২০২৪ সালে চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির কারণে বাংলাদেশের তিন কোটি ৩০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের এক বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব আরও বেশি গভীর, প্রকট ও বিপজ্জনক। ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে চরমভাবে। অনেক পরিসংখ্যান স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের বাস্তুসংস্থান এবং মানুষের জীবনধারায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে এবং ঘটবে। জলবায়ু পরিবর্তন পরিণত হয়েছে একটি বৈশ্বিক সংকটে। জলবায়ুর পরিবর্তিত রূপ ক্রমান্বয়ে মানব সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এটি এমন একটি সমস্যা যা দেশ, জাতি, উপমহাদেশ কিংবা মহাদেশ- কোনো কিছুর সীমানা মেনে চলে না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। শ্বাসকষ্ট, হিটস্ট্রোক বা গরমজনিত মৃত্যু কিংবা তীব্র ঠান্ডাজনিত মৃত্যু ইত্যাদি এখন খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূমণ্ডলীয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা। উপকূলীয় এলাকায় বর্ধিত হারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এসব আশ্রয়হীন উদ্বাস্তু আশ্রয় নিচ্ছে নিকটবর্তী বড় শহরগুলোয় কিংবা রাজধানী শহরে। ফলে, বাড়ছে সেসব শহরের জনসংখ্যা। বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সেসব শহর।
শুক্রবার ইউনিসেফ বাংলাদেশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘লার্নিং ইন্টারাপটেড : গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আবহাওয়াজনিত শিশুদের শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটনার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। এতে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাবলির কারণে দফায় দফায় স্কুল বন্ধ দিতে হয়েছে। সারাবিশ্বে ২০২৪ সালে তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা ও খরার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে ৭৭টি দেশের অন্তত ২৪ কোটি ৭০ লাখ শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল ছিল দক্ষিণ এশিয়া। এটা স্পষ্ট যে, শিক্ষা খাতকে জলবায়ু সহনশীল করে তুলতে অর্থায়ন ত্বরান্বিত করা জরুরি, যাতে জলবায়ুর অভিঘাত সামলে নিতে সক্ষম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পরীক্ষিত, টেকসই ও কার্যকর সমাধানে বিনিয়োগ করা যায়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে হবে সব শিশুর জন্য নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স যথার্থই বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শিশুরা পরস্পর সম্পর্কিত দুটি সংকটÑ জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান শিখন দারিদ্র্যের সম্মুখভাগে রয়েছে। এর ফলে তাদের টিকে থাকা ও ভবিষ্যৎ দুটিই হুমকির মুখে পড়ছে।’ প্রশ্ন হচ্ছে, জলবায়ু সংকটে দেশের ক্ষতির কথা আমরা জানি। কিন্তু এটি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। যেসব উন্নত দেশের অপরিণামদর্শিতার কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকির ভেতরে বিপর্যয়ের মুখোমুখি, সেসব দেশ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। একইসঙ্গে শিশুশিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো চাই, যাতে করে দুর্যোগ মোকাবিলা করেও শিশুর শিক্ষা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়।
জলবায়ু সংকটে শিশুশিক্ষা
শীর্ষ সংবাদ: