ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

বন্ধ বস্ত্র কারখানা

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

বন্ধ বস্ত্র কারখানা

চালু লাভজনক কারখানা বন্ধ হওয়া মানে উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের মাথার ওপরে বজ্রাঘাত। শুধু শ্রমিক নয়, একটি কারখানায় শ্রমিকের বাইরেও থাকেন বহুস্তরের কর্মচারী-কর্মকর্তা। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে সবার পেটেই লাথি পড়া। বিষয়টি দুঃখজনক। প্রতিটি কর্মীর পরিবার এর ফলে বিপর্যস্ত ও বিপন্ন হয়ে পড়ে। এমনিতেই দেশের একটি বড় অংশ কর্মহীন বা বেকার, অর্থাৎ তাদের উপার্জন নেই। এই বেকারের সারিতে আরও বেকার যুক্ত হওয়া মানেই অর্থনীতির ওপর চাপ বৃদ্ধি। মূল্যস্ফীতির চাপে নাকাল অর্থনীতির ওপর নতুন কোনো বাড়তি চাপ কতটা নেতিবাচক হতে পারে, সেটি বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ৫ আগস্টের পর অর্থনীতির ওপর নানাবিধ চাপ বেড়েছে, এটাই বাস্তবতা। সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পেও এসে পড়েছে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়। ঢাকার সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুরে গত সাড়ে পাঁচ মাসে ৬৮টি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী ভিত্তিতে বন্ধ। এ ছাড়া ছয়টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কেয়া গ্রুপ। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোর অধিকাংশই তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব কারখানা বন্ধ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় অনেক কারখানা খেলাপি হয়ে পড়ে। আবার ক্ষমতাচ্যুত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেক কারখানার মালিক আত্মগোপনে থাকায় কারখানা রুগ্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না কিছু কারখানা।
বন্ধ হওয়া ৬৮ কারখানার মধ্যে ৫১টি গাজীপুরে এবং সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে ১৭টি। এসব কারখানায় কাজ করতেন অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিক। বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকের অনেকেই কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রায়ই বন্ধ থাকছে সড়ক-মহাসড়ক। তাতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অন্যদিকে, কারখানা চালু করতে ঋণসহ বিভিন্ন সহায়তা চাইছে কোনো কোনো কারখানা কর্তৃপক্ষ। সার্বিক পরিস্থিতিতে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি বিবেচনার দাবি রাখে। তিনি বলেছেন, বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকদের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কোনো কারখানা শ্রমিকের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও তা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে।
বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন বেক্সিমকোর কথা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোক্তা সালমান এফ রহমান জুলাই বিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে কারাগারে আছেন। এরপর থেকেই এই সংস্থার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেক্সিমকোর বন্ধ ১৬ কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। মহাসড়ক অবরোধ করে তারা তাণ্ডব চালাচ্ছেন। তাদের সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারখানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। গ্রেপ্তার হচ্ছেন বহুজন, অজ্ঞাতপরিচয় শত শত কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। একেবারে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। দেশের মানুষের মনে আছে ওয়ান ইলেভেনের পর কয়েকজন প্রধান শিল্প উদ্যোক্তাকে আটক করা হলে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। কারখানা বন্ধ কোনো সমাধান হতে পারে না। মালিক আটক হলে কারখানা বন্ধ না করে কিভাবে চালু রাখা যায় সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দেশের রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে যেন কোনো সংকট না হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ খোলা থাকে, সেটি অবশ্যই বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। ব্যবসা ও রাজনীতিকে আলাদা করা না গেলে এ ধরনের সংকট জটিল আকার ধারণ করতে পারে, সেকথা মনে রাখা চাই।

×