সম্পাদকীয়
বছরের শুরুতে বিদ্যালয়ে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই নিয়ে বিপুল আগ্রহ ও কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। তারা আশা করে, নতুন ক্লাসে যোগদানের আগেই তাদের হাতে আসবে নতুন ক্লাসের এক সেট বই। সেটি না পেলে স্বভাবতই তারা দমে যায়। সময়ক্ষেপণে তাদের ভেতরে হতাশা তৈরি হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়। এবার সময়মতো ছাপানো সম্ভব না হওয়ায় দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি, অথচ ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।
শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই না থাকায় সংগত কারণেই তারা পড়ার টেবিলে ঠিকমতো বসতে পারছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক যখন পড়াচ্ছেন, তখন শিক্ষার্থীদেরও মুখে হাত। শিক্ষক যখন পড়ান, তখন শিক্ষার্থীরা বই খুলে বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু চলতি বছর পাঠ্যবই সংকটে এবার এসবের কিছুই হচ্ছে না। এতে ক্রমেই তারা পিছিয়ে পড়ছে।
নতুন বই প্রাপ্তির জটিলতার ভেতরে এক সপ্তাহ আগে একটি বাংলা অনলাইন পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, বহু শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকের কাছে আবদার করে বিকল্প পথে বিনামূল্যের বই বেশি দাম দিয়ে কিনে দেওয়ার জন্য। বাস্তবতা এরকম, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো সরবরাহ করতে পারেনি সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছে কিছু বই। পরে আরও কিছু বই সরবরাহ করা হলেও বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছায়নি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, যৎসামান্য বই পাওয়া গেছে, তা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি বই হাতে পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হবে। সব ক্লাসের বিনামূল্যের পাঠ্যবই পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর নীলক্ষেতের বিভিন্ন লাইব্রেরিতেও। বাংলাবাজার থেকে একটি চক্র পাঠ্যবই কিনে চড়া দামে বিক্রি করছে শিক্ষার্থীদের কাছে। এই সংবাদ রীতিমতো ক্ষুব্ধ করেছে দেশবাসীকে। রাজধানীর নীলক্ষেতে প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই বিক্রি হতে দেখে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে, এসব বই বাংলাবাজার থেকে কিনে এনেছেন বিভিন্ন লাইব্রেরির মালিকরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না, অথচ নীলক্ষেতে সবই পাওয়া যাচ্ছে- এটা কিভাবে সম্ভব? এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পরিষ্কার করে এই বলে যে, এক শ্রেণির মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মালিক এই কাজ করছে। তার মানে কিছু ছাপাখানা বিতরণের জন্য সরকারকে বই সরবরাহ না করে খোলাবাজারে দিয়েছে তাৎক্ষণিক বেশি মুনাফার আশায়। ইতোমধ্যে সরকার অবশ্য অসৎ প্রিন্টার্সদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে।
গত সোমবার জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চড়া দামে নতুন বইয়ের ফটোকপি বিক্রির তথ্য। সপ্তম শ্রেণির যে গণিত বই বিনামূল্যে পাওয়ার কথা, সেটির ফটোকপি অনেকে কিনছেন ৫০০ টাকা দিয়ে। এটা ঠিক যে, এবার বছরের শুরুতে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে কর্তৃপক্ষ কিছুটা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ৪০ কোটি বই ছাপাতে কত হাজার টন কাগজ প্রয়োজন, দেশে ওই পরিমাণ কাগজ মজুত আছে কিনা তথা সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবনে সফল হয়নি কর্তৃপক্ষ।
বই ছাপানোর জন্য ছাপাখানা নির্বাচনও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এক্ষত্রেও সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ পরিমাণে সক্রিয় হওয়া। এবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলে আগামী বছরের শুরুতে নিয়ম অনুযায়ী নতুন বই বিতরণে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।