ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

মাদক প্রবেশ থামান

প্রকাশিত: ১৯:২৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

মাদক প্রবেশ থামান

বাংলাদেশে মাদক বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলা হলেও প্রয়োগে নেই কঠোর অবস্থান। সম্প্রতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দেশটিতে গৃহযুদ্ধের সুযোগে ইয়াবাসহ মাদক পাচার চলছে ব্যাপকভাবে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির পৃষ্ঠপোষকতায়। মিয়ানমার থেকে মাদক পাচার রোধে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহল জোরদার করলেও মাদক পাচার বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। চলতি বছরের ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত গত ১২ দিনে ৫ জন মাদক পাচারকারীকে গ্রেপ্তারসহ প্রায় ২৪ কোটি টাকা মূল্যের আনুমানিক ৫ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে সীমান্তরক্ষী    বাহিনী বিজিবি। পুলিশের এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, ‘বাংলাদেশে ইয়াবার প্রায় পুরো চালান আসে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ হয়ে তা দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবার সঙ্গে সঙ্গে আসছে আইস ও হেরোইন। প্রতিনিয়ত মাদক পাচারে অভিনব সব পন্থা ব্যবহার করা হচ্ছে।’ দুঃখজনক বিষয় হলো, রাজধানীতে রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, পুরান ঢাকার বিভিন্ন জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ও কাওরানবাজার এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় এসব মাদক। সংবাদকর্মীদের সামনে পরলে তারা লুকানোর চেষ্টা করে, তারা চলে গেলে আবার সাবলীলভাবে চলে বিক্রির বন্দোবস্ত। আরও ভয়ংকর বিষয় হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন মাদক বিক্রির এলাকা সম্পর্কে জেনেও থাকে নিশ্চুপ। মিয়ানমার সীমান্তের আশেপাশে ইয়াবা তৈরির ৩৭টি কারখানার খোঁজ পাওয়া গেলেও গৃহযুদ্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত কয়েক বছরে এই সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাদকের কেন্দ্রভূমি দেশটিতে এতদিন সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং নানা সময়ে স্থানীয়, এমনকি দেশটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করেছে মাদক কারবারিরা।
বর্তমানে সরাসরি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির পৃষ্ঠপোষকতায় উৎপন্ন হচ্ছে ভয়ংকর এসব নেশাদ্রব্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেছেন, ‘জাতিসংঘ ১০ শতাংশ মাদক জব্দের কথা বললেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর পরিমাণ আরও কম। বাংলাদেশে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আগের তুলনায় অনেক সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। যে কারণে এর বিস্তার বাড়াটাই স্বাভাবিক।’ ইউএনওডিসির গবেষণা অনুযায়ী, ‘একটি দেশে যে পরিমাণ মাদক প্রবেশ করে এর ৯০ শতাংশ বাজারে ছড়িয়ে পড়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোচরে আসে মাত্র ১০ শতাংশ।’ দেশে বর্তমানে ২৮ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী। বেকার জীবনে প্রবেশ করে হতাশায় হচ্ছে নেশাগ্রস্ত। যা একটি দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। তাই নেশাজাতীয় যে কোনো দ্রব্য যাতে সহজলভ্য না হয়, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। এ ছাড়াও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যাতে কোনোভাবেই ইয়াবা, আইস বা হেরোইনের মতো মাদক প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী    বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

×