.
বাংলাদেশে প্রথম কৃত্রিম বন মীয়াওয়াকি ফরেস্ট সৃজন করা হয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সোনাপাহাড়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। এই ধারণাটি দেশে নতুন বলা যায়। মিয়াওয়াকি ফরেস্টের প্রবক্তা জাপানের প্রখ্যাত উদ্ভিদ বিজ্ঞানী আকিরা মিয়াওয়াকি। মূলত তার নামেই এই কৃত্রিম বনের নামকরণ। এই পদ্ধতিতে ছোট ছোট জায়গায় স্বল্প সময়ে আসল বনের আদল সৃজন করা যায়। ‘প্রকল্প সোনাপাহাড়’ এলাকায় টিলা শ্রেণির মাটির কোল ঘেঁষে ৪ হাজার ৪শ’ বর্গফুটের এই বনটি সাজানো হয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। ১৫ মাস বয়সী বনটিতে সমাবেশ ঘটেছে ১২০ প্রজাতির গাছ-গাছালি ও লতাগুল্মের।
আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয় যে, যেন একযুগের পুরনো এক ঘন অরণ্য। বনটির গড় উচ্চতা ১৭ ফুট। মনুষ্যসৃষ্ট প্রকৃতির এই জীবন্ত প্রদর্শনী সত্যিই যেন এক স্থানীয় গাছের জাদুঘর। এই ধারণা কাজে লাগিয়ে নেদারল্যান্ডস ও ভারত তাদের দেশেও একাধিক স্থানে গড়ে তুলেছে মিয়াওয়াকি ফরেস্ট, যা অত্যন্ত পরিকল্পিত, পরিবেশবান্ধব ও বাস্তবানুগ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনামাফিক তৈরি হয়েছে বিধায় সাধারণ বন থেকে এই বন প্রতি বছর ১০ গুণ বেশি বৃদ্ধি পায় এবং ৩০ গুণ কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে। একই সঙ্গে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য হতে পারে মনোমুগ্ধকর নয়নাভিরাম নিরাপদ পর্যটন কেন্দ্র।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বন ও পরিবেশ গবেষকদের মতে, খাতাকলমে এ হিসাব দেখানো হলেও বাস্তবে তাও নেই। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বনাঞ্চলের সঙ্গে জীববৈচিত্র্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বন উজাড় ও বনভূমি সঙ্কুচিত করা মানে প্রকৃতির বহুমুখী সম্পদের উৎস নষ্ট করা। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় যখন বনায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি, তখন বিভিন্ন অজুহাতে উল্টো ধ্বংস করা হচ্ছে বনাঞ্চল। গাছ লাগানোর নামে প্রতিবছর শত কোটি টাকা খরচ করা হলেও বাস্তবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণী। বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করা গেলে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশ কিভাবে বনায়ন রক্ষা ও বৃদ্ধিতে কাজ করছে, সে সম্পর্কে জেনে তা আমাদের অনুসরণ করা যুক্তিযুক্ত। কৃত্রিম বন মিয়াওয়াকি ফরেস্ট এক্ষেত্রে একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে।