সম্পাদকীয়
রূপকথার রাজপুত্রের মতো রাজসিক প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী রাষ্ট্রপ্রধান। এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৭ সালে ক্যাপিটল ভবনের পাশে ন্যাশনাল মলে জাঁকজমকের সঙ্গে বিপুল আয়োজনে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।
এবারও অনুরূপ হওয়ার কথা ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানকে বিশ্বমঞ্চ বানানোর পরিকল্পনার বিষয়টি এসেছিল গণমাধ্যমে। তবে তীব্র শীত ও ঠা-া আবহাওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ গ্রহণ করেন ক্যাপিটল ভবনেই। তাই বলে অবশ্য আনুষ্ঠানিক নানা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের কোনো কমতি ছিল না।
শপথ গ্রহণের পর অভিষেক ভাষণ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, এখন থেকে আমেরিকার সুবর্ণ যুগের সূচনা হলো। আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আরও উন্নতি করবে। সারাবিশ্বে সক্ষম হবে সম্মান অর্জনে। যুক্তরাষ্ট্রকে দেখে ঈর্ষা করবে অন্যান্য দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবেন তিনি। বিশ্বে তুলে ধরবেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি। অভিষেকের দিনটিকে তিনি উল্লেখ করেন স্বাধীনতা উৎসব হিসেবে।
শপথ গ্রহণের পরপরই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। এর মধ্যে বহুল আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। এবারের নির্বাচনী প্রচারের সময়েও এ বিষয়ে তিনি সোচ্চার ছিলেন। এ ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সব দপ্তরের কার্যকারী বিষয়ক গঠন প্রক্রিয়া, আয়রন ডোমের মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ ইত্যাদি।
পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছু আগ্রাসী নীতির কথাও উল্লেখ করেছেন ইতোপূর্বে। যেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ প্রতিবেশী কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা, গ্রিনল্যান্ড দখল, পানামা খালের অধিকার দাবি এবং মেক্সিকো সীমান্তে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অবৈধ অধিবাসী ঠেকাতে।
উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন মোটেও সহজ ছিল না। চার চারটি ফৌজদারি মামলা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এর একটিতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় দু’দুবার হামলার শিকার হয়েছেন। তবু শেষ পর্যন্ত ঘুরে দাঁড়িয়েছেন একজন বীর মার্কিনীর মতো। যুক্তরাষ্ট্রের দুর্ধর্ষ ও বেপরোয়া একজন কাউবয়ের মতো বিরূপ পরিস্থিতিতেও টিকে থাকার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যখন গোটা পৃথিবী অশান্ত এবং যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত। একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অন্যদিকে ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ-ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, লেবানন ও ইরানে হামলা এবং সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটেছে। স্বীকার করতে হবে যে, বিশ্বব্যাপী কিছু বিরূপ মনোভাব সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক প্রত্যাশা করে বিশ্ববাসী, অন্যতম শক্তিধর পরাশক্তি ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে।
সেই প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বিশ্ববাসীর একান্ত প্রত্যাশা, ডোনাল্ড ট্রাম্প মানবিক বিবেচনায় শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করবেন। তিনি ইতোপূর্বে প্রতিশ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন। করোনা মহামারি পরবর্তী বিশ্ব এমনিতেই অর্থনীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।
প্রায় সর্বত্রই মূল্যস্ফীতি সাধারণ নাগরিকের নাগালের বাইরে চলে গেছে। জ্বালানি সংকটও তীব্র। এমন এক অশান্ত বিশ্বে ট্রাম্প দায়িত্ব পালন করতে পারেন ঈশ্বরপ্রেরিত একজন দেবদূতের ভূমিকায়। আর তা হলেই আমেরিকা আবার মহান হয়ে উঠবে বিশ্বে।