ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

টরন্টোর চিঠি

পিয়েরে পোলিয়েভ-আগামীর কানাডার প্রধানমন্ত্রী

ড. শামীম আহমেদ

প্রকাশিত: ২২:২৭, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

পিয়েরে পোলিয়েভ-আগামীর কানাডার প্রধানমন্ত্রী

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ

গত সপ্তাহের টরোন্টোর চিঠি কলামে লিখেছিলাম যে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করেছেন, যা কার্যকর হবে নতুন লিবারেল নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর। তাঁর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বর্তমানে তাঁদের অবস্থান কনজারভেটিভ পার্টি, ব্লক কেবেকোয়, এমনকি এনডিপিরও পেছনে। ট্রুডো তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে সংসদ অধিবেশনও মুলতবি ঘোষণা করেছেন দলকে চূড়ান্ত ভরাডুবি থেকে রক্ষা করে নতুন নেতা নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

লিবারেল পার্টি ৯ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে নতুন নেতা নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছে। দলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়ার ওপর, যা দলের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে। উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, তবে তিনি নেতৃত্বে আগ্রহী নন। নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের উচ্চ এন্ট্রি ফি এবং নিবন্ধিত ভোটারদের কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত দলের মধ্যে ব্যাংক অব কানাডার সাবেক গভর্র্নর মার্ক কারনির বেশ জনপ্রিয়তা আছে বলে মনে হচ্ছে। ট্রুডোর সময়কালে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং অভিবাসন নীতির সমালোচনা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে ভারত, চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
এমতাবস্থায় এটি প্রায় নিশ্চিত যে, কানাডার রক্ষণশীল দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান পিয়েরে পোলিয়েভই হতে যাচ্ছে কানাডার ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী। আপৎকালীন সময়ে, অর্থাৎ আগামী নির্বাচনের আগে এবং নতুন নেতা নির্বাচনের পরে ট্রুডোর পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে অল্প সময়ের জন্য যদিও লিবারেল পার্টি একজন প্রধানমন্ত্রী পাবে, কিন্তু তাঁর ভূমিকা হবে খুবই গৌণ। তাই বরং জেনে নেওয়া যাক কানাডার ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে পোলিয়েভকে।

পিয়েরে পোলিয়েভ ১৯৭৯ সালের ৩ জুন কানাডার আলবার্টা প্রদেশের ক্যালগারিতে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরপরই তাঁকে দত্তক নেন স্কুলশিক্ষক মার্লিন এবং ডোনাল্ড পোলিয়েভ। তিনি ক্যালগারির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শাওনেসি এলাকায় বড় হয়েছেন। ছোটবেলায় তিনি হকি, ডাইভিং এবং রেসলিং করতেন। তাঁর রাজনৈতিক আগ্রহ শুরু হয় ক্যালগারির হেনরি ওয়াইজ উড হাইস্কুলে পড়ার সময়। তিনি কনজারভেটিভ ক্লাবে যোগ দেন এবং রাজনৈতিক বৈঠকগুলোতে অংশগ্রহণ করা শুরু করেন।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি ভবিষ্যৎ মন্ত্রী জেসন কেনির জন্য রিফর্ম পার্টির সদস্য সংগ্রহে কাজ করেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি ভ্যাঙ্কুভারে অনুষ্ঠিত রিফর্ম পার্টির ১৯৯৬ সালের জাতীয় সম্মেলনে অংশ নেন। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়, ছাত্রদের রাজনীতি করতে বারণ করা হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বের দেশগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অনেক অল্প বয়স থেকেই নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন।

যুক্তরাজ্যে এমনকি অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজের মতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতি ছাত্রদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই কথা বলা যায় কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টো, ম্যাকগিল বা আমেরিকার হার্ভার্ড বা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও। 
পোলিয়েভ পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার সময় তিনি কানাডিয়ান অ্যালায়েন্সের নেতা স্টকওয়েল ডের জন্য কাজ করেন এবং রাজনীতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হন। ২০০৪ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে পিয়েরে পোলিয়েভ নেপিয়ান-কার্লেটন রাইডিং থেকে সদস্য নির্বাচিত হন এবং কনজারভেটিভ ককাসের সবচেয়ে কম বয়সী সদস্যদের একজন হয়ে ওঠেন।

তিনি বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেমনÑ পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি। ২০১৩ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালে তিনি এমপ্লয়মেন্ট এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে কনজারভেটিভ পার্টি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি অর্থ এবং শিল্প সম্পর্কিত ছায়া মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। ২০২২ সালে তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হন এবং কানাডার রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান লাভ করেন।

২০১৭ সালে পিয়েরে পোলিয়েভ আনাইদা গালিন্ডোকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে এবং পরিবারটি অন্টারিওর গ্রিলি এলাকায় বসবাস করে। পিয়েরে পোলিয়েভ তাঁর জনপ্রিয় ও লিবার্টারিয়ান দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত। তিনি জীবিকা ব্যয় এবং সরকারি জবাবদিহির মতো বিষয়ে গুরুত্ব দেন। তাঁর নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি জনমত জরিপে শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করেছে এবং ২০২৫ সালের ফেডারেল নির্বাচনে বর্তমান সরকারের দল লিবারেল পার্টির চেয়ে প্রায় ২০ পয়েন্টে এগিয়ে আছে। 
পিয়েরে পোলিয়েভের জীবন, ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে সাংবাদিক অ্যান্ড্রু লটন লিখেছেন চরবৎৎব চড়রষরবাৎব: অ চড়ষরঃরপধষ খরভব। বইটি পড়লে জানতে পারবেন পিয়েরে পোলিয়েভের যখন প্রায় ১২ বছর তখন তার বাবা-মা আলাদা হয়ে যান এবং তার বাবা পরবর্তীতে সমকামী হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন। পারিবারিক এই বিচ্ছেদের পরেও তিনি তার বাবা-মা দুজনের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন।

বড় হওয়ার পর তিনি তার জৈবিক মা এবং নানার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানতে পারেন। ছোটবেলা থেকেই পিয়েরে পোলিয়েভের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। কিশোর বয়সে তিনি রিফর্ম পার্টির জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি অত্যন্ত অনুপ্রাণিত ও উচ্চাকাক্সক্ষী স্বভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন।

তখন থেকেই তাঁর আত্মবিশ্বাসের মাত্রা তাঁকে অনেকের কাছে অহংকারী বলে মনে হয়। তবে এটি তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত হয়। জাস্টিন ট্রুডোর বিপরীতে তাই পোলিয়েভকে একজন অত্যন্ত আগ্রাসী ও পরিবর্তনমুখী নেতা হিসেবে অনেকে বিবেচনা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকির মুখে কানাডিয়ানরা মনে করছেন তাদের পোলিয়েভের মতো একজন আগ্রাসী প্রধানমন্ত্রীরই দরকার।

অবশ্য তাঁর নীতিগত অবস্থান প্রথম দিকে বিতর্কিত ছিল। উদাহরণস্বরূপ তিনি প্রথমদিকে সমকামী বিবাহের বিরোধিতা করেন। তবে পরবর্তীতে হয়তো কানাডার আর্থ-সামাজিক এবং নিজের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এটি যে কানাডার সমাজের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য সেটি স্বীকার করে নেন। এটি তাঁর নীতিগত গঠনশীলতা এবং রাজনৈতিক দূরদর্শিতার একটি লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পিয়েরে পোলিয়েভ তাঁর বক্তৃতার ধরন, যেটি যুক্তি, আক্রমণ ও কৌতুকে পরিপূর্ণ এবং লড়াকু রাজনৈতিক শৈলীর জন্য পরিচিত। তাঁর কৌশল এবং কঠোর সমালোচনা তাঁকে সমর্থকদের কাছে জনপ্রিয় করেছে। তবে এটি একই সঙ্গে বিরোধীদের কাছে তাঁকে বিতর্কিত করেছে। তাঁর নেতৃত্বে কনজারভেটিভ পার্টি জনমত জরিপে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছে এবং এটি তাঁকে কানাডার ফেডারেল রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত করেছে।

একজন মানুষ হিসেবে পোলিয়েভ পারিবারিক জটিলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। হয়তো সেটিই তাঁকে কানাডার মতো একটি উন্নত দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি প্রাথমিক স্তরের রক্ষণশীল রাজনীতি থেকে শুরু করে আধুনিক কানাডিয়ান সমাজের জটিলতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। তিনি একজন নেতা, যার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক দক্ষতা তাঁর শক্তি হলেও এটি অনেক সময় বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অ্যান্ড্রু লিটন তাঁর বিশ্লেষণে পিয়েরে পোলিয়েভকে একজন জটিল, উচ্চাকাক্সক্ষী অনুপ্রাণিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরেছেন। সক্রিয় যুবক থেকে একজন জাতীয় নেতা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যাত্রা তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাসের সঙ্গে জনপ্রত্যাশার ভারসাম্য রক্ষা করার চ্যালেঞ্জগুলোকেও প্রতিফলিত করে।
এবার পোলিয়েভকে কানাডার আগামী নির্বাচনের একজন প্রার্থীর দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখা যায়। পোলিয়েভ গত কয়েক বছরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এবং তাঁর পেছনে মূল অবদান ট্রুডোর। কেন পোলিয়েভ এত জনপ্রিয় সেটা বোঝার জন্য কেন ট্রুডো ব্যর্থ সেটিও একটু খতিয়ে দেখতে হবে। জাস্টিন ট্রুডো সরকারের প্রায় দশ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে, তাঁকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।

শুরুর দিকে স্টিফেন হার্পারের কঠোর শাসনের পর ট্রুডোর উন্মুক্ত এবং সহনশীল রাজনীতি দেশবাসীর কাছে একটি নতুন আশার প্রতীক ছিল। তিনি এমন একটি সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যা খোলামেলা, জবাবদিহিমূলক এবং গণতান্ত্রিক হবে। তিনি আদিবাসী জনগণের অধিকার রক্ষা, মধ্যবিত্ত শ্রেণির উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং কানাডাকে একটি আলোকিত পথের দিকে পরিচালিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রায় কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

