বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের ফলে একদিকে যেমন কৃষিজমি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশের উপরও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। এর মাটি প্রাকৃতিকভাবেই অত্যন্ত উর্বর এবং ফসল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এমন সময় আর বেশি দূরে নয়, যখন পর্যাপ্ত অর্থ থাকা সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত জমি থাকবে না।
একসময় গ্রামে দিগন্তজোড়া ফসলি জমি দেখা যেত, যা গ্রামীণ পরিবেশকে সৌন্দর্যমÐিত করত। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শিল্পায়নের কারণে এখন সে দৃশ্য বিরল হয়ে গেছে। এছাড়া নদীভাঙন এবং বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিজমি কমিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে অনেক ইটের ভাটা ও মিল-কারখানা গড়ে উঠছে। এগুলো শুধু কৃষিজমি দখল করছে না, বরং আশপাশের জমির উর্বরতাও নষ্ট করছে। পাশাপাশি পুকুর খননের মাধ্যমে কৃষিজমি নষ্ট করার প্রবণতাও বাড়ছে। এসব কারণে আবাদি জমির পরিমাণ দ্রæত কমে যাচ্ছে।
অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে শুধু কৃষিজমিই হ্রাস পাচ্ছে না, এর প্রভাবে মাটি, পানি, বাতাসও দূষিত হচ্ছে। অথচ কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী কৃষিকাজে নিয়োজিত। কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে একদিকে খাদ্য উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে কৃষিকাজে নিয়োজিত মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। এতে শহরের পরিবেশও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০-৪০ লাখ মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য কৃষিজমি বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেশকে প্রতিবছর অতিরিক্ত খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। অথচ সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা এবং জমিকে কাজে লাগিয়ে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে। অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধ করতে হলে সরকারের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ এবং জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবাদি জমিতে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করে অনুর্বর ও উঁচু জমি ব্যবহার করতে হবে। ইট তৈরির জন্য ফসলি জমির উর্বর মাটি ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প হিসেবে সিমেন্টের বøক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। নদীভাঙন রোধে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি বাড়তি জনসংখ্যার আবাসনের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে।
কৃষিজমি সুরক্ষার জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। জমি খনন করে পুকুর নির্মাণ, অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা স্থাপন, এবং ফসলি জমির মাটি অপব্যবহার রোধে কড়া আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। বড় নদীর জেগে ওঠা চরগুলোকে কৃষিজমি হিসেবে ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদনের ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।কৃষিজমি বাংলাদেশের অর্থনীতির ফুসফুস। এটি রক্ষা করতে না পারলে জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দেশের পরিবেশ, অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিজমি রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
শিক্ষার্থী, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া