ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

বেতন বাড়লে কি ফি কমবে?

বিলকিস নাহার মিতু

প্রকাশিত: ২১:১৪, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

বেতন বাড়লে কি ফি কমবে?

ডাক্তারি পেশা মানবতার সেবা

ডাক্তারি পেশা মানবতার সেবা; এটি একটি মহান কাজ। তারা আমাদের সমাজের খুঁটি, যারা স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ গঠন হতে পারে। কিন্তু এই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে উঠে আসছে অতিরিক্ত ভিজিট গ্রহণ, ভুল চিকিৎসাসহ নানা রকম অভিযোগ। রোগীদের অভিযোগ, তারা হাসপাতাল/ক্লিনিকে গেলেই ডাক্তাররা অনেক টেস্ট ধরিয়ে  দেন। ওষুধ লিখে দেন নির্দিষ্ট কোম্পানির, কারণ এখান থেকে  সেই ডাক্তার মুনাফা লাভ করেন।

গ্রামাঞ্চলে হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোতে ভালো কোনো পরীক্ষণ যন্ত্র না থাকায় ডাক্তার অনুমানের ওপর ভুল চিকিৎসা করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। এছাড়া সরকারি ডাক্তাররা ঝুঁকে পড়ছেন প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে। যার ফলস্বরূপ বেসরকারি হাসপাতালে অধিক সময় ব্যয় করে চড়া ভিজিটে রোগী দেখেন।  ছোটবেলায় যে ডাক্তার ‘আমার জীবনের স্বপ্ন’ রচনাতে লিখতেন,বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে গ্রামের সবার চিকিৎসা করবেন।

কিন্তু ডাক্তার হবার পড়ে দেখা যায় গ্রামে কেউ আর ডাক্তারি করতেই চায় না, সবাই শহরমুখী হয়। এজন্য গ্রামের মানুষগুলো চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। গত বছর শোনা গেছিলো খৎনা করাতে গিয়ে ডাক্তার সেই শিশুকেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল এবং এই ঘটনা আবারও ঘটেছিল। এছাড়া গর্ভবতী মা পেলেই সিজার করানো হচ্ছে এবং আমরা  সেটা দেখতেও পাচ্ছি নর্মাল ডেলিভারির হার কমে গেছে। বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলায় এক স্বনামধন্য ক্লিনিকে জ্বরের রোগীকে দেওয়া হয়েছে জন্ডিসের চিকিৎসা।

শুধু মোরেলগঞ্জ না দেশের বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ এসেছে যে তারা ভুল চিকিৎসা করেছেন। মাঝেমধ্যে শোনা যায় ডাক্তার নিজের দায়িত্ব অন্য কারও কাছে চাপিয়ে দিয়ে যান যেকোনো বড় অপারেশনের  ক্ষেত্রেও। ডাক্তারদের অনুপস্থিতি ও গাফিলতির কারণে প্রাণ হারাতে হয় অনেককে। ডাক্তারদের চড়া ভিজিট ফির কারণ হিসেবে ধরতে পারি সরকারি ডাক্তারদের কম বেতন। এ কারণে তারা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে বেশি টাকা ভিজিট নিয়ে থাকেন।  

বেসরকারিভাবে পাস করা ডাক্তারদেরও একটা নির্দিষ্ট বেতনের নিয়ম করা উচিত যাতে রোগীদের ওপর উচ্চ মূল্যে ভিজিট না নেওয়া হয়। সরকারি আইন প্রণয়ন করা উচিত বেতন ও ফি এর ব্যাপারে। সরকার এই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রোগীদের দুরবস্থা কখনোই কাটবে না। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকেরা পাহারা দেয় যে ডাক্তার তাদের কোম্পানির ওষুধ লিখছে কিনা প্রেসক্রিপশনে। এই ব্যবস্থা বন্ধ করা উচিত।

ডাক্তারদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার কারণ হলো তারা প্রাইভেট হাসপাতালে ওই সময়টা ব্যয় করে যেটা বন্ধ করা উচিত। কোনো ডাক্তারের দ্বারা কারও গুরুতর ক্ষতি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে তার লাইসেন্স বাতিল করা হোক। গত বছর দেখা গেছে, ঢাকা মেডিক্যালের মতো জায়গায় ভুয়া ডাক্তারের আবির্ভাব। এক্ষেত্রে বলা যায়  মেডিক্যালের কড়া নজরদারি প্রয়োজন এবং এরকম লোকদের প্রশাসন কর্তৃক যথাযথ শাস্তি প্রদান করা। এছাড়া মেডিক্যাল শিক্ষাকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করা উচিত বলে আমি মনে করি। 

সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা থেকে

×