ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

গায়েবি মামলা প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

গায়েবি মামলা প্রত্যাহার

গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের ২৫টি জেলায় সাইবার সিকিউরিটি আইনে আড়াই হাজারের অধিক রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। যার অধিকাংশ ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের দমনে ব্যবহার করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার সাতদিনের মধ্যে এসব মামলা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। আগামী দিনেও যেন গায়েবি মামলার কোনো অস্তিত্ব না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। মামলাবাজি রাজনৈতিক ভাবনার অপসংস্কৃতির অশনি উপস্থিতি যেন কোনো দল কিংবা গোষ্ঠীকে শঙ্কিত না করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর গত ৫৪ বছরে আমরা মামলাজীবী সম্প্রদায়ের উল্লাস দেখেছি। ভিন্নমত দমনে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে মামলাবাজি করেছে দেশের প্রতিটি শাসক গোষ্ঠী। একটি দেশে লাখো মানুষের রুচির ভিন্নতার কারণে হাজারো মত থাকতে পারে। বহুমত, বহু পথের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি জাতি। মানুষের মতের ভিন্ন চিন্তার বর্ণিলতাই হলো স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমাজের অনন্য শৈল্পিক ইমারত।
বিগত সময়ের প্রতিটি যুগেই আমরা দেখেছি সরকার কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থে আইনের আশ্রয় নিয়েছে। নিত্যনতুন আইন তৈরি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের হাতেখড়ি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ প্রণয়নের মধ্য দিয়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এর অধীন গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের ৮টি সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট ৫৮১৮টি মামলা রয়েছে। নিরপরাধ ও নিরীহ নাগরিকদের হয়রানিমুক্ত রাখতে সরকারের এ ঘোষণা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। আড়াই হাজার মামলায় আসামি রয়েছে কয়েক লাখ। অন্যান্য জেলায় অনুসন্ধান সাপেক্ষে আগামী মাসের মধ্যে ফ্যাসিবাদী আমলে দায়ের করা সকল গায়েবি মামলা প্রত্যাহার সম্ভব বলে আইন উপদেষ্টা বলেছেন। মামলাগুলো চিহ্নিতকরণে সরকার চারটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। পুলিশ কর্তৃক মামলাগুলোর অধিকাংশ বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে মামলা। পুলিশের ওপর আক্রমণ ও স্পেশাল পাওয়ার এ্যাক্টে মামলা। অনেক আসামির সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আসামি এবং ঐ সকল মামলা বিএনপি-জামায়াতসহ বড় দলগুলোর আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের আগে কিংবা পরে এবং তিনটি পাতানো ভুয়া নির্বাচনের সমকালীন সময়ে দায়েরকৃত। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পাবলিক প্রসিকিউটর পালিয়ে যাওয়ায় মামলা প্রত্যাহারে এই কালক্ষেপণ।
এছাড়াও আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৩৬ ধরনের সত্যায়ন কার্যক্রম ১৩ ডিসেম্বর ২৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে অনলাইনে। ফলে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার অবসান হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীর অনলাইনের মাধ্যমে এই সেবা পাবেন বিদেশের মাটিতে। এতে দূতাবাসে ফি বাবদ প্রবাসীদের ৫০০/৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী উদ্যোগগুলো জনবান্ধব, নাগরিকদের জন্য কল্যাণকামী এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক।

×