সীমান্তে বাংলাদেশ দুটি বড় বিপদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। একটি হলো চলমান সীমান্ত হত্যা, অপরটি শূন্য রেখায় ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ। বাংলাদেশের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী দেশপ্রেমিক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বীর জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধে আপাতত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত হত্যা চলছেই। হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে ছয়শতাধিক বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হন। এত বিপুলসংখ্যক নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের প্রাণহানি প্রমাণ করে বিএসএফের সুসভ্য প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে কিংবা তারা প্রকৃতিগতভাবেই বর্বর। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএফের দ্বারা ৬০৭ জন বাংলাদেশী নাগরিক বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাবে এ সময়কালে নিহত হয়েছেন ৫৮২ জন বাংলাদেশী নাগরিক এবং আহত হয়েছেন আরও ৭৬১ জন। আহত-নিহতের এই পরিসংখ্যান গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি করা। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কেননা, বিএসএফের পক্ষ থেকে যেমন তথ্য গোপন করা হয়, তেমনি আহত-নিহতের শিকার হওয়া বাংলাদেশী পরিবারগুলোও ঝামেলা এড়াতে ঘটনা চেপে যায়।
সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড জানাজানি হওয়ার পর প্রত্যেক ঘটনাতেই বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক হয়। বিএসএফ প্রতিবারই সীমান্তে আর গুলি না চালানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রক্ষা করা হয় না। এমনকি হত্যাকাণ্ডের জন্য কোনো প্রকার উদ্বেগ কিংবা দুঃখ প্রকাশ করা হয় না। বরং গুলিতে প্রাণ হারানোর ঘটনাকে ভারতীয় পক্ষ থেকে হত্যা না বলে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২০১৯ সালের ১২ থেকে ১৫ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের বৈঠকের পর তৎকালীন বিএসএফ ডিজি রজনীকান্ত মিশ্র জোর দিয়ে বলেছিলেন, এ জাতীয় মৃত্যুগুলো হত্যা নয়, অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু। তিনি আরও বলেন, সীমান্তে দুর্বৃত্তরা হামলা চালালে আত্মরক্ষায় বিএসএফ সদস্যরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে।
বিএসএফের আত্মরক্ষার এ অজুহাত গ্রহণযোগ্য কিংবা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সীমান্তে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আইন কোনো বাহিনীকে বিশ্বের কোথাও বেসামরিক নিরস্ত্র লোকদের হত্যা কিংবা নির্যাতনের অনুমতি দেয় না। এমনকি শূন্য রেখায় (নোম্যানস ল্যান্ড) কিংবা অপরের সীমান্তে প্রবেশ করলেও সরাসরি গুলির বিধান নেই। হাসিনা আমলে প্রতি বছর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন হয়েছে। বিজিবি ও বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে নন লিথাল উইপেন (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে হাসিনা-মোদির যৌথ বিবৃতিতেও এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। ২০২৪ সালের ৯ মার্চ বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলন হয়। বিএসএফের তৎকালীন মহাপরিচালক নিতীন আগারওয়াল তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করে এবং সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার কথার প্রতিফলন দেখা যায় না। সীমান্ত হত্যা চলতেই থাকে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ লোকালয়। সীমান্তঘেঁষা এলাকার এসব দরিদ্র শ্রেণির লোক থাকেন সবসময় বিএসএফের আতঙ্কে। তারা নিরাপদে নিয়মিত চাষাবাদ কিংবা গরু-ছাগল চড়াতে পারেন না। কোনো কারণ ছাড়াই বাংলাদেশী রাখালরা বিএসএফ কর্তৃক ধৃত হন। এই শঙ্কা নিয়েই তাদের প্রতিনিয়ত জীবন কাটে। ধৃত হলে যন্ত্রণাদায়ক নির্যাতন ভোগের পর বিএসএফের অনুকম্পায় কখনো তাদের মুক্তি মেলে। ২০১৯ সালের ১০ মে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্তের কাছে কবিরুল ইসলাম নামের ধৃত ব্যক্তিকে পায়ুপথ ও মুখে পেট্রোল ঢেলে হত্যা করা হয়। সে খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে প্রবেশ করলে কিংবা করার চেষ্টা করলে গুলি চালায় বিএসএফ। নিহতের লাশ পড়ে থাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। অনেক ক্ষেত্রে লাশ নিয়ে যায় বিএসএফ এবং ইচ্ছামাফিক ফেরত দেয়। গুলিতে আহতদের লাশও নিয়ে যায় বিএসএফ। আহতদের অনেকে ভারতেই মারা যান, আর কেউ ভাগ্যের জোরে ফিরতে পারেন বাংলাদেশে।
সীমান্তে নিহত বাংলাদেশীদের বিএসএফের পক্ষ থেকে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত অপরাধী হিসেবে প্রচার করা হয়। ২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফের তৎকালীন মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং সীমান্ত হত্যাকে ন্যায্যতা দিতে নিহত সকল বাংলাদেশীকে ক্রিমিনাল বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুন, ১৩ বছরের কিশোরী স্বর্ণা দাস, ১৫ বছর বয়সী জয়ন্ত কুমার তারা আদৌ সন্ত্রাসী কিংবা অপরাধী ছিলেন না। বরং ভারত সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে দেশে বাংলাদেশের অনেক বড় প্রকৃত অপরাধী ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা আস্তানা গেড়ে বসে আছে। এটি সত্য যে, পৃথিবীর বহু দেশের সীমান্তের মতো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তেও চোরাচালন সংঘটিত হয়। চোরাচালান একটি যৌথ কর্ম। উভয় দেশের অসাধুদের যোগসাজশে এ অপকর্ম চলে। ভারতের বিজেপি সরকার ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তারপরও ভারতীয়দের সহায়তায় এদেশে গরু পাচারের ঘটনা ঘটে। শুধু বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলো থেকেই গরু আসে না, দুই-আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরের রাজ্য হরিয়ানা-পাঞ্জাব থেকেও বিভিন্ন যানবাহনে বিপুলসংখ্যক গরু এনে সীমান্তে জড়ো করা হয়। এ দীর্ঘ পথে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিশ্চয়ই ঘুমিয়ে থাকে না। ২০২০ সালের নভেম্বরে বিএসএফের একজন ব্যাটালিয়ান কমান্ডার ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে গরু পাচার থেকে লব্ধ বিপুল অঙ্কের অর্থসহ ধরা পড়েছিলেন। ইতোপূর্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এমন আরও একটি গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছিল। বস্তুত সীমান্তে যখন ভাগবাটোয়ারার দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তখনই বিএসএফ গুলি করে কতক ব্যক্তিকে হত্যা করে। এর মাধ্যমে বিএসএফ তাদের অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব ও দরকষাকষির অবস্থানকে সমুন্নত রাখে।
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় আগ্রাসনের বহির্প্রকাশ। বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই বিএসএফ সীমান্তে হরহামেশা হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নিরীহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের বন্য পশুর মতো শিকার করে বিএসএফ ওয়ার ট্রফি জয়ের যে হান্টিং গেম খেলে তা মূলত ভারতীয় প্রভাব ও শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের প্রচেষ্টা। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানী খাতুনকে বিএসএফ বাহিনী গুলি ছুড়ে হত্যা করে তার রক্তাক্ত নিথর দেহ দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ঝুলিয়ে রাখার কারণ হতে পারে অন্যদের ভয় দেখানো। এসব হত্যাকাণ্ড সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশী জনগণের ওপর পরিচালিত এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার বা মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ। যা মূলত নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে অন্যদের অধীনস্থ করার কৌশল। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ছাড়া কেবল ইসরাইলি সৈন্যরাই ফিলিস্তিনিদের ওপর এমন বর্বর কৌশল প্রয়োগ করে থাকে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কোনো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে না। সেখানে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির দ্বারাও কোনো ভারতীয় নাগরিক নিহত হয় না। কিন্তু তারপরও বিএসএফের হাতে নিরীহ বেসামরিক বাংলাদেশীরা প্রতিনিয়ত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। অথচ চীন-ভারত কিংবা পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে যথেষ্ট উত্তেজনাকর যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও সেখানে বিএসএফের গুলিতে কোনো চীনা কিংবা পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে না।
২০১৭ সালের মার্চে ভারত-নেপাল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ‘সশস্ত্র সীমা বল’ বা এসএসবির গুলিতে গোবিন্দ গৌতম নামক একজন নেপালি নাগরিক নিহত হন। এতে নেপালি জনগণ ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠেন। অতঃপর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে নেপালি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং নিহত গৌতমের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী বিমলেন্দ্র নিধির সঙ্গে কথা বলেন। জনগণকে শান্ত করতে নেপাল সরকার নিহত গৌতমকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করে এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। গৌতমের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এবং তার সন্তানদের শিক্ষার দায়িত্ব নেয় রাষ্ট্র।
শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন রাখি বন্ধনের সম্পর্ক। কিন্তু তারপরও বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী নিহত হওয়ার কোনো ঘটনায় দুই দেশের কেউই দুঃখ প্রকাশ করেনি। হাসিনার আমলে সংঘটিত সীমান্ত হত্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রমুখ কোনো জোরালো বক্তব্য রাখেননি। বরং সরকারের মন্ত্রীবর্গ সীমান্ত হত্যার পক্ষে পরোক্ষ সাফাই গেয়েছিলেন। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নওগাঁর পোরশা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে তিনজন বাংলাদেশী নিহত হলে ওই এলাকার নিশি ভোটের সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধ করতে হলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, এক্ষেত্রে বাংলাদেশী নাগরিকদেরই সতর্ক হতে হবে। সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, সীমান্ত হত্যা বাড়ার কারণ সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু লোকের বেপরোয়া আচরণ। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বলেছিলেন, সীমান্তে যে হত্যাকাণ্ড ঘটছে তা অনিয়মিত, সীমান্ত হত্যার কারণে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ জন নাগরিক বিএসএফের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে গত ৫ সেপ্টেম্বর ও ৯ অক্টোবর প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে। প্রতিবাদপত্রে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়। সেইসঙ্গে সবকটি সীমান্ত হত্যার ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিজিবি ট্রেনিং সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, ভারতীয় সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যাতে কোনো অবস্থাতেই পিঠ নয় বুক দেখায় সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে তিনি ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভবিষ্যতে যেন সীমান্ত হত্যার ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে। ওই একই দিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের স্বার্থেই সীমান্ত হত্যা থেকে ভারতের বেরিয়ে আসা উচিত। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) ভালো সম্পর্কের পথে অন্তরায়।
হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে এ বছরের ৭ জানুয়ারি ফেলানী হত্যাকাণ্ড দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছিল হাজারো প্রতিবাদী মানুষ। সীমান্তের সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ১৬ জানুয়ারি কুড়িগ্রামে পালিত হয় ‘মার্চ ফর ফেলানী’ পদযাত্রা। ইতোপূর্বে গত ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাস নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে ভারতবিরোধী বড় বড় প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল। গত ১৬ বছর দেশের জনগণের মুখ চেপে রাখা হলেও এখন তারা সীমান্ত হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন।
কুলাউড়া সীমান্তে নিহত কিশোরী স্বর্ণা দাসের শরীরে বিএসএফের গুলি পিঠ দিয়ে ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়। মা সঞ্জিতা রানী দাস বিএসএফের হিংস্র থাবা থেকে বাঁচার জন্য মেয়েকে কাঁটাতারের বেড়ার পাশের জলাশয়ে ফেলে রেখেই চলে আসতে বাধ্য হন। স্বর্ণা দাস তখনো বেঁচে ছিল।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীদের নির্বিচারে হত্যার ঘটনা নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর Trigger Happy: Excessive Use of Force by Indian Troops at the Bangladesh Border (ট্রিগার হ্যাপি: এক্সেসিভ ইউজ অব ফোর্স বাই ইন্ডিয়ান ট্রুপস অ্যাট দ্য বাংলাদেশ বর্ডার) শিরোনামে ৮১ পৃষ্ঠার এক দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, গ্রেপ্তারের চেষ্টা কিংবা সতর্ক না করেই বিএসএফ গুলি করে। অনেক ক্ষেত্রে পেছন থেকে গুলি করা হয়। এতে প্রমাণ হয় ভুক্তভোগী ব্যক্তিটি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। অনেককেই খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়। যা আটক অবস্থায় গুলি করার প্রমাণ বহন করে। অনেককে নির্যাতনের পরেও গুলি করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওই প্রতিবেদনে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী নাগরিকদের নির্যাতিত হওয়ার আরও নানা রোমহর্ষক কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]