ট্রাম্পের চার বছরের শাসন এবং বৈশ্বিক মহামারির পরে তিনি রাজনৈতিক বিভাজন এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণি বিপুল আর্থিক সংকটে ভুগছে এবং নির্বাচন ব্যবস্থা আগের মতোই অকার্যকর হয়ে আছে। তাঁর সরকার নিজেদের জলবায়ু নীতিগুলোকে রাজনৈতিক ছাড়ের মাধ্যমে দুর্বল করে ফেলেছে। ট্রুডোর ব্যর্থতা থেকে ভবিষ্যৎ রাজনীতিবিদদের কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। যেমন- প্রথমত, তাঁদের তাঁর নীতি অনুসরণ করা উচিত নয়, যেখানে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কার্যত কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

লিবারেল রাজনীতি সফল হতে পারত তখনই যদি তাঁরা কম প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা অর্জন করতে পারত। ট্রুডোর বিশেষ প্রবণতা ছিল উল্টোটা। তিনি সব সময় বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ পর্যন্ত তা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যখন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা তলানিতে পৌঁছে তখন প্রগতিশীলদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হলে জনগণের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হতে পারে।

তাঁর পরবর্তী সরকারের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো, তাঁরা যেন কানাডার জন্য একটি একত্রিত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টি সামনে তুলে ধরে। সার্বিক বিবেচনায় একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত এবং পলিসি নির্ধারণ, সঙ্গে সঙ্গে কানাডিয়ানদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব পোলিয়েভকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। আসন্ন নির্বাচনে পোলিয়েভ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এবং মূল্যবৃদ্ধি সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কার্বন ট্যাক্স বাতিল তাঁর প্রতিশ্রুতির অন্যতম, যা বেশিরভাগ কানাডিয়ান সমর্থন করে। পোলিয়েভ নিয়মিতভাবে নিজেকে মধ্যবিত্ত কানাডিয়ানদের পক্ষে একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যারা মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ বাড়ির দাম এবং অতিরিক্ত করের কারণে সমস্যায় আছেন। লিবারেল সরকারের ব্যয় এবং অর্থনৈতিক নীতির সমালোচনা করে পোলিয়েভ প্রায়ই এই পদক্ষেপগুলোকে মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী করেন এবং ‘জাস্টিনফ্লেশন’ শব্দটি ব্যবহার করেন, যা তাঁর মতে ট্রুডোর নীতিগুলেরা কারণে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পোলিয়েভ কানাডার এনার্জি সেক্টর সম্প্রসারণে পক্ষে, বিশেষ করে তেল এবং গ্যাস খাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাজের সুযোগ তৈরি করতে চান। তিনি পাইপলাইন নির্মাণ এবং এনার্জি সেক্টরে কানাডার একক আধিপত্য অর্জনের পক্ষে, যা তাঁর মতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। 
পোলিয়েভ জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেন, যা তাঁর বার্তাগুলোেক আরও সহজবোধ্য করে তোলে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর দক্ষ ব্যবহার তাঁকে সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম করেছে। একটি কৌশল যা তরুণ এবং ডিজিটালি দক্ষ শ্রোতাদের মধ্যে তাঁর পরিচিতি বাড়িয়েছে। 
বাড়ির দাম কমানো এখনো পোলিয়েভের প্ল্যাটফর্মের একটি প্রধান নির্বাচনী প্রচারণা। কানাডায় বাড়ির সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠার সঙ্গে তিনি কার্যকরী সমাধানগুলো প্রস্তাব করেছেন, যেমনÑ বাড়ি নির্মাণে সরকারি প্রতিবন্ধকতা কমানো এবং গৃহনির্মাণে ব্যক্তিগত খাতের প্রতিযোগিতা উৎসাহিত করা। এই নীতিগুলো কানাডিয়ানদের কাছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে, যাঁরা বাড়ির বাজারে প্রবেশ করতে লড়াই করছে, অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

পোলিয়েভের পপুলিস্ট বার্তা- যাকে ‘সাধারণ কানাডিয়ানদের’ পক্ষে নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়Ñ তাঁর আবেদনকে প্রসারিত করেছে। জীবনযাত্রার ব্যয়, খাদ্য, গ্যাস এবং ভাড়ার মতো সমস্যাগুলো সমাধান করে, তিনি সেই ভোটারদের মধ্যে সমর্থন অর্জন করেছেন, যাঁরা ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক এলিটদের দ্বারা উপেক্ষিত অনুভব করেন।

তিনি এমন সমস্যাগুলোতে মনোযোগ দিয়েছেন যা প্রতিদিনের কানাডিয়ানদের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং তাঁর নীতিমালা সরকারের প্রতি ভিন্ন ও বাস্তবসম্মত সমাধানের প্রস্তাব দেয়। এনার্জি সেক্টর, বাড়ি এবং আর্থিক বিষয়ে তাঁর দক্ষতা ও প্রাসঙ্গিকতা নিশ্চিত করে যে, তিনিই হতে যাচ্ছেন কানাডার আগামী প্রধানমন্ত্রী। 


১৯ জানুয়ারি ২০২৫

[email protected]

×