সম্পাদকীয়
পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মানসিক পরিবর্তন, মনোবল বৃদ্ধি ও উন্নত নৈতিকতায় সমৃদ্ধ করতেই পোশাকের পরিবর্তন আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাহিনীর সকল সদস্যকে নতুন পোশাক দেওয়া হবে। ব্রিটিশ আমলের শুরুতেই ভারতবর্ষে আধুনিক পুলিশিং কার্যক্রম চালু হয়। প্রথমদিকে কোনো নির্দিষ্ট পোশাক ছিল না।
১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ অফিসার স্যার হ্যারি লুমসডেলের পরামর্শে হাল্কা হলুদ ও বাদামি রঙের মিশেলে পোশাক করা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে ঐ বছরেই পুলিশের জন্য খাকি রং গৃহীত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ২০০৪ সালে পুলিশের পোশাকে বড় পরিবর্তন আনা হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য ‘হাল্কা জলপাই’ রং এবং জেলা পুলিশের জন্য ‘গাঢ় নীল’। র্যাবের জন্য ‘কালো’ এবং এপিবিএন সদস্যদের জন্য ‘খাকি, বেগুনি ও নীল রং’-এর মিশ্রণে।
পুলিশ বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টি-২০২০ সাল থেকেই গণমাধ্যমে আলোচিত ছিল। ২০২১ সালে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের জন্য কয়েকটি পোশাক প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু নানা কারণে তা চূড়ান্ত করা হয়নি। দুই দশক পর পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যগণ নতুন পোশাক ও নতুন লোগো পাচ্ছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সমাজের সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। মাদক নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ও অপরাধ দমনে এলিট ফোর্স র্যাবেরও একটি সুনাম রয়েছে।
কিন্তু গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা রাখা এবং বাহিনীগুলোর বেপরোয়া কর্মকা- দেশে-বিদেশে চরম সমালোচনা সৃষ্টি করে। মতাদর্শিক ভিন্নতায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, এমনকি ছিনতাই-ডাকাতির সঙ্গেও কোনো কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা ছিল। নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন এবং কক্সবাজারের কাউন্সিলর একরামুল হকের হত্যাকা- আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হয়।
দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যে পোশাক পরে বাহিনীর সদস্যরা নিজ দেশের ভাইবোনদের বুকে গুলি চালিয়েছে, ঐ পোশাক দেশের জনগণ আর দেখতে চাইবে না, এমনটিই স্বাভাবিক। কোনো একটি বাহিনীর লোগোর পরিবর্তন, রংয়ের পরিবর্তন কিংবা পোশাকের পরিবর্তন শুধু সর্বজনীন কল্যাণ বয়ে আনবে না, যদি চারিত্রিক পরিবর্তন না আসে।
যেহেতু বাহিনীগুলোর প্রতিটি সদস্যই সাধারণ জনগণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত, তাই সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও পারিপার্শ্বিক সংস্কৃতির অবস্থার খোঁজখবর নিতে হবে। ছোট বড় কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা, মাদকাসক্ত কিনা, পরোপকার ও মানবকল্যাণের মানসিকতা কেমন ইত্যাদি।
উন্নত আধুনিক ও মানবিক সিলেবাস কাঠামো বাহিনীগুলোর প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েলে অন্তর্ভুক্তকরণ এবং আন্তঃবাহিনীর মধ্যে ভালো কাজের পুরস্কারের ব্যবস্থা এবং মন্দ কাজে তিরস্কার, পদাবনতি ও চাকরিচ্যুতির মতো শাস্তির বিধান রাখা আবশ্যক। এই বিষয়গুলো নির্মোহচিত্তে যাচাই ও বাস্তবায়ন করলে আশা করা যায়, আগামী দিনে শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠনে এ তিন বাহিনীর সদস্যগণ যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবেন।