বর্তমান সমাজে ‘শিক্ষা’ মানে শুধু কতটা সনদপত্র বা ডিগ্রি অর্জন করা, তা নিয়ে বিতর্ক অনেক পুরোনো। আমাদের চারপাশে এ নিয়ে নানা রকম কথা শোনা যায়। তবে, একটি প্রশ্ন চিরকালই টিকে থাকে,একজন শিক্ষিত ব্যক্তির প্রকৃত চিহ্ন কী?
কয়েক দশক আগে, যখন সমাজের বিভিন্ন সংকটের কারণে আলোচনায় ছিল শিক্ষাব্যবস্থা,তখনই এই প্রশ্নটি নিয়ে বেশ কিছু অনুসন্ধান করা হয়েছিল। সেই অনুসন্ধানেই উঠে আসে যে, একজন শিক্ষিত ব্যক্তি কেবলমাত্র পুস্তক ও পাঠ্যক্রমে সীমাবদ্ধ নন। বরং তার চিন্তা-ভাবনা, আচরণ এবং সম্পর্কের মাধ্যমে প্রকৃত শিক্ষা ফুটে ওঠে।
১৯৭০ সালের দিকে, যখন আমেরিকান শিক্ষাব্যবস্থা সমালোচনার মুখে পড়েছিল, অনেকেই দাবি করেছিলেন, শিক্ষা শুধু মাত্র ঐতিহ্যগত পাঠ্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। মেধাবী এবং শিক্ষিত ব্যক্তিরা নিজের মানসিকতা এবং আচরণে যে উদারতা ও সহানুভূতির পরিচয় দেন, তা এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচিত হতে থাকে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানা যায়,সমাজের প্রখ্যাত ব্যক্তিরা একজন শিক্ষিত ব্যক্তির সম্পর্কে কী ভাবেন। শিল্পী নরম্যান রকওয়েল বলেছিলেন, "শিক্ষিত ব্যক্তি কেবলমাত্র নিজের মতামত নয়, বরং অন্যদের মতামতও শোনে এবং সেগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।" শিক্ষিত হওয়ার মানে কেবল যে নিজেকে প্রমাণ করা, তা নয়; বরং অন্যদের মতামতকে গ্রহণ করার মনোভাবও এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, বিখ্যাত মানববিদ্যা গবেষক মার্গারেট মিড বলেছিলেন, "একজন শিক্ষিত ব্যক্তি তার চারপাশের পৃথিবী সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন এবং জানেন যে, বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন মূল্যবোধ ও নীতি প্রচলিত আছে।"
এছাড়া, প্রখ্যাত ফুটবল কোচ অরা পারসেগিয়ান এই প্রসঙ্গে বলেন, "শিক্ষিত ব্যক্তি সেসময় ভালোভাবে কাজ করে যখন সে জানে কী করতে হবে এবং অন্যদের চেয়ে নিজেকে কিভাবে উৎকর্ষতার দিকে নিয়ে যেতে হবে।"
এমনকি মনোবিজ্ঞানী জয়েস ব্রাদার্সও মন্তব্য করেছেন, "একজন শিক্ষিত ব্যক্তি সবার প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করেন, তারা যে অবস্থানেই থাকুক না কেন।"
আসলে, এই সাক্ষাৎকারগুলি থেকে যে বিষয়টি উঠে আসে, তা হলো,শিক্ষিত হওয়া মানে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নেওয়া নয়। একজন শিক্ষিত মানুষ তার প্রতিদিনের কাজে, আচরণে এবং সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নিজের শিক্ষিত হওয়ার প্রমাণ দেয়। একজন সত্যিকারের শিক্ষিত মানুষ কখনও নিজেকে এককভাবে পরিপূর্ণ বলে মনে করে না, বরং সব সময় শিখতে চায় এবং সব মানুষের প্রতি সমান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
অতএব, একজন শিক্ষিত ব্যক্তির প্রকৃত চিহ্ন হল তার আচরণ, তার সহানুভূতি, এবং সমাজের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি। এখন, আমাদের উচিত এমন একটি মনোভাব গ্রহণ করা, যা আমাদের ক্রমাগত শিখতে,অন্যদের মতামতকে মূল্য দিতে এবং বিশ্বকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।
সূত্র:https://tinyurl.com/5fz6rdjx
আফরোজা