। বিমানবন্দরে দেখাতে হয় টিকার সনদপত্র। বিনা টিকায় ওমরাহ করার সুযোগ শেষ হচ্ছে এ মাসের ৩১ জানুয়ারি। এ অবস্থায় শুরু হয়েছে টিকা নিয়ে ভোগান্তি। হজ এজেন্সি ও যাত্রীরা জানিয়েছেন, এত দিন এই টিকা বাজারে না চললেও চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে সংকট। আবার অনেক স্থানে পাওয়াও যাচ্ছে না। ফলে, যে বা যারা ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তারা ভিসা ও বিমানের টিকিট কাটা সত্ত্বেও যেতে পারছেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে বাতিল করেছেন বিমানের টিকিট। এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, সৌদি সরকার এমন ঘোষণা দিয়েছে একমাস আগে। আর ঢাকায় সেটি জানানো হয়েছে মাত্র ১ সপ্তাহ আগে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগও গ্রহণ করেনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ দায় তাদের নয়। সৌদি আরব ঘোষণা দেওয়ার পর গত সপ্তাহে হযরত শাহজালাল আন্তর্জতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্য এই নোটিস জারি করেছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, প্রতিবছর হজ ব্যবস্থার সঙ্গে মন্ত্রণালয় সরাসরি জড়িত থাকায় এ দুটো টিকা দেওয়া হয় বিনামূল্যে। ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্য যাওয়া-আসার কোনো ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা নেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের। তদুপরি সৌদি সরকার অফিসিয়ালি তাদের কিছু জানায়নি। সুতরাং, তারা কোনো সদ্ধান্ত নেবে না। টিকার ইস্যু সামনে আসতে প্রায় সবাই দোষারোপ করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে। বাস্তবে ওমরাহ ও ভিজিট ভিসাটি সম্পন্ন হয় সৌদি সরকার, হজ এজেন্সি ও ব্যক্তির মধ্যে। তদুপরি ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনো টিকা আমদানি বা বিক্রি করে না। এটি করে থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে তাদের করার কিছু নেই। যা হোক, আপাতত উদ্ভূত সমস্যার জরুরি সমাধানের নিমিত্তে একে অন্যের ওপর দায় না চাপিয়ে টিকার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। অনুমোদন সাপেক্ষে প্রতি বছর ৬০ হাজার বাংলাদেশী হজ পালন করেন। যেহেতু সৌদি আরব বাংলাদেশের বৃহত্তর শ্রমবাজার, সেহেতু ওমরাহ ও ভিজিট ভিসায় নিশ্চয়ই এর চেয়ে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী ভ্রমণ করেন সে দেশে। বিশেষ করে শ্রমজীবীরা গরিব ও নিম্নবিত্ত, সেহেতু তাদের জন্য মেনিনজাইটিস ও ইনফু¬য়েঞ্জার টিকা বিনা মূল্যে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে একটি জরুরি সিদ্ধান্ত নেবে বলেই প্রত্যাশা।
টিকা সংকটে ওমরাহ যাত্রী
শীর্ষ সংবাদ: