সম্পাদকীয়
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নবগঠিত নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করেছে সোমবার। এদিন সকালে সাভার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার উপস্থিত থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি-২০২৫-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ইসির এই কার্যক্রম চলবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এরপর নিবন্ধন কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি। এর জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাছে ১৭৫টি ল্যাপটপ, ২০০টি স্ক্যানার এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য চার হাজার ৪৩০০টি ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা এর আগে যাদের জন্ম তাদের এবং বিগত ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যারা বাদ পড়েছেন তাদের তালিকাভুক্তি এবং মৃতদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তনের জন্য তথ্যাদি সংগ্রহ করা হবে। দেশব্যাপী এ বিশাল কার্যক্রমে অংশ নেবেন নির্বাচন কর্মকর্তা, সুপারভাইজার ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ, মৃত ভোটারদের নাম কর্তনের তথ্যাদি এবং নতুন ভোটারের তথ্য বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্ট্রেশন সফটওয়্যারের সাহায্যে ডাটা এ্যান্ট্রি ও ডাটা আপলোড করা যাবে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত।
এরপর ৫ মে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ কর্তৃক খসড়া ভোটার তালিকার পিডিএফ প্রস্তুত ও সিএমএস পোর্টালে লিংক সরবাহ করা হবে। এ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসিরউদ্দীন বলেছেন, আমরা রাজনীতির মধ্যে থাকতে চাই না। আমরা জাতিকে একটি ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন উপহার দিতে চাই। যেখানে সবাই স্বচ্ছ ও স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। এর জন্য আমরা একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমতল মাঠ তৈরি করতে ইচ্ছুক। এটি সমগ্র দেশ ও জাতিরও ঐকান্তিক প্রত্যাশা।
নির্বাচন কমিশন আগেই ঘোষণা করেছে যে, এবারে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে স্বচ্ছ বাক্সে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত স্বস্তি বয়ে এনেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। ইভিএমে ভোটগ্রহণ, গণনা ও ফল ঘোষণা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে প্রবল আপত্তি ছিল এবং আছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের।
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলো কি না- সেটা নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্নমুখী সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নির্বাচন ব্যবস্থায় কিছু সংস্কার ও সুপারিশ করা হয়েছে সকল দলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে।
স্বীকার করতে হবে যে, অতীতে প্রায় সব রাজনৈতিক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাসহ অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। ভুয়া ভোটার তালিকার অভিযোগও আছে। এবারে সেসব হবে না বলেই প্রত্যাশা। তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।