ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

নজর দিন নিত্যপণ্যে

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

নজর দিন নিত্যপণ্যে

দৈনন্দিন  জীবনে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আসন্ন রমাজানকে কেন্দ্র করে মসুর ডাল ও ছোলার দাম বাড়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। মার্চের প্রথম সপ্তাহে শুরু হচ্ছে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ইবাদতের মাস মাহে রমজান। আর মাত্র ৩৭ দিন, এর আগেই দেশের সর্বত্র, বাজার ও বন্দরে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও কোনো পণ্যের দাম কমছে না। প্রতিবছরই রমাজানকে সামনে রেখে একটি কুচক্রী মহল সরব হয়ে ওঠে বাজার অস্থিতিশীল করতে। সাধারণত রমজান মাসে খেজুর, ছোলা, চিনি, তেল সবচেয়ে বেশি চাহিদাযোগ্য পণ্য। এছাড়া মৌসুমি ফল-ফলাদি এবং পুষ্টির জন্য দুধের চাহিদাও রয়েছে। বাজার অনুসন্ধানে জানা যায়, মসুর ডাল, ছোলার দাম বৃদ্ধির আশঙ্কার সঙ্গে খেজুর ও ভোজ্যতেলের দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এছাড়া মুগ, খেসারি, ডাবলি, অ্যাংকরÑ এই পণ্যগুলোও আমদানিনির্ভর হওয়ায়, ডলারের দাম ওঠা-নামায় এর প্রভাব পড়ে বাজারে। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ব্যাপক ইফতার মাহফিল থাকায়, রমজানে বাড়তি চাহিদার ফলে খেজুর, ছোলা, মসুর ডাল, ভোজ্যতেল, চিনির চাহিদা অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি থাকে। প্রায় প্রতিটি পণ্যই পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। কৃত্রিম সংকট মোকাবিলায় রমজান শুরুর আগেই পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি করা হয় এ সব পণ্য। ইতোমধ্যে সরকার শুল্ক-কর হ্রাস ও এলসি মার্জিন কমানো এবং বন্দরে দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথমার্ধে ২.৫১ লাখ টন মসুর ডাল আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬১ হাজার টন বেশি। ছোলা আমদানি হয়েছে ৪৮,৯৮০ টন, যা একই সময়ের তুলনায় ৩১,৫৩৪ টন বেশি। অধিক চাহিদার পণ্য দুটির আমদানি বেশি হওয়া সত্ত্বেও মজুত এবং সরবরাহের প্রতি সূক্ষ্ম নজর রাখতে হবে। অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৩.৮৪ লাখ টন, পামঅয়েল ৭.১১ লাখ টন। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে মোট ৬.৬৪ লাখ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ লাখ টন কম। ইফতারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদান খেজুরের আমদানিও আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৫,৮৮৩ টন খেজুর আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশ কম। আমদানিনির্ভর পণ্যগুলোর জন্য গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে খোলা এলসির পণ্য জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে পৌঁছাবে। মসুর ডালের দাম গত বছরের তুলনায় না বাড়লেও বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি দামে। চিনির আমদানি কম হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশের বাজারে গত বছরের তুলনায় ১২.২৮ শতাংশ কমেছে। প্রতি বছর রমজানে ছোলা ও মসুর ডালের চাহিদা এক লাখ টন। খেজুর ৬০ হাজার টন, চিনি ও ভোজ্যতেল ৩ লাখ টন। পেঁয়াজের চাহিদা ৫ লাখ টন।
ইফতারির বাহারি ঐতিহ্যের সঙ্গে অধিকাংশ রোজাদার ছোলা পছন্দ করেন। মসুর ডালের চাহিদা সৃষ্টি হয় হালিমসহ অন্যান্য মুখরোচক খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতে থাকায় এবং সরকার আমদানি শুল্ক-কর কমানোয় আশা করা যায়, সিয়াম সাধনার পবিত্র রমজানে ভোজ্যতেলের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যেই থাকবে। মসুর ডাল ও ছোলার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার যদি পণ্য দুটোর মজুত ও সরবরাহ নিয়মিত তদারকি করে, তাহলে বাজারে অবশ্যই এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

×