ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

অভিজ্ঞতা থেকে লেখা

কানিজ ফাতেমা শাহিন

প্রকাশিত: ২১:১৮, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

অভিজ্ঞতা থেকে লেখা

মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চিকিৎসা

মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে চিকিৎসা। অথচ এমনই এক দুর্ভাগা জাতি আমরা সে অধিকার থেকেই বঞ্চিত। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ভুল চিকিৎসা, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট, সীমাহীন লোভ, মেডিসিন কোম্পানির দৌরাত্ম্য এসব কিছুর প্রভাব পড়েছে দেশের নিরীহ জনসাধারণের ওপর। অসুস্থতার কারণে দুই তিন বছর যাবত ঢাকার এক নামি দামি হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই আমার স্বামীকে নিয়ে যেতে হয়।

বাসার কাছাকাছি হওয়ায় গত সপ্তাহে মায়ের এক টেস্টের জন্য নিয়ে হাসপাতালে দেখিয়ে জানতে চাইলাম কত লাগবে টেস্টে? তারা জানালেন ছাব্বিশ হাজার টাকা। শুনে তো ভিরমি খাওয়ার অবস্থা। মগবাজারের স্বনামধন্য এক হাসপাতালে আম্মা নিয়মিত ডাক্তার দেখান। সেখানে জানতে চাইলাম কত লাগবে? বারো হাজার টাকা কিন্তু ম্যাডাম আমাদের মেশিনটা নষ্ট আছে এখন হবে না বলায় আমি অন্যত্র চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।
একজনের পরামর্শে ধানমন্ডির নামকরা এক হাসপাতালে গেলে তারা জানায় ষোলো হাজার টাকা লাগবে। সিদ্ধান্ত নিলাম ওখানে করাব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একই টেস্ট একেক হাসপাতালে একেক রকম ফি কেন? আর এত পার্থক্য কেন হবে? এ তো গেল টেস্টের বিষয়। ডাক্তারের ফিয়ের বিষয়ে যদি আসি তো দেখবেন মোটামুটি একটি হাসপাতালের ডাক্তার ফি নেন আট শ’ থেকে বারো শ’ টাকা, আর একটু ভালো মানের হাসপাতালে যাবেন আঠারো শ’ থেকে বিশ বাইশ শ’ পর্যন্ত দিতে হবে।
নিকটবর্তী হওয়ায় শহরের নামি-দামি হাসপাতালে প্রায়ই যেতে হয়। তাদেরও দেখেছি সেবার চেয়ে পয়সা কামানোর দিকেই বেশি মনোযোগ। কোনো কারণে ইমার্জেন্সি দরকার হলে রোগী নিয়ে যাবেন, একটু পর আপনাকে ডেকে নিয়ে কেমন খরচ হতে পরে জানাবে। আর সে টাকার অঙ্কটা নিহায়ত কম নয়। বিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। এ তো গেল দামি হাসপাতাল একটু কমদামিও কিন্তু কম নয়।

সিঁড়ি থেকে পড়ে পা মচকে যাওয়ায় ছেলে নিয়ে যেখানে গেলাম। সেখানে ডাক্তার এক্সরেসহ দুটো ব্লাড টেস্ট দিয়ে বিল দেখালেন পাঁচ হাজার এবং প্লাস্টার বাবদ দাবি করলেন পঁয়ত্রিশ শ’ সঙ্গে খরচ বাবদ আরও ছয় শ’ টাকা। এখানেও তো কম গেল না। লাভের অঙ্ক নিহায়ত কম নয়। কাজেই আমাদের ডাক্তার বাবুরা সরকারি হাসপাতাল অপেক্ষা প্রাইভেটে বেশি মনোযোগী।
এবার আসি মেডিসিন বিষয়ে। একই ডাক্তার যখন প্রথমে বিসলল ৫ লিখেন সেই তিনিই লিখেন বিসাপ্রো ৫ আবার পরেরবার গেলে লিখেন বেটাবিস ৫। কেন? তিনটা তিন কোম্পানির যদিও জেনেটিক নাম একই। কিন্তু প্রায় সব মেডিসিনের ক্ষেত্রে এরূপ হয় তখন রোগীর অবস্থা ভুক্তভোগী ছাড়া বুঝবে না কেউ। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলে দেখবেন কিছু লোক আপনার প্রেসক্রিপশন দেখতে চাইবে, ছবি তুলে নিয়ে দেখবেন ডাক্তার তাদের কোম্পানির ওষুধের নাম লিখেছেন কিনা। সেজন্যই হয়তো একেক সময় একেক নাম।
এখন তো বাংলাদেশের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল। তাদের মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেখানে করা হয় তা কতটা মানসম্পন্ন? ভর্তি রোগীর সেবার মান, অপারেশনের ক্ষেত্রে যোগ্য ডাক্তার, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, উপযুক্ত পরিবেশ এবং সর্বোপরি এনেসথেসিয়া দেওয়ার মতো যোগ্য লোকের অভাব। আর সবচেয়ে বেদনাদায়ক হচ্ছে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হলে জবাব না দিয়ে পার পেয়ে যাওয়া। এদের রোধ করার মতো কোনো আইন কি আছে এদেশে? থাকলে বারবার কেন ঘটছে এমন ঘটনা?
দেশে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরবর্তীকালে যারাই দেশ পরিচালনা করবেন, তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে সবই একটা নিয়ম নীতিতে যেন আসে। বাজারে যে জিনিস দশ টাকায় পাই, সুপার শপে তা বারো তেরো টাকা হতে পারে। আঠারো কুড়ি টাকা নয়। তেমনি যেন প্রতিটি চিকিৎসালয়েও সেবা এবং অর্থের বিষয়ে সামঞ্জস্য থাকে । আকাশ পাতাল পার্থক্য যেন না থাকে। অনিয়ম থেকে পরিত্রাণের উপায় কি নেই?

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা থেকে

×