ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

সর্বজনীন শিক্ষা

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২০:৪১, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বজনীন শিক্ষা

..

প্রধান পাঁচ মৌলিক মানবিক প্রয়োজন অনেকটা অপূরণীয় থেকে যায় বিভিন্ন দেশেরই বিপুল সংখ্যক মানুষের। পাঁচটি এসে মূলত ঠেকে একটিতে, অর্থাৎ অন্নে বা খাদ্যে। অথচ সেসব দেশেই বিরাজ করে ধনবান শ্রেণি এবং তাদের বিলাসিতা ও অপচয় রীতিমতো অমানবিকতার পর্যায়েই পড়ে। যাহোক, বর্তমান বিশ্বের কোনো দেশ যতই দরিদ্র হোক না কেন, মানুষের প্রধান মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর কথা উচ্চকণ্ঠেই বলে থাকে এবং উন্নত বিশ্ব ও জাতিসংঘের মতো সংস্থা তার একটি চোখ রাখে বঞ্চিত দুস্থ দরিদ্র মানুষের প্রতি। ফলে, সহায়তা ও অনুদানের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক মানুষের জীবন সহনীয় করার প্রয়াস সক্রিয় থাকে। আমরা শিক্ষার কথা বিশেষভাবে বলি, যেহেতু মানুষ বুদ্ধিমান ও সংবেদনশীল জীব, সভ্যতার ক্রমযাত্রার ইতিহাসে তাই শিক্ষার প্রভাবই বেশি। সবার জন্যই চাই শিক্ষা, বা শিক্ষাকে হতে হবে সর্বজনীন। জন্মগ্রহণকারী প্রতিটি শিশুই যাবে বিদ্যালয়ে এবং রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নেবে। এমনটাই সংগত ও সমীচীন। কিন্তু বাস্তবে কি এটা সব রাষ্ট্রে সম্ভব? বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্যায় বা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করা হলেও তা সর্ববিচারে ফলপ্রসূ হয়েছে এমন দাবি করা যাবে না। তবু মন্দের ভালো হিসেবে এই মহৎ প্রয়াসে দেশ যে এক ধাপ এগিয়ে গেছে, তাতে সন্দেহ নেই। এখন ভাবা হচ্ছে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন করার কথা। শুরুতে অবশ্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য শিক্ষার বিষয়টিই ভাবা হচ্ছে।
পাঁচই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদের নেতৃত্বে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করেছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই কমিটির প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ছাড়াও প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং কাঠামোগত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করার কথা। সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কমিটি তিন মাসের বেশি সময় ধরে কাজ করেছে। দেশের ১০টি উপজেলায় সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করেছে। সেখানকার বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে। এখন চলছে সুপারিশমালা প্রণয়নের কাজ।
প্রাথমিকে পাবলিক পরীক্ষার মতো কোনো পরীক্ষা যাতে চালু করা না হয়, সেই সুপারিশ করার কথা ভাবছে প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত এই পরামর্শক কমিটি। এ ছাড়া ধাপে ধাপে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সর্বজনীন করা এবং এই স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে একই মন্ত্রণালয় বা একই তত্ত্বাবধানে রাখার পরামর্শ দিতে পারে তারা। পাশাপাশি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন করা, শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা বাড়ানো, দুর্বল বা পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের মধ্যেই পৃথক ব্যবস্থা রাখা, শেখার দিক বিবেচনা করে বিদ্যালয়গুলোকে লাল, হলুদ ও সবুজ- এই তিন শ্রেণিতে গ্রেডিং করাসহ একগুচ্ছ সুপারিশের চিন্তাভাবনা করছে পরামর্শক কমিটি। বিষয়গুলো সুচিন্তাপ্রসূত ও গণমুখী, এমনটা বলতেই হবে।
মনে রাখা চাই, শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা অর্জনের মূল শক্তি হলো শিক্ষক। তাই শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ ও সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের পারিবারিক জীবনে সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে তারা কি নির্বিঘ্ন ও শতভাগ উজাড় করে শিক্ষাদানে সমর্থ হবেন? তাই সবার জন্য শিক্ষার কথা ভাবতে হলে সব শিক্ষকের জন্য সুন্দর জীবনধারার নিশ্চয়তাও থাকা চাই। শিক্ষা পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদনে সার্বিক বিষয় থাকবে, এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। আগামী দিনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সুপারিশগুলো সুবিবেচনা পাবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

×