সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও লেখালেখি হয়েছে রাজধানীর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নিয়ে। মেট্রোরেল ছাড়া ঢাকায় মানসম্মত আর কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই। রাজপথে চলাচলকারী পাবলিক বাসগুলোর মান এতই নিম্ন যে, এতে সাধারণ যাত্রীদের ভদ্রভাবে চলাচল করা সম্ভব নয়। বিশে^র একমাত্র রাজধানী যেখানে ট্যাক্সি সার্ভিস গড়ে ওঠেনি স্বাধীনতার ৫৪ বছরে। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাগ্যক্রমে জুটলেও ভাড়ার পরিমাণ মধ্যবিত্তের বাইরে। বিশে^র সকল দেশের মতো ঢাকাতেও চালু রয়েছে অ্যাপসভিত্তিক ট্যাক্সি সার্ভিস উবার, পাঠাও ইত্যাদি। প্রয়োজনের সময় এগুলো পাওয়া কঠিন। গন্তব্য পছন্দ না হলে এরা কিছুতেই কাউকে বহন করবে না। জরুরি প্রয়োজনে চার/পাঁচবার বাতিল করেও এই ট্যাক্সি সার্ভিস মিলে না। অথচ বিশে^র কোথাও উবার বা এ ধরনের অ্যাপসভিত্তিক ট্যাক্সি গন্তব্য জানতে চায় না। বাকি রইল রিক্সা। এই পরিবহনের কোনো আইন বা নিয়মনীতি নেই। তারা যেটি চায় সেটিই আইন। চাইলে ব্যাটারি দিয়ে চলবে, ইচ্ছা হলে প্যাডেল দিয়ে চালাবে। সরকারের কোনো নিয়মনীতি এরা মানতে নারাজ। সরকার এদের শৃঙ্খলায় ফেরাতে চাইলে রাজধানী অচল করে দিয়ে দাবি আদায় করছে। নাগরিকরা রাজধানীতে চলাচল করেন ভাগ্যের ওপর ভর করে। কিছুটা হেঁটে, কিছুটা রিক্সা কিংবা লক্কড়-ঝক্কড় বাস এদের নিয়তি। বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবেনি কোনো সরকার।
রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ায় এই এলাকায় যাতায়াতকারী মানুষের ভোগান্তি কমেছে। এর বাইরে টঙ্গী, উত্তরা বিমানবন্দর হয়ে মতিঝিলগামী যাত্রীদের এখনো নির্ভর করতে হচ্ছে লক্কড়-ঝক্কড় বাসের ওপর। এগুলো কতক্ষণে গন্তব্যে পৌঁছবে কেউ জানে না। এ জন্য প্রচুর সময় হাতে নিয়ে তাদের ঘর থেকে বের হতে হয়। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, পুরনো ঢাকাসহ অনেক এলাকার মানুষ নির্ভরশীল বাসের ওপর। নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা থেকেও প্রচুর মানুষ রাজধানীতে যাতায়াত করেন। এসব এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হলেও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট আছে দুই যুগ আগের মতোই। বিমানবন্দর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে প্রাইভেট গাড়ির চালকদের যাতায়াত সহজ করে দিয়েছে। এগুলোতেও এনালগ টোল প্লাজার কারণে পিক আওয়ারে দীর্ঘ লাইন ধরে থাকতে হয়। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পাবালিক ট্রান্সপোর্ট না চলায় এগুলো সাধারণ মধ্যবিত্তদের কোনো উপকারে আসে না।
ইদানীং অফিস আদালতগুলোতে চালু হয়েছে করপোরেট কৃষ্টি। এ কারণে ভালো জামা-কাপড় পরে অফিসে যেতে হয়। গরমের সময়ও পরতে হয় স্যুট-টাই। এই পোশাকে লক্কড়-ঝক্কড় বাসে চলাচল কঠিন। গরমকালে উচ্চ তাপমাত্রায় তো সম্ভবই নয়। বাসে যাত্রীদের সঙ্গে চাপাচাপি করে পোশাকই নষ্ট হয়ে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস চালু হলেও দীর্ঘ লাইন। মাঝে মধ্যে আবার এই সার্ভিস বন্ধও হয়ে যায়। বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ধার-দেনা করে অনেকে গাড়ি কেনার চেষ্টা করেন। শিখে ফেলেন ড্রাইভিং। মতিঝিল অফিসপাড়ায় গাড়ি রাখার জায়গা খুবই দুষ্প্রাপ্য। শেষ পর্যন্ত রাখতে হয় ড্রাইভার। এভাবে খরচ বাড়ে একটি পরিবারের। রাস্তায় বাড়ে একটি গাড়ি। এমন হাজারো মানুষের গল্পে রাস্তায় বাড়ে যানজট। রাস্তায় যানজটের কারণে অফিস সময়ের বাইরেও শুধু প্রতিদিন ব্যয় করতে হয় অতিরিক্ত ৩/৪ কর্মঘণ্টা। সুবিধাজনক গণপরিবহন থাকলে হয়তো এসব মানুষকে ধারকর্জ করে আর গাড়ি কিনতে হতো না। কিনলেও তা ব্যবহৃত হতো না প্রতিদিনের যাতায়াতে। বৃদ্ধি পেত না তাদের ব্যক্তিগত খরচ কিংবা রাস্তার যানজট। মেট্রোরেলের কারণে উত্তরা নতুন শহর থেকে মিরপুর হয়ে মতিঝিলগামী যাত্রীদের জীবনে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
শুধু অফিস নয়, শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আত্মীয়-পরিজনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগদান কিংবা রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য গণপরিবহন বলতে এই বাস সার্ভিস। তার ওপর রয়েছে ভাড়া নিয়ে বিড়ম্বনা। কখনো তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধি। আবার কখনো ‘গেটলক’ বা ‘সিটিং সার্ভিস’-এর নামে বেশি ভাড়া আদায়। ১৭ টাকার ভাড়া ২০ টাকা, ২৫ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। সরকার কিংবা মালিক সমিতির বেঁধে দেওয়া ভাড়ায় তাদের পোষায় না। যে কোনো অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করাই যেন তাদের একমাত্র ব্যবসা। শুধু রাজধানী নয়, দেশের বড় শহরগুলোতে গণপরিবহনের একই চিত্র। মানসম্মত কোনো গণপরিবহন নেই, যা দিয়ে মানুষ নিজের প্রাইভেট গাড়ি ছেড়ে চলাচল করতে পারে।
বিশ্বের সকল বড় শহরে গণপরিবহনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে কোনো দিনই এটি গুরুত্ব পায়নি। সরকার বিআরটিসির কিছু বাস ক্রয় করে রাস্তায় দিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। উন্নত দেশের বড় শহরগুলোতে যাত্রীদের জন্য থাকে অনেক বিকল্প। প্রধান গণপরিবহন পাতাল রেলের পাশাপাশি রাস্তায় থাকে বাস। বাসগুলো পরিচালনা করে সরকার কিংবা প্রাইভেট কোম্পানি। প্রি-পেইড টিকিট কিংবা বাসে উঠে ড্রাইভারের কাছে ভাড়া মিটিয়ে এসব বাসে চলাচল করা যায়। সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচলের কারণে এসব বাসে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বিরোধের কোনো বিষয় থাকে না। যারা পাতাল রেল কিংবা বাসে চড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তাদের জন্য রয়েছে ট্যাক্সি। এসব ট্যাক্সি চলে মিটারে। দূরত্ব অনুযায়ী নির্ধারণ হয় ভাড়া। যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায়ের প্রশ্নই ওঠে না। উন্নয়নশীল দেশের কোনো কোনো শহরে অবশ্য ট্যাক্সি ড্রাইভাররা গন্তব্য পছন্দ না হলে যেতে চায় না। এই সমস্যা সমাধানে কঠোর আইন প্রয়োগ করা হয়। যেমন ভারতে ট্যাক্সির গায়ে লেখা থাকে, ‘গন্তব্য জানতে চাওয়া যাবে না’। যাত্রীরা গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে গন্তব্যের কথা বলবেন। রাজধানী ঢাকায় বাস সার্ভিসের এমন দুরবস্থায়ও ট্যাক্সির কৃষ্টি গড়ে ওঠেনি।
২০০৩ সালে একবার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিছু হলুদ (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) এবং কিছু কালো ট্যাক্সি রাস্তায় নামানো হয়। ভারতে তৈরি নিম্নমানের গাড়ি দিয়ে শুরু করা এসব ট্যাক্সি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অকেজো হয়ে যায়। নতুন করে আর কোনো ট্যাক্সির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আরও পরে সরকার দুটি প্রতিষ্ঠানকে খুবই অল্প কয়েকটি ট্যাক্সির অনুমোদন দেয়। এরা কিছুদিন রাস্তায় চলেছে। গাড়ির স্বল্পতা এবং অত্যধিক ভাড়ার কারণে যাত্রীরা আর ট্যাক্সি সার্ভিসে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি। পরে আর সরকার ট্যাক্সির বিষয়টি নিয়ে কখনো মাথা ঘামায়নি। বিশ্বের কোনো রাজধানী শহরে ট্যাক্সি সার্ভিস নেই, এটি কল্পনাই করা যায় না। কি কারণে বাংলাদেশ সরকারের ট্যাক্সিবিরোধ নীতি, তা জানা যায়নি কিছুতেই।
গণপরিবহনের অভাবে ক্রমবর্ধমান প্রাইভেট গাড়ির কারণে মহানগরীতে বাড়ছে যানজট। কোনো কোনো সময় ১৫ মিনিটের রাস্তা দুই ঘণ্টায়ও পার হওয়া যায় না। এতে মূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অপচয় হচ্ছে মূল্যবান জ্বালানি। যানজটের কারণ শুধু প্রাইভেট গাড়িই নয়, শৃঙ্খলাবিহীন বাস সার্ভিসের কারণেও রাস্তায় যানজট তৈরি হচ্ছে। যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসগুলো রাস্তায় প্রতিযোগিতা শুরু করে। নির্ধারিত বাসস্ট্যান্ডের বাইরেও তারা রাস্তার ওপর বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। রাজধানীর প্রায় সব বাসস্ট্যান্ডই রাস্তার ওপরে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলে অল্প সময়েই বাসের পেছনে শত শত গাড়ি জমা হয়। জ্যাম বাড়তে থাকে ক্রমশ। একটি বাসের কারণে গোটা এলাকায় যানজট তৈরি হয়। আমাদের দেশে বাস ড্রাইভারদের এই বোধটুকু কাজ করে না। একজন যাত্রী কিংবা অতিরিক্ত ২০ টাকা ভাড়া তাদের কাছে অনেক বড়। যানজট তৈরি হোক, এতে তাদের কিছুই যায় আসে না।
যানজটের আর একটি কারণ ট্রাফিক ব্যবস্থা। রাজধানী ঢাকায় সুনির্দিষ্ট কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা বা নীতিমালা নেই। এলাকাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্র্যাফিক কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক আইন ঠিক করেন। কোন্ রাস্তায় পার্কিং নিষেধ, কোথায় পার্কিং করা যাবে কিংবা কোথায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করা যাবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট স্থায়ী নির্দেশনা নেই। দায়িত্বরত কর্মকর্তরা যখন যেটি মনে করেন, সেটিই নিয়ম। ট্র্যাফিক সিগনাল নিয়ন্ত্রিত হয় ট্র্যাফিক সার্জনের ইচ্ছেমতো। তিনি মনে করলে গাড়ি থামবে, আবার চাইলে গাড়ি চলবে। দায়িত্বরত কর্মকর্তার ইচ্ছায় ট্র্যাফিক সিগন্যাল পরিচালনার এই নিয়ম বিশ্বের কোনো শহরেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে কি কারণে রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসানো হয়েছে, এর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। তারা বলেন, রাস্তার তুলনায় যানবাহন বেশি থাকায় সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকর করা যায় না। প্রশ্ন জাগে, বিশ্বের বড় বড় শহর যেমন টোকিও, নিউইয়র্ক, লন্ডন, ব্যাঙ্কক এমনকি কলকাতার চেয়ে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন কি সত্যিই অনেক বেশি।
গণপরিহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কোনো উদ্যোগই শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয় না। গত সরকারের আমলে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে একটি কোম্পানি বাস সার্ভিস শুরু হয়েছিল। কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত এই পরিবহন চলেছে কিছুদিন। মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিল। পুরো ঢাকায় কয়েকটি কোম্পানির মাধ্যমে বাস চলার কথা। মালিকদের দৌরাত্ম্যে শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায়। নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে ‘রাজধানীর বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির’ সভায় নগরীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে আর বিভিন্ন নামের বাস থাকবে না। বাসগুলোর নাম হবে ‘নগর পরিবহন’। ঢাকার ভেতরে ৩৪টি এবং ঢাকার বাইরে শহরতলি পরিবহন নামে ৮টিসহ মোট ৪২টি রুটে চলবে নগর পরিবহন। এগুলোর গায়ে রুটের নাম ও নম্বর থাকবে। সব বাস থামতে হবে নির্দিষ্ট স্টপেজে, থাকবে টিকেটিং ব্যবস্থা। ক্রমান্বয়ে প্রি-পেইড কার্ডও ইস্যু করা হবে। এই ব্যবস্থায় বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করাতে পারবে না। নগর পরিবহনে যুক্ত হলেই কেবল রাজধানীতে চলতে পারবে যাত্রীবাহী বাস। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক ও কমিটির সভাপতি জানিয়েছিলেন, রাজধানীতে গণপরিবহন পরিচালনার জন্য নগর পরিবহনের আওতায় আসতে আবেদন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তখন পর্যন্ত ৮০টি বাস কোম্পানি আবেদন করেছিল। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, রেশনালাইজেশন কমিটি আপাতত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজনেস মডেল ও বাসগুলো কিভাবে চলবে এর রূপরেখা তৈরির জন্য আরও একটি কমিটি করা হবে। বছরের শুরুতে নগর পরিবহন দৃশ্যমান হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজটির তেমন অগ্রগতির সংবাদ পাওয়া যায়নি।
রাজধানীর বাসগুলোর বিপজ্জনক প্রতিযোগিতায় যানজটের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কে কার আগে যাবে, কে বেশি যাত্রী ওঠাতে পারবে, এই প্রতিযোগিতায় ঘটে যত অনর্থ। একটি রুটে একটি কোম্পানির বাস চালানো হলে এই প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। রুটের গুরুত্ব অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে বাসের সংখ্যা। প্রয়োজনে প্রত্যেক রুটের বাসের রং হবে আলাদা। বাসগুলো হতে হবে ন্যূনতম মানসম্পন্ন, ভাড়া থাকবে নির্দিষ্ট। এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে প্রকল্প সফল হবে। গণপরিবহনের ভোগান্তি থেকে রাজধানীবাসী মুক্তি চায়। নাগরিকদের দুর্ভোগ কমাতে এই প্রকল্প সফল হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এখন পরিবহন মালিকদের সিন্ডিকেট অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এখনই সময় রাজধানীতে পাবলিক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো।
একই সঙ্গে চালু করতে হবে রাস্তার ট্র্যাফিক সিগন্যাল। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তৈরি করতে হবে রাস্তার পার্কিং পরিকল্পনা। ট্র্যাফিক বিভাগের দায়িত্ব থাকবে শুধু আইনের বাস্তবায়ন, তাৎক্ষণিক আইন প্রণয়ন নয়। কঠোরভাবে আইন বাস্তবায়ন করতে পারলে শুধু রাস্তার শৃঙ্খলাই ফিরবে না, দায়িত্ব পালনকারী ট্র্যাফিক কর্মীদেরও অমানবিক কষ্টও লাঘব হবে। কঠোর আইন প্রয়োগে পরিবহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদাহরণ রাজধানীতেই রয়েছে। গুলশান-বনানী কিংবা হাতিরঝিলে চলাচলকারী নগর পরিবহনগুলোতে নেই অশুভ প্রতিযোগিতা। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে এই বাসগুলোতে চড়তে পারে দুর্ভোগ ছাড়া। একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সম্ভব হলে গোটা শহরেই তা সম্ভব। এ জন্য চাই আন্তরিক সদিচ্ছা এবং প্রত্যয়। সঠিক পদক্ষেপে গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, বিআরটি, এক্সপ্রেসওয়েসহ আধুনিক কোনো প্রকল্পই কাজে আসবে না।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ
কবে হবে আধুনিক গণপরিবহন
শীর্ষ সংবাদ